Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৃতপ্রায় বগুড়ার নদ-নদী

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দখলবাজদের কবলে পড়ে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী করতোয়া, বাঙালী, নাগর প্রভৃতি নদ-নদী এখন মৃতপ্রায়। শিগগিরই দখলবাজদের হাত থেকে নদ-নদীকে বাঁচাবার উদ্যোগ না নিলে মুর্মূষু নদীগুলো চিরতরে বিলীন হবে। বগুড়া হয়ে উঠবে নদী শুণ্য। তবে ঐতিহ্যবাহী করতোয়া নদীটিই এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদাসীনতার কারণে বছরের পর বছর ধরে দখলদাররা নদীর বুকে গড়ে তুলেছে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরণের স্থাপনা।
হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার আলোকে বগুড়ার জেলা প্রশাসন ৩১জন দখলদারের একটি তালিকা করলেও কাউকেই উচ্ছেদের কোন কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বগুড়া জেলা প্রশাসনের জরিপ অনুযায়ী বগুড়া সদরেই করতোয়া নদীর দখল হয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ প্রায় সোয়া পাঁচ একর। যার আনুমানিক বাজার মূল্য হতে পারে একশ কোটি টাকারও বেশি।
অনুসন্ধান কালে জানা যায়, শহরের কেন্দ্রস্থলে বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) এর বিশাল ভবন গড়ে তোলা হয়ছে করতোয়া দখল করে। এসপি ব্রীজ এলাকায় নদীর মধ্যে সীমানা প্রাচীর দিয়ে জায়গা দখল করেছেন একজন চিকিৎসক। সেখানে ঘর বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মালতনিগর চানমারী ঘাট এলাকায় নদী দখল করে রেখেছে মাটি ও বালু ব্যবসায়ীরা। ফতেহ আলী সেতু এলাকায় নদী দখল করে এক মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছে বিশাল গুদাম, বাড়ী, ময়দার মিল ও কারখানা। বগুড়া শহররে দত্তবাড়ি চেলোপাড়া সেতু সংলগ্ন কাজিখানা মসজিদরে পাশে নদীর ওপর বহুতল ভবন বানিয়েছেন মোফাজ্জল হোসনে ও এ কে এম জিল্লুর রহমান নামের দু’ব্যক্তি।
বগুড়া জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, করতোয়া দখলের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সর্বশষে ৩১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকায় শীর্ষে আছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএস। তারা প্রায় পাঁচ একর জমি দখল করে রেখেছে। সূত্রাপুর এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ প্রায় দেড় শতক জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর দিয়েছেন। ফুলবাড়ীর খয়রুজ্জমান ৯৬ বর্গফুট, রাজাবাজাররে আবদুস সোবাহান ৫৪৬ বর্গফুট, মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী শংকর বাবু ও কানাই লাল মিলে ৭১ বর্গফুট জায়গা দখল করে চালাঘর ও পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন। একই ভাবে ফতেহ আলী আল আরাবিয়াতুন সালাফিয় ওয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও মসজিদে মোবারক নামে ২০৯ বর্গফুট, নবাববাড়ি সড়কের এ কে এম ফজলুর রহমান ৮০ বর্গফুট, মোক্তার হোসনে ২৪ বর্গফুট, জোবাইদুল ইসলাম ৫০০ বর্গফুট, মতিয়ার রহমান ৯০০ বর্গফুট, মাজেদ হোসেন ১৮০ বর্গফুট, ডায়াবেটিক হাসপাতাল তিন হাজার ৫০০ বর্গফুট, গোপীনাথ মন্দিরেরে সভাপতি আনন্দ কুমার ৪০৯ বর্গফুট, টিএমএসএস নবাববাড়ি পয়ন্টে ৩৭৮ বর্গফুট, সঞ্জীব কুমার বিহানী ২৪০ বর্গফুট, প্রদীপ কুমার রায় ৫৪৪ বর্গফুট এবং আবদুল জলিল ১৫০ বর্গফুট জায়গা অবৈধভাবে দখল করেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বগুড়া বিভাগীয় পরিচালক এ প্রসঙ্গে বলেন ,করতোয়া নদী দখলের ব্যাপারে একাধিকবার বাধা দেওয়া হলেও কেউ বাধা মানেনি। এরপর দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের ।
একটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে পাউবো ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে অন্ধকারে রেখে করতোয়া নদীতে সীমানা নির্ধারণ খুঁটি স্থাপন করে জেলা প্রশাসন। ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০-এর ৩৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নদীর তলদেশে জমির মালিকের কোনো অধিকার নেই। ৩৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নদীর দুধারে যে অংশে শুকনো মৌসুমে চর পড়ে কিন্তু র্বষা মৌসুমে ডুবে যায় তা ফোরশোর হিসেবে বিবেচিত হবে। এ প্রসঙ্গে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আলিমুন রাজিব বলেন, উচ্ছেদ অভিযানকালে নদী সংরক্ষণ আইন মেনেই কাজ করা হবে।
এদিকে করতোয়াসহ বগুড়ার নদ-নদী গুলোকে দখলবাজদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বগুড়ায় সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বগুড়ায় ইতোমধ্যেই সেমিনার, অবস্থান কর্মসূচিসহ সপ্তাহব্যাপী নদী মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়ার সামাজিক সংগঠন গুলোর পক্ষ থেকে করতোয়াকে দখলমুক্ত করতে বগুড়া জেলা প্রশাসককে এবং বগুড়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপিও দেওয়া হয়েছে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ