Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগরপুরে নোয়াই নদীতে সেতু আছে রাস্তা নেই

ছয় গ্রামবাসীর ভোগান্তি চরমে

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৯, ৫:০৩ পিএম

আছে সেতু, নেই সড়ক। সড়ক হবে কিনা তাও জানেন না এলাকাবাসী। সেতুর দু’পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় পায়ে হেটে চলাচল করাও কষ্টসাধ্য। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এলজিইডি কর্তৃক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু জনগণের কোন কাজেই লাগছে না। টাঙ্গাইলের নাগরপুরে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ হলেও দুই বছরে নির্মাণ হয়নি অ্যাপ্রোচ সড়ক। এতে জনমনে ভোগান্তির পাশাপাশি বেড়েছে ক্ষোভ। ফলে এ সেতুর সড়ক না থাকায় উপজেলা শহরে যেতে শিক্ষার্থী ও ছয় গ্রামের যাতায়াতকারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, মামলা জটিলতার কারণে সেতুর মূল অংশ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও দু’পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হয়নি। আগামীতে বাকি কাজটুকু শেষ করা হবে। সেই সাথে সেতুর দুপাশে সড়ক তৈরির জন্য হেড অফিসে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের নাগরপুর ইউনিয়ন পরিষদ হতে আলোকদিয়া সড়কের নোয়াই নদীর উপর নির্মাণ করা হয় সেতুটি। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ১৬ হাজার ৭৪৩ টাকা ব্যয়ে ৭২.৬ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর নির্মান কাজ শুরু হয়। সেই সাথে ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় নির্ধারন করা থাকলেও সেতুর মূল অংশের কাজ হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর দু’পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক করতে পারেনি মের্সাস দাস ট্রের্ডাস নামক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে বাইরে গিয়ে সেতু নির্মাণ এবং সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহন ছাড়াই এলাকাবাসীর জমির উপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে মামলায় জড়িয়ে পড়ে মের্সাস দাস ট্রের্ডাস নামক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং নির্ধারিত সময় পার হয়ে যায়। এরপর থেকে এভাবেই পড়ে রয়েছে সেতুটি।

অপরদিকে এই সেতুর অভাবে নোয়াই নদীর আশপাশের ছয়টি গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, উপজেলা শহরে যাতায়াতকারী ও বিভিন্ন এলাকার মানুষদের চলাচলে ব্যাপক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তো ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। এখন পায়ে হাটার জন্য যে সড়ক আছে তখন তাও থাকে না। নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়। আর বৃষ্টি থাকলে তো কোন কথাই নেই। এই সড়কে তো চলাচল করাই যায় না। এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত সেতুটির বাকি কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

এলাকাবাসী বলেন, সেতু আছে কিন্তু সড়ক নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই অবস্থার মধ্যে আছি। আমাদের চলাচলে অনেক অসুবিধা। এই সেতুর অভাবে উপজেলা শহর থেকে অনেক মালামাল আনতে পারি না। কোন গাড়ি চলাচল করতে পারে না। আমাদের পায়ে হেটে চলাচল করতে হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না।

এ সড়কে যাতায়াতকারী আলমাস সিকদার, আব্দুর রহিম, চন্দ্রনা, রাজিব সাজা, আবুল, কাদের বলেন, ভাই আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই সড়ক দিয়ে চলাচল করি। আমাদের এলাকায় কোন সেতু ছিলো না। সরকার আমাদের চলাচলের সুবিধার জন্য নোয়াই নদীর উপর একটি সেতু নির্মান করে দেন। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেতুর কাজ শুরু করলেও আজ পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। এ নিয়ে আমরা বার বার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্ঠা করেছি কিন্তু তার আমাদের বিভিন্ন কথা বলে বুঝিয়েছে। আজ পর্যন্ত এই সেতুর কাজ হয়নি। আমাদের চলাচলে অনেক অসুবিধা। বর্তমানে যে সড়ক আছে তা শুধু পায়ে হাটার জন্য। যখন সেতুর কাজ শুরু করলো তার আগে কর্মকর্তারা সড়কের মাপ যোগ করে নিয়ে গেছে। আমাদের আশা দিয়েছে এখানে সেতুর সাথে উচু করে সড়ক নির্মান করবে। বর্ষা মৌসুমে ছয় গ্রাবাসীর চলাচলের অনেক সুবিধা হবে। কিন্তু এখন এই সেতুর অভাবে আরো ভোগান্তি বেড়ে গেছে। আমাদের ছেলে মেয়েরা সময় মত স্কুলে যেতে পারে না। উপজেলা শহর কাছে হওয়ায় বানিজ্যিক কাজসহ বিভিন্ন কাজের জন্য যেতে হয়। শহর থেকে কোন গাড়ি আমাদের এলাকায় আসতে চায় না। কোন মালামাল আনা নেওয়া করা যায় না। বর্তমানে সেতু আছে কিন্তু কোন সড়ক নেই। এভাবে আর কতো দিন আমাদের ভোগান্তির মধ্যে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি সেতুটির কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী একটি সড়ক নির্মাণ করে দিবেন।

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহিনুর আলম বলেন, মামলা জটিলতার কারনে নির্ধারিত সময়ে মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি। তবে সেতুর মূল অংশের কাজ শেষ হয়েছে। সড়কের জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি। আর সেতুর দু’পাশে অ্যাপ্রোচ এর কাজ করার জন্য পুনরায় ট্রেন্ডারের মাধ্যমে অন্য ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানো হবে। আশা করছি আগামী অর্থ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ