বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত আলোচনায় আমরা জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা শুরু করেছিলাম। সেই আলোচনায় জাহান্নামের ভয়াবহতা ও কঠিনতর শাস্তির কথা বলা হচ্ছিল। জাহান্নাম সম্পর্কে আজ আরো কিছু কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করা হলো। সূরা মুহাম্মদে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদেরকে পান করার জন্য সরবরাহ করা হবে ফুটন্ত পানি। সুতরাং তা টুকরো টুকরো করে দেবে তাদের আঁতসমূহকে।’ (সূরা মুহাম্মদ: আয়াত ১৫)।
যারা আল্লাহর কিতাবসমূহকে অস্বীকার করে এবং তার বিধানসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তাদের সম্পর্কে সূরা মু’মিনে বলা হয়েছে, ‘যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার কিতাবকে এবং আমার সেসব বিধিবিধানকে, যেগুলোর সাথে আমি আমার রাসূলদের পাঠিয়েছি, শীঘ্রই তারা (এর পরিণতি) জানতে পারবে, যখন গলবেড়ি থাকবে তাদের গলায় এবং শেকল (থাকবে সেসব গলবেড়ির সাথে জড়ানো)।
তাদেরকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে এবং অতঃপর তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’ (সূরা মু’মিন: আয়াত ৭০-৭২)। তেমনিভাবে সূরা হজ্জে ইরশাদ হচ্ছে, ‘সুতরাং যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য আগুনের কাপড় কাটা হবে (অর্থাৎ, আগুনের পোশাক তৈরি করা হবে) এবং তাদের মাথার ওপর থেকে অতি উত্তপ্ত পানি ছাড়া হবে। তাতে তাদের চামড়াগুলো এবং পেট ও পেটের অভ্যন্তরের (নাড়িভুঁড়িসহ) সব কিছু গলে যাবে। এবং তাদেরকে মারধর করার জন্য লোহার গদা থাকবে। সেখানকার কষ্ট ও কঠোরতার দরুন যখন তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছা করবে, তখন আবারো তাতেই উৎক্ষেপণ করা হবে। বলা হবে, এখানেই দহনের শাস্তি ভোগ করতে থাকো।’ (সূরা হজ্জ: আয়াত ১৯-২২)।
সূরা দোখানে ‘যাককুম’কে দোজখের খাবার বলে অভিহিত করতে গিয়ে এর রূপ ও অবস্থা এভাবে বিবৃত করা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে যাককুম হবে বড় পাপীদের (কাফের-মুশরিকদের) খাবার, যা তার বীভৎসতা ও বিষাদে তেলের তলানির মতো হবে। (আর) তা পেটে ঢুকে এমনভাবে ফুটবে, যেমন অতি গরম পানি ফুটতে থাকে। (ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে,) একে ধরো এবং টেনেহিঁচড়ে দোজখের মাঝ পর্যন্ত নিয়ে যাও। তারপর তার মাথায় অত্যন্ত কষ্টদায়ক জ্বলন্ত পানি ঢেলে দাও।’ (সূরা দোখান: আয়াত ৪৩-৪৮)।
সূরা ইবরাহীমে উদ্ধৃত অপরাধী দোজখবাসীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘পান করার জন্য এমন পানি দেয়া হবে যা আসলে হবে (জাহান্নামীদের) রক্ত-পুঁজ, যা তারা ঢোক ঢোক করে পান করবে অথচ গলার ভেতর দিয়ে সেগুলোকে সহজে নামাতে পারবে না। সব দিক থেকে তার ওপর মৃত্যু ধেয়ে আসবে অথচ সে হতভাগ্য মরতেও পারবে না; বরং (জীবিত অবস্থায়ই) তাকে আরো (চিরস্থায়ী ও) কঠোরতর আজাবের সম্মুখীন হতে হবে। (সূরা ইবরাহীম: আয়াত ১৬-১৭)।
সূরা ফাতিরে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আর যেসব লোক কুফরির পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য রয়েছে দোজখের আগুন। না তাদের জীবনাবসান হবে যে, তারা মরতে পারবে, নাই বা দোজখের আজাব তাদের জন্য লঘু করা হবে। আমি প্রত্যেক কাফেরকে এমনি শাস্তি দিয়ে থাকি। তারা তাতে পড়ে চিৎকার করতে থাকবে, হে আমাদের পরওয়ারদেগার, আমাদের এ (দোজখ) থেকে অব্যাহতি দান করো, আমরা সৎকর্ম সম্পাদন করব তার বদলে, যা (নিজেদের কপাল দোষে) পূর্বে করেছিলাম। (তাদের এহেন আর্তচিৎকারের উত্তরে বলা হবে) আমি কি তোমাদের এতটুকু বয়স বা আয়ু দান করিনি, যাতে করে যাদের উপলব্ধি করার তারা উপলব্ধি করতে পারতে? তদুপরি তোমাদের কাছে ভীতিপ্রদর্শনকারীও পৌঁছেছিল। সুতরাং এখন মজা ভোগ করো। এমন জালেমদের কোনো সহায় নেই।’ (সূরা ফাতির: আয়াত ৩৬-৩৭)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।