বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহতায়ালার সমস্ত নবী-রাসূল এবং তার অবতীর্ণ সমস্ত গ্রন্থ-পুস্তিকা এ বাস্তবতা সম্পর্কে অতি বিশদ বর্ণনা প্রদান করেছে যে, প্রকৃত জীবন হলো আখেরাতের জীবন। মানুষের স্থায়ী নিবাস হলো জান্নাত অথবা জাহান্নাম।
আর জান্নাত হলো আল্লাহতায়ালার দয়া-করুণা ও দান-অনুকম্পা গুণের পরম প্রকাশস্থল। তার সব মমতা গুণের পরিপূর্ণ বিকাশ সেখানেই হবে। অনুরূপভাবে জাহান্নাম হলো আল্লাহতায়ালার রাগরোষ ও ক্রোধের চরম বহিঃপ্রকাশের ক্ষেত্র এবং এসব পরাক্রমশালী গুণের পরিপূর্ণ স্ফূরণ ঘটবে সেখানেই।
আল্লাহতায়ালার নবী-রাসূল ও কিতাবসমূহ এ ব্যাপারে মানুষকে যা কিছু বলেছে, নিঃসন্দেহে সেগুলো সবই যথাযথ সত্য এবং সেগুলো ঠিক তেমনিভাবে সামনে আসবে যেভাবে তারা বলেছেন। এসব ব্যাপারে এমন ধারণা পোষণ করা যে, অবুঝ শিশুদের তাদের বড়রা যেমন ভয়ভীতি দেখানোর জন্য কিংবা তাদের মাঝে কোনো বিষয়ে আগ্রহ-উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে অনেক অবাস্তব বিষয়েরও অবতারণা করে থাকেন।
তেমনিভাবে আল্লাহতায়ালার নবী-রাসূলগণ এবং তাদের আনীত কিতাবাদিও জান্নাত ও জাহান্নামের সওয়াব ও আজাবের বিবরণ দিয়ে থাকবেন। তাহলে তা হবে তেমনি মূর্খজনোচিত, যেমন কেউ বলে থাকবে, সেসব নবী-রাসূল আল্লাহতায়ালার সত্তা সম্পর্কে কিছু বলেছেন কিংবা কেয়ামত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণনা করেছেন, তাও একান্ত ভীতি প্রদর্শন কিংবা আগ্রহ উৎপাদনের জন্যই করেছেন; আসলে তার কোনো বাস্তবতাই নেই। বস্তুত এ হলো সম্পূর্ণ অলীক, অবাস্তব ও ভ্রান্তিপূর্ণ মন্তব্য।
কোরআন মাজীদ যেহেতু আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ গ্রন্থ, এর পরে মানুষের হেদায়াত বা পথনির্দেশনার ব্যাপারে আর কোনো গ্রন্থ আসার নেই, তাই অন্যান্য বিষয়বস্তুর মতো তাতে জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনাও পুরোপুরি বিস্তারিত ও ব্যাপকভাবে দেয়া হয়েছে, যা মানুষের মধ্যে সৎকর্মের উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং অসৎকর্ম থেকে বেঁচে থাকার চিন্তা-ভাবনা সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট অপেক্ষাও প্রচুর। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, মানুষটির আত্মা ও বিবেক যদি সম্পূর্ণ মরে গিয়ে না থাকে। পাঠকের জন্য আগামী কয়েকটি আলোচনায় আমরা জাহান্নাম ও জান্নাত প্রসঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করব।
জান্নাত ও জাহান্নাম প্রসঙ্গে এখানে কয়েকটি আয়াত পাঠ করা যেতে পারে। প্রথমে জাহান্নাম তথা দোজখ এবং তার আজাবের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে দোজখের সে (ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক) আগুন থেকে বাঁচাও, যার জ্বালানি হলো মানুষ ও পাথর। যার ওপর নিয়োজিত রয়েছেন নিতান্ত কঠোর প্রকৃতির ফেরেশতা। যারা আল্লাহর সামান্যতম নাফরমানিও করেন না; প্রদত্ত হুকুম পুরোপুরি তামিল করেন। (সুতরাং তাদের দ্বারা আল্লাহতায়ালার বিধান পরিপন্থী তার কোনো অপরাধীর সামান্যতম সহানুভূতির আশাও করা যায় না)’। সূরা তাহরীম : আয়াত ৬।
সূরা কাহাফে বলা হয়েছে, ‘আর হে রাসূল, আপনি বলে দিন, তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে এ বিষয়টি সত্য। তারপর এখন যার ইচ্ছা মানবে ও ঈমান আনবে, আর যার ইচ্ছা অমান্য করবে ও কুফরী অবলম্বন করবে। তবে নিশ্চিত থেকো, আমি এ ধরনের জালেমদের জন্য দোজখের আগুন তৈরি করে রেখেছি। এর লেলিহান শিখা তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলবে।
আর যখন তারা তাতে নিক্ষিপ্ত হয়ে তৃষ্ণার্ত হয়ে তৃষ্ণার ফরিয়াদ করবে, তখন তার জবাবে তাদেরকে যে পানি দেয়া হবে (তা দুর্গন্ধ ও বিস্বাদের দিক দিয়ে) তেলের গাদের মতো হবে, আর এমনভাবে সেটি জ্বলন্ত-উত্তপ্ত থাকবে, যা মুখমন্ডলগুলোকে ভেজে ফেলবে। কতই না মন্দ এই পানীয় আর কতই না মন্দ অবস্থান এই দোজখ।’ সূরা কাহফ : আয়াত ২৯।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।