Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত জনজীবনে ছন্দপতন : তাপমাত্রা স্বাভাবিকে নামলো

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৭:৪৮ পিএম

‘মাঘের বসন্ত’র পরে ফাল্গুনে বজ্র বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবন। বজ্রের ঘনঘটার কারনে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের নদী বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ৬০-৮০কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগ দক্ষিনের সবগুলো নদী বন্দরকে দ্ ুনম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে। ফলে অনধিক ৬৫ফুট দৈর্ঘের সব যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পায়রা সামুদ্র বন্দরকে ৩নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরে সব মাছধরা নৌকা ও ট্রলারসমুহকে সবধানে চলাচলেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পর পর দুদিনের বৃষ্টিপাতে দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে প্রায় ১০ডিগ্রীরও বেশী। শেষ রাতের ঘন কুয়াশা কাটিয়ে মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যাবধানে সোমবার প্রত্যুষে বৃষ্টি শুরু হয় দক্ষিণাঞ্চলে। সোমবার রাতের শেষ প্রহর থেকে মেঘের গর্জনের সাথে হালকা বৃষ্টিপাতে দক্ষিনাঞ্চল শিক্ত হলেও তাপমাত্রার পারদ নেমে যাবার পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত এ বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জনজীবনে অনেকটাই ছেদ পড়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত বোরো সহ অন্যান্য রবি ফসলের জন্য যথেষ্ঠ উপকারী ছিল। তবে বৃষ্টিপাতের সাথে প্রায় ২০কিলোমিটার বেগের বাতাসে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার আগেই সোমবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে খুলনা-বরিশাল ও ভেড়ামাড়া-বরিশাল ১৩২ কেভি জাতীয় গ্রীড লাইনে গোলযোগের কারণে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। আধ ঘন্টার মধ্যে স্টেশন লোড নিয়ে ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি স্বভাবিক হতে দুপুর গড়িয়ে যায়।
সোমবার শুরু হওয়া ফাল্গুনের ঐ বর্ষণ গতকালও (মঙ্গলবার) অব্যাহত ছিল। গতকঅল সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ১৭মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বর্ষন রবি ফসল সহ বোরো ধানের জন্য এখনো ক্ষতিকর না হলেও তা অব্যাহত থাকলে কৃষি ক্ষেত্রেও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন কৃষিবিদগন। তবে আবহাওয়া বিভাগ আগামীকালের পরে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভবনার কথা জানিয়েছে।
এ বৃষ্টির রেশ ধরে দক্ষিণাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সোমবার সকাল ৬টায় ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হৃাস পায় প্রায় ১১ ডিগ্রী। রবিবার পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা সংলগ্ন কলাপাড়াতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দেশের সর্বাধিক ৩৩.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.৫ ডিগ্রী। যা সোমবার দুপুরে ২০.১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হৃাস পায়। গতকাল বরিশালে সর্বোচ্চ ও সর্বমিন্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৬ ডিগ্রী ও ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সোমবারের আগের সপ্তহধীককাল ধরে দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশ যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছিল । আবহাওয়া বিভাগের মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে বরিশাল অঞ্চলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা যথাক্রমে ২৯ ডিগ্রী ও ১৪.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু গত রবিবার বরিশালে তাপমাত্রার পারদ প্রায় ৩২ ডিগ্রী এবং পটুয়াখালীতে ৩৩ ডিগ্রীতে উঠে যায়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের প্রায় ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে ২১ ডিগ্রীর কাছে পীঠে ওঠানামা করছিল।

এবার পৌষে সাম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পরলেও মাঘে শীত উধাও হয়ে বসন্তের আমেজ সৃষ্টি হয় দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে। গত ২৯ ডিসেম্বর বরিশালে এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু মাঘের শুরু থেকেই শীত বিদায় নিতে শুরু করে। তবে মাঘের মাঝে এসে একবার মৃদু শৈত্য প্রবাহে আবার তাপমাত্রার পারদ ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কিছুটা নিচে নামলেও তা ৩ দিনের বেশী স্থায়ী হয়নি। দিন কয়েকের মধ্যেই তাপমাত্রা আবার ১৬ ডিগ্রীর ওপরে উঠে যায়। ফাল্গুনের শুরু থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮Ñ২১ ডিগ্রীতে ওঠানামা করছিল।
এ অবস্থাতেই গত কয়েকটি দিন শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারী এবং ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী অববাহিকা সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ঢেকে থাকলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে ছিল। গত রবিবার সকালেও বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু সোমবার শেষ রাতের বৃষ্টিপাতের প্রভাব সকাল ৬টায় তাপমাত্রা নেমে যায় ১৬ ডিগ্রীতে।
দক্ষিণাঞ্চলে এবার সাম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সত্ত্বেও আগেভাগে শীত বিদায় নিয়ে শেষ রাত থেকে মাঝারী ও ঘন কুয়াশার কারনে জনস্বাস্থ্য সহ মৌসুমী ফল ও রবি ফসলের ওপর নানা বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় এবার দক্ষিণাঞ্চলে রেকর্ড সংখ্যক শিশুর মৃত্যু ঘটেছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে। এদের বেশীরভাগই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেই মারা গেছে। শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরী’র কবলে পড়ে। এমনকি কয়েক দফার মাঝারী থেকে তীব্র শৈত্য প্রবাহের পরে গত কয়েক দিনের শেষ রাতের ঘন কুয়াশায় আম ও লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের মুকুল ঝরে যেতে শুরু করেছে। শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা সহ বিভিন্ন রবি ফসলের গুনগত মানও বিনষ্ট হয়েছে। এমনকি শীতের শাক সবজির ওপরও যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব পড়ে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর বর্ধিত অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আজ ও কাল বরিশাল সহ উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি ও বজ্র বৃষ্টি সহ শীলা বৃষ্টির সম্ভবনার কথা জানিয়ে আগামী কালের পরে পরিস্থিতির উন্নত অশা করছে আবহাওয়া বিভাগ। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য হৃাস পাবার কথাও জানান হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবহাওয়া

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ