Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনমনে অনেক প্রশ্ন

বিমান ছিনতাই চেষ্টা : অজানা তথ্য প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ১২:১০ এএম

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টার অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মশিউর রহমান একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা পোস্ট করেছেন তার ফেসবুক পেজে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে সেই বিমানের একজন যাত্রী ছিলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বর্ণনা ভাইরাল হওয়ার পর মানুষের মনে নতুন করে নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। বিমানবন্দরে স্ক্যানিংসহ নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সে কিভাবে বিমানে উঠল? এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোন ব্যখ্যা দিতে পারেননি বিমানের নিরাপত্তার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা পেরিয়ে কিভাবে অস্ত্র নিয়ে সাধারণ একজন যাত্রী বিমানে উঠতে পেরেছে তার উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দর ও বিমানের নিরাপত্তায় যে ঘাটতি রয়েছে সেটি এতে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সেদিন সে বিমানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী কাজী মশিউর রহমান ফেসবুকে লিখেন, ৫০ মিনিটের জার্নির এই ফ্লাইটের প্রথম ১৫/২০ মিনিট বা ওই রকম সময় তেমন উল্লেখ করার মতো কিছুই ছিল না। এরপর আকস্মিকভাবে ইকোনমি ক্লাস থেকে একজন তরুণ উঠে এসে বিজনেস ক্লাসে প্রবেশ করলেন। আমার সামনের ফাঁকা আসনে বসে পড়লেন তিনি। তার সঙ্গে ছিল একটি ব্যাকপ্যাক। এতে কেবিন ক্রু অবাক হলেন। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ জানানোর আগেই তিনি তার ব্যাকপ্যাক খুলে ফেললেন। তার ভিতর হাত দিলেন এবং বের করে আনলেন একটি অস্ত্র, একটি লাইটার ও বিস্ফোরকের মতো দেখতে একটি ডিভাইস। তিনি দাঁড়ালেন। বন্ধ ককপিটের খুব কাছে সামনের সারির গ্যালারিতে চলে গেলেন এবং ইংরেজিতে বললেন- এই বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছে! অবিলম্বে ককপিটের দরজা খুলুন। যদি বিমানটি অবতরণ করে তাহলে আমি এটা উড়িয়ে দেবো।
এ শব্দগুলো কেবিনের সামনে সন্ত্রাসের আবহ ছড়িয়ে দিল। তখনও পর্দা নামানো (পরে তা খুলে দেয়া হয়)। ফলে পিছনের দিকে যারা বসা ছিলেন তারা বুঝতে পারেন নি সামনে কি ঘটছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ছিনতাইকারী সশস্ত্র অবস্থায়। তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে সামনের একটি ফাঁকা শৌচাগারের দরজায় একবার তার হ্যান্ডগান দিয়ে গুলি করলেন। বারুদের গন্ধ কেবিনের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল। প্রত্যক্ষদর্শীর এমন বর্ণনার পর এখন সাধারণ মানুষের মনে ছিনতাইকারীর কাছে থাকা অস্ত্র নিয়ে এখন অনেক বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা আইনশৃংখলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারের পর বললো তার কাছে খেলনা পিস্তল ছিল। কমান্ডো অভিযান শেষ করে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হলো ছিনতাইকারীকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। তার কাছে খেলনা পিস্তল ছিল। এর কিছুক্ষণ পর জানানো হয় কমান্ডো অভিযানে ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে। এখন মানুষের মনে প্রশ্ন হলো, যিনি বিমানে ছিলেন তিনি ছিনতাইকারীকে গুলি করতে দেখেছেন এবং বারুদের গন্ধও পেয়েছেন। খেলনা পিস্তল থেকে কি করে গুলি হবে আর বারুদের গন্ধই বা কি করে আসবে। এ ছাড়া যদি তার কাছে খেলনা পিস্তলই থাকবে তাহলে তাকে কেন হত্যা করা হলো?
বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী যুবক গুলি ছুড়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী এক যাত্রী যে বক্তব্য ফেসবুকে দিয়েছেন, তা আসলে পটকার বিস্ফোরণ ছিল বলে দাবি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিমানের নিরাপত্তা তল্লাশিকে ফাঁকি দিয়ে ওই যুবক কীভাবে পটকা নিয়ে বিমানে চড়লেন? তার কাছে পটকা জ্বালানোর জন্য দিয়াশলাই বা লাইটারই বা এলো কী করে? নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য, লাইটার, দিয়াশলাই, ধারালো কিছু-এমনকি সামান্য নেইলকাটার কিংবা কান পরিষ্কার করার ধাতব কাঠি নিয়েও বিমানে ওঠা যায় না। যাত্রীর হাতব্যাগ ও শরীর তল্লাশির সময় এ জাতীয় দ্রব্য ধরা পড়লে সেগুলো জব্দ করা হয়। নাশকতার উদ্দেশ্যে এসব নেয়া হচ্ছে মনে করা হলে ওই যাত্রীকে আটকও করেন সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা। কিন্তু পলাশের কাছে পিস্তল বা খেলনা পিস্তল ছিল বলে প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছেন দায়িত্বশীলরা। সব শেষ গত সোমবার রাতে পতেঙ্গা থানায় বেবিচকের করা মামলায় নতুন করে বিস্ফোরক থাকার বিষয়টি উঠে এলো।
নারায়ণগঞ্জের অতিসাধারণ ঘরের ছেলে পলাশ আহমেদ একা একা খেলনা পিস্তল হাতে কেনইবা বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে গেলেন। বলা হচ্ছে তার পরিবারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হলে বিমান ছিনতাই করতে হবে কেন? সব প্রশ্ন ছাপিয়ে সামনে এসেছে একজন অস্ত্রধারী কিভাবে বিমানবন্দরে প্রবেশ করে বিমানযাত্রী হতে পারলেন। চার স্তরের নিরাপত্তা তল্লাশি সংস্থাগুলোকে ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশে ঘটনাটিকে অনেকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন। ঘটনায় জড়িত পলাশ নিহত হওয়ায় অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্তের পরই এর উত্তর মিলবে।
উল্লেখ্য, যেদিন এই ঘটনাটি ঘটলো, ঠিক তার আগের দিনই ফোনকলে ভারতে বিমান ছিনতাইয়ের হুমকি আসে। এরপর ভারতের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর বিমানবন্দরগুলোকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। এই সতর্কতার পরদিনই ঢাকা থেকে দুবাইগামী বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা। তাহলে ভারতের ওই সতর্কতার সাথে এই ঘটনার কি কোনো যোগসাজশ আছে? র‌্যাব বলছে যে তাদের অপরাধীর তালিকায় নিহত পলাশের নাম রয়েছে। এমন কি হতে পারে যে, এটা একটা বড় ধরনের পরিকল্পনার অংশ যেটি নিহত যুবক ককপিটে যেতে পারলে বাস্তবায়িত হতো? অর্থাৎ এরকমটি অস্বাভাবিক নয় যে, ওই বিমানে হয়তো তার আরও লোকজন ছিল যারা পলাশের ককপিটে ঢোকার অবধি অপেক্ষায় ছিল এবং ঢুকতে পারলে তার সঙ্গীসাথীরা স্বরূপে আবির্ভূত হতো? এর সবই ধারণা এবং ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অংশ। কিন্তু যেহেতু অপরাধী নিহত হয়েছে, ফলে এখন এর রহস্য ভেদ করা প্রায় অসম্ভব। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অভিমত, নিহত ব্যক্তির সাথে নিশ্চয়ই মোবাইল ফোন ছিল। যদি ফোন থেকে থাকে তাহলে তিনি সর্বশেষ কাদের সাথে কথা বলেছেন, ধরা পড়ার আগ মুহূর্তে কাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন তা জানা খুবই সহজ। তার সাথে কি ব্যাগ ছিল? থাকলে সেখানে কী আছে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা গেলে রহস্য ভেদ করা অসম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ