Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিমানে ‘পটকার বিস্ফোরণ’ ঘটান পলাশ

ময়ূরপঙ্খী জব্দ : মামলা তদন্তে কাউন্টার টেরোরিজম

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশ বিমানের ময়ুরপঙ্খী উড়োজাহাজে ‘বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু’ নিয়ে উঠেছিলেন ছিনতাইকারী পলাশ আহমদ। উড্ডয়নরত বিমানে দু’টি ‘পটকা জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ’ ঘটান ওই যুবক। পতেঙ্গা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে এমন তথ্য দেয়া হয়। শুরুতে তার কাছে একটি পিস্তল এবং পরে খেলনা পিস্তল পাওয়ার কথা বলা হলেও মামলার এজাহারের সাথে আলামত হিসেবে এমন কিছু জমা দেয়া হয়নি।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে। দায়িত্ব পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছিনতাইকারী আক্রান্ত উড়োজাহাজ ময়ুরপঙ্খী জব্দ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে প্রথমে লাশ নেবে না বলে জানিয়ে দিলেও পুত্রের লাশ গ্রহণ করেছেন পলাশের পিতা পিয়ার জাহান। গতকাল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পলাশের দাফন সম্পন্ন হয়। রোববার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের (বোয়িং-৭৩৭) একটি ফ্লাইটের (বিজি-১৪৭) অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পলাশ আহমদ বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি ক্রুদের জিম্মি করেন। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেনা কমান্ডো অভিযানের মধ্যদিয়ে বিমান জিম্মি ঘটনার সমাপ্তি হয়। অভিযানে গুলিবিদ্ধ পলাশ আহমদ পরে মারা যান।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে শাহ আমানত বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদি হয়ে নগরীর পতেঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৫। বাদী আক্রান্ত বিমান ক্রু সাগরের বরাত দিয়ে এজাহারে বলেন, বিমানটি উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ মিনিট পর একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী বিমানের মাঝখান থেকে দৌঁড় দিয়ে সামনে ককপিটে ঢুকতে চেষ্টা করেন। তার কাছে বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু দেখা যায়। দুষ্কৃতিকারী তার কিছু দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে বলতে থাকেন। অন্যথায় বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন বলে বিমানের কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের হুমকি দেন। এতে বিমানে থাকা পাইলট, কেবিন ক্রু এবং যাত্রীদের মধ্যে মৃত্যু আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এজাহারে আরও বলা হয়, দুষ্কৃতিকারী এসময় দু’টি পটকা জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটান। এই পরিস্থিতিতে বিমানটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এতে বলা হয়, ঢাকা থেকে ৫টা ১৩ মিনিটে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ মিনিট পরে দুষ্কৃতিকারী বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ অবস্থায় বিমানের পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কথোপকথন ইসিআরে স্থাপিত রিসিভারে মনিটরিং করা হয়। ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ওয়াকিটকির মাধ্যমে অবহিত করা হয়। তখন বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সিভিল এভিয়েশন বিভাগের নিরাপত্তাকর্মী, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন ও আনসার সদস্যদের বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং অ্যাপ্রোনে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
বিকেল ৫টা ৪১ মিনিটে আক্রান্ত বিমানটি শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই জরুরি বহির্গমন পথ দিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুরা দ্রুত বের হয়ে বিমানের পাখার ওপর অবস্থান করেন। তখন দ্রুত বিমানে সিঁড়ি লাগিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়। এরই মধ্যে বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের নেতৃত্বে বিমান বাহিনীর সদস্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম, র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
এরপর সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম আক্রান্ত বিমানের অভ্যন্তরে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞাতনামা একজন দুষ্কৃতিকারীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিমানের বাইরে অ্যাপ্রোনে নামিয়ে আনে। পরবর্তী সময়ে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানা যায়। মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় নিহত যুবকের নাম পলাশ আহমদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০১২-এর ৬ ধারা এবং বিমান নিরাপত্তা বিরোধী অপরাধ দমন আইন, ১৯৯৭-এর ১১ (২) ও ১৩ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের হয়েছে। পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়–য়া জানান, মামলাটি তদন্ত ভার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে দেয়ার সাথে সাথে যাবতীয় নথিপত্র তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিমান ছিনতাই প্রচেষ্টাকারী পলাশের কাছ থেকে যেসব আলামত পাওয়া গেছে তা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেয়া হবে বলে মামলার বাদী জানিয়েছেন।
জব্দ ময়ুরপঙ্খী
তদন্তে নেমে প্রথমেই আলামত হিসেবে বিমানটি জব্দ করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের জিম্মায় দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া। জানা যায়, তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি টিম সকালে শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়েতে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় উড়োজাহাজটির ভেতরেও তারা ঘুরে ঘুরে দেখেন।
উড়োজাহাজটি এখন রয়েছে সিভিল এভিয়েশনের শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরওয়ার-ই-আলমের জিম্মায়। এছাড়া র‌্যাব এবং সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিমের কাছে থাকা বাকি আলামত উদ্ধারের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুলিশ পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া জানান, বিমানটি জব্দ করা হলেও তা সিভিল এভিয়েশনের ব্যবস্থাপকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। উড়োজাহাজের ভেতরে গুলি কিংবা বিস্ফোরণের কোনো আলামত দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
পুত্রের লাশ নিলেন পিয়ার জাহান
অবশেষে উড়োজাহাজ ছিনতাই করতে গিয়ে কমান্ডো অভিযানে নিহত পুত্র পলাশ আহমদের লাশ গ্রহণ করেন তার বাবা পিয়ার জাহান সরদার। সোমবার রাত আড়াইটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তিনি। শনাক্তের পর যাচাই-বাছাই শেষে তাকে লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ সময় তিনি ছেলের লাশ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। রাতেই পিয়ার জাহান সরদার লাশ নিয়ে বাড়ি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। এর আগে সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ চমেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের হিমঘরে রাখা হয়েছিল।



 

Show all comments
  • নূর সরকার ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:০৩ এএম says : 0
    নাটক,,আর কত দেখবো,, কবেযে শেষ হবে এই সিরিয়াল আল্লামাবুদ জানে।
    Total Reply(0) Reply
  • Shakil Ahmed ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:০৫ এএম says : 0
    বিমানের কেবিন ক্রু আর পাইলটকে রিমান্ডে নিলেই আসল তথ্য বের হয়ে আসবে. বিশাল বড় রহস্য আর খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Nahid Ahmed ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:০৭ এএম says : 0
    চলিতেছে সার্কাস
    Total Reply(0) Reply
  • Foridul Islam ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:০৭ এএম says : 0
    এর সুষ্ঠ তদন্ত করা দরকার...
    Total Reply(0) Reply
  • Syed Mizanur Rahman ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:০৯ এএম says : 0
    আমরা কেবিন ব্যাগ এ নেইল কাটার নিয়ে ও দেশের জাতীয় সম্পদ বিমানে উঠতে পারিনা,আমাদের Laptop,wallet এমন কি Trouser এর বেল্ট পর্যন্ত খুলে চেক করে।আর বেচারা পিস্তল, potaka নিয়ে কিভাবে ঢুকল?সেটা কিভাবে সম্ভব?
    Total Reply(0) Reply
  • Safayet Hossain ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:১০ এএম says : 0
    পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো উচিত,, নিরাপত্তাকর্মীদের বেশিরভাগ চুরি এবং দালালিতে ব্যস্ত থাকে,, বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি বহু ঘটনা,,
    Total Reply(0) Reply
  • shofiulla ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৯:৫২ এএম says : 0
    এর সুষ্ঠ তদন্ত করা দরকার...
    Total Reply(0) Reply
  • মতিন ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:২৭ এএম says : 0
    ৫৭ জন সেনাবাহিনীর যে দিন মূত্য বাষিকী সেই দিনই ত্রই নাটক কেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ