Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমানের পেটে ১৫শ’ বিঘা জমি

মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁও | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সোনারগাঁও উপজেলার হাড়িয়া চক্রবর্তীপাড়া, হাড়িয়া গোবিন্দী ও সোনাময়ী, বড় তীলক এবং ছোট দেওভোগ এলাকায় মেঘনা নদী অবৈধভাবে দখল করে ভরাট, সরকারী হালট ও সরকারি খাল এবং কৃষকের কৃষি জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে আমান গ্রুপের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মেঘনা নদীর শাখা ঐতিহাসিক সরকারী রান্দীর খালের দক্ষিণ দিকের প্রায় ২ কিলোমিটার বালু দিয়ে ভরাট করে দখল করেছে আমান গ্রুপ। উপজেলার সোনাময়ী এলাকায় আমান গ্রুপের বিশাল সিমেন্ট কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে মেঘনার তীর ঘেঁষে। অনেক দূর থেকেই তাদের নদী দখলের বিষয়টি চোখে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার হাড়িয়া, বড় তিলক, সোনাময়ী ও ছোট দেওভোগ মৌজার মেঘনা নদী, নদীর তীরবর্তী খাস ভূমি, সরকারি রান্দির খাল এবং ফোরশোর ল্যান্ডভূক্ত ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা ও জেডি নির্মাণ করে দখল করেছে আমান গ্রুপ। এমনকি, নদীর প্রায় সাত শত ফুট ভিতরে বাশের বেড়া দিয়ে বালু ভরাট করেছে। বর্তমানে সিটি পাইলিং করে স্থায়ী ভাবে নদী দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। মেঘনা নদীর শাখা ঐতিহাসিক সরকারী রান্দীর খালের দক্ষিন দিকের প্রায় ২ কিলোমিটার বালু দিয়ে ভরাট করে দখল করেছে আমান গ্রুপ। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চরম পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী পানিবদ্ধতায় চরম দূর্ভোগে আছেন। স্থানীয়রা জানান, সবার চোখের সামনে নদীর প্রায় ১ হাজার ৫ শত বিঘা নদী ভরাট করে চারদিকে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হলেও কেউ একটু প্রতিবাদ করেনি।
জানা গেছে, আমান গ্রুপ প্রথমদিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি কিনে সেখানে সাইনবোর্ড লাগায়। এরপর নির্বিচারে নদীর জমি দখল করে সেখানে বালু ফেলে। একই সঙ্গে অনেকের ধানিজমি দখল করে নেয় তারা। ভুক্তভোগীরা প্রশাসন ও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে ঘুরেও কোন প্রতিকার পায়নি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি জমি রক্ষা, সরকারী হালট ও সরকারি রান্দির খাল উদ্ধার, জমি দখল, নদী দখল মুক্ত করাসহ রাস্তার উন্নত সংস্কারসহ ৭ দফা দাবিতে স্থানীয় হাড়িয়া গোবিন্দী, হাড়িয়া বৈদ্যেপাড়া, হাড়িয়া চৌধুরী পাড়া, সোনাময়ি, রামগঞ্জ, হামছাদী, উলুকান্দি, নগরজোয়ার এবং মোবারকপুরসহ প্রায় ২৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চৌরাস্তা-বারদী সড়কের বৈদ্যেরবাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা এক পর্যায়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তাতে কোনো কাজই হয়নি। বরং সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকাও যথেষ্ঠ রহস্যজনক, এমনকি দখলদারদের কোনো তালিকা ও তথ্য নেই সোনারগাঁও এসি ল্যান্ড অফিসে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার সোনাময়ী ও হাড়িয়া চক্রবর্তীপাড়া এবং সাতভাইয়াপাড়া এলাকায় আমান সিমেন্ট নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ওই এলাকার মেঘনা নদী ও সরকারি খালসহ সাধারণ কৃষকের কৃষি জমি অবৈধভাবে দখল করে বালু ভরাট করে ফেলে। কৃষকের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে নেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ তিন বছরে প্রায় শতাধিক কৃষকের জমি ক্রয় করে নিচ্ছে না। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে তালবাহানা করে যাচ্ছে। এছাড়াও মেঘনা নদীর শাখা ঐতিহাসিক সরকারী রান্দীর খালের দক্ষিণ দিকের প্রায় ২ কিলোমিটার বালু দিয়ে ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক পানিবদ্ধতার। এ কারনে এলাকার মানুষ চরম দূর্ভোগে আছেন। প্রশাসনের কাছে বার বার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি তারা।
এ বিষয়ে আমান সিমেন্ট কোম্পানির ডিজিএম(প্রশাসন) রবিউল ইসলাম এর সাতে কথা বলার জন্য তার মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সোনারগাঁও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বি এম রুহুল আমিন রিমন জানান, আমান গ্রæপের বিরুদ্ধে নদী দখলের খবর পেয়েছি। তাদেরকে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে উচ্ছেদ অভিযানে যাবো।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, আমি এখনই লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছি। কাউকে নদী দখল করতে দেওয়া হবে না। দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিবো।



 

Show all comments
  • Md. Al Amin Chowdhuri ২ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    ঠিক বলেছেন ভাই
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sujon ২ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
    সোনারগাঁয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। কেনো জানেন আমরা যে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।আপনারা লিখবেন আর আমরা পড়ে একটু সমাআলোচনা করবো এই আর কি। কেউ কয়দিন পরপর চুলকাবে আর ওনারা একটু মলম লাগিয়ে দিবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ramesh Kumar Partho ২ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
    দেশের প্রায় সর্বত্র প্রশাসনিক বাটপারি চলছে। চিকন লোক এসে মোটা ভুঁড়ি বানিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিষয়টি সবাই জানে। কেউ ঘণ্টা বাধতে চায় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mofazzal Hosen ২ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    সাহসী নিউজের জন্য ধন্যবাদ।আমি তো অনেক এলাকায় যাই।কিন্তুু ঢাকার পাশে থেকেও আমাদের উন্নতি নাই।সবই দুনীতির ফল।আর ভোটারবিহীন প্রতিনিধি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shamim Mia ২ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    সাহসী নিউজ ভাই ধন্যবাদ তবে আপনার পাশাপাশি সব সাংবাদিকরা এগিয়ে আসলে এর প্রতিকার পাওয়া সম্ভব
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজীব ২ মার্চ, ২০১৯, ১:৪৯ এএম says : 0
    আমান গ্রুপের বিরুদ্ধে আমাদের এলাকাবাসীর এখনই দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • mokarroum mamun ৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:৩২ পিএম says : 0
    এসিল্যান্ড সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাতো তাদের মুখস্ত বুলি। যে কোন প্রতিবেদক কোন বিষয় নিয়ে গেলে এই একই কথা বলে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। আর নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও মোটামুটি একই কথা বলব। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন - প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যখন এসকল কর্মযজ্ঞ হয়, সংশ্লিষ্ট তহসিল অফিসে যখন নামজারি করাতে যান এবং স্থানীয়রা বিভিন্ন প্রতিবাদ করেন, তখন তারা কি চোখে লোহার চশমা পড়েন। না-কি টাকার বস্তার দিকে তাকালে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে যে কিছু বলার বা করার শক্তি থাকেনা বা চাইলেও পারেন না। তাদের মতো দেশের অনেক সরকারী কর্ম কর্তপ্রা-কর্মজাচারীরাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে জনগণের টাকায় বেতন-ভাতা নিয়ে আর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিলাশবহুল জীবন যাপনের জন্রায জনীতিবিদ ও প্রবাবশালীদের গোপন শেল্টার দিয়ে ২/১ বছরের জন্য নতুন নতুন এলাকায় গিয়ে জনগণের রক্ত চুষে খাওয়াই তাদের কাজ হয়ে দাড়িয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ