পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফতানি বাণিজ্যে ৮৮ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী তৈরী পোশাক শিল্পের এক্সেসরিজ ব্যবসা ক্রমেই বিদেশীদের হাতে চলে যাচ্ছে। উৎপাদনের পাশাপাশি ট্রেডও করছেন ভারত, চীন ও হংকংয়ের ব্যবসায়ীরা। নিয়ম লঙ্ঘন করে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) বাইরে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করে ক্রমেই আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন তারা। এতে করে দেশীয় উদ্যোক্তারা পড়েছেন তীব্র চাপের মুখে। পুঁজি হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট কারখানাগুলো। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে হাজার হাজার কোটি টাকার এক্সেসরিজ ব্যবসা ফের বিদেশিদের দখলে চলে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে তিলে তিলে গড়ে ওঠা সম্ভাবনাময় এ শিল্প। তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের তখন এক্সেসরিজ কিনতে হবে অনেক বেশি দামে বিদেশ থেকে।
জানা গেছে, তিন যুগের অভিজ্ঞ দেশের তৈরী পোশাক শিল্প এক সময় পুরোপুরি বিদেশনির্ভর ছিল। সব কাঁচামালই আসত বিদেশ থেকে। দেশে কেবল সেলাই হতো। আবার চলে যেত বিদেশে। এতে করে মূল্য সংযোজন হতো খুব সামান্যই। বাংলাদেশ কেবল সস্তা শ্রমজনিত সুবিধাটাই পেত। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে এসে দেশে তৈরী পোশাকের পশ্চাৎশিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় সরকার। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প প্রতিষ্ঠায় দেশী উদোক্তাদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়। ফেব্রিক্স, এক্সেসরিজ, লেইস-ফিতা, প্যাকেজিং, প্লাস্টিকসহ নানামুখী পশ্চাৎশিল্প সম্প্রসারিত হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় তৈরী পোশাকের পশ্চাৎ শিল্পের বড় অংশ সরবরাহ করছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিনিয়োগ নীতিমালা উপেক্ষা করে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানি দেশের এক্সেসরিজ খাতে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। চীনের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি ম্যাক্সিম, ডেনমার্কের কোম্পানি অ্যাটেক্স, ব্রিটিশ কোম্পানি নিলরং, সাসটেইনেবল, সুইডিশ কোম্পানি রুদম, রিজেন্সি, মনোহর, ফিলামেন্ট প্রভৃতি কোম্পানি এ দেশে অবৈধভাবে ব্যবসায় করছে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিদেশিরা এসব খাতে বিনিয়োগ করবে না। বিদেশি বিনিয়োগ করা হবে কেবলই ইপিজেডের ভেতরে। কিন্তু সরকারের দুর্বলতার সুযোগে এসব কোম্পানি ইপিজেডের বাইরে এক্সেসরিজ কারখানা করেছে। আবার অনেকে বিদেশ থেকে পণ্য এনে নিজেরা বাজারজাত করছে। এতে করে দেশীয় শিল্প মার খাচ্ছে। বাজার চলে যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে।
যেসব দেশি উদ্যোক্তা পশ্চাৎশিল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন, তাদের নিরাপত্তা দেয়া না হলে নানামুখী সমস্যা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে তৈরী পোশাকের পশ্চাৎশিল্প গড়ে ওঠায় রফতানিতে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। কাঁচামাল আমদানি বাবদ বিদেশে টাকা যাচ্ছে অনেক কম। ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসা করছে, কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। তাদের মতে, এ বাজার যদি বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তবে কাঁচামালের দাম আবার বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে পণ্য রফতানির লিড টাইম। আশঙ্কা দেখা দেবে রফতানি বাজার হারানোর। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে তৈরী পোশাকের পশ্চাৎশিল্পে বিদেশিদের দাপট নিয়ন্ত্রণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
জানা গেছে, প্রায় এক কোটি লোক এ খাতে সরাসরি কাজ করছে। এর মধ্যে আবার ৭৫ ভাগ নারী শ্রমিক। বাংলাদেশ তৈরী পোশাক খাতে বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে। এর মধ্যে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাতের অবদান সাড়ে ৬ ভাগ।
তৈরী পোশাক খাতের বিকাশের সাথে সাথে এর সংশ্লিষ্ট গাম, টেপ, কার্টন, লেবেল, প্যাকেজিং ও প্রিন্টিং শিল্প ও বিকশিত হয়েছে। এক একটি প্যাকেজিং ও প্রিন্টিং কোম্পানিতে গড়ে ২শ’ থেকে ১ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু গত ১০ বছরে বাংলাদেশে বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি ট্রেডিং লাইসেন্স নিয়ে ইপিজেডের বাইরে কার্যাদেশ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন থেকে এবং স্থানীয়ভাবে নিম্নমানের এক্সেসরিজের কাজ করে আনছে। ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলো হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। এক দিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, উৎসে কর কর্তন, বেতন বৃদ্ধির ফলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এতে করে দেশেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে যাওয়া, দেশীয় কোম্পানির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইপিজেডের বাইরে বিদেশি কোম্পানিগুলো বায়িং হাউজের মাধ্যমে যেনতেন কমিশনের মাধ্যমে কাজ করছে। ফলে দেশের টাকা যেমন বাইরে চলে যাচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হারাচ্ছে। নিলরন, ম্যাক্সিম, অ্যাটেক্স, রুথাম, নাইন ইউনাইটেডসহ বেশ কিছু কোম্পানি এক্সেসরিজ ট্রেডিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এক্সেসরিজ খাতে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন সরাসরি দেশের টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাতে বিনিয়োগকারীদের চাওয়া, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে অন্তত এ দিকে সরকারের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আর বিদেশি ট্রেডিং কোম্পানিগুলো যেহেতু ইপিজেডের বাইরে এ ব্যবসায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না, তাই এর লাগাম টানা দরকার। অন্যথায়, ব্যবসায়ীরা গ্যাস বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য, উৎসে কর কর্তন, সেবামূল্যের ঊর্ধ্বগামিতায় ক্রমেই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা বড় কোম্পানিগুলোকে স্পিড অর্ডার দিচ্ছেন। এর অর্থ হচ্ছে, সাত থেকে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেয়া। বাংলাদেশে কাস্টমস, বন্দর, ব্যাংকের জটিলতা পরিহার করে ব্যবসাবান্ধব বা ক্রেতাদের বেঁধে দেয়া সময়ে পণ্য বুঝিয়ে না দিতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে হুমকিতে পড়তে পারে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাত।
তারপরও ইপিজেডে বিদেশি কোম্পানিগুলো যেসব সুবিধা পাচ্ছে, তার সমান সুবিধা পায় না দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তৈরী পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে এর সাথে থাকা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতগুলোকেও শক্তিশালী বা প্রণোদনার আওতায় না আনা গেলে অদূর ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়তেই থাকবে, সামান্য বিনিয়োগে ট্রেডিং ব্যবসায় ঝুঁকে পড়বে বড় কোম্পানিগুলো বলে মনে করছেন অনেকে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫শ’-এর অধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৩০-এর অধিক রকমের এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এখান থেকে এক্সেসরিজ রফতানি হচ্ছে চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে এই খাতে চার লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরের এক্সেসরিজের ৯৫ ভাগেরও বেশি ধরনের পণ্য দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। তৈরী পোশাক খাতের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করছে এসব শিল্প। আর এসব পণ্য সরাসরি বিভিন্ন দেশেও রফতানি হচ্ছে। রফতানির জন্য তৈরী পোশাক শিল্পের প্যাকেজিং হচ্ছে দেশেই। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের রফতানি দ্বিগুণ করে এক হাজার ২০ কোটি ডলার করা সম্ভব বলছেন উদ্যোক্তারা। এই বিবেচনায় এক্সেসরিজ শিল্পকে খুবই সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যগুলো হলো- পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, ইলাস্টিক, বাটন, বাটন ট্যাগ, কলার স্ট্যান্ড, বাটারফ্লাই, লেবেল, করোগেটেড কার্টন, জিপার, হ্যাংটেগ, ব্যাক বোর্ড, নেক বোর্ড, সুইং থ্রেড, প্রাইস ট্যাগ, ফটোবোর্ড, গামটেপ, টিস্যু, ট্যুইল টেপ, এমব্রয়ডারি, প্যাডিং, কুইলটিং প্রভৃতি। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তৈরী পোশাক খাতের উত্থান-পতনের সাথে এ খাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তৈরী পোশাক শিল্পের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হলো সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করা। আগে যখন এ খাতের এক্সেসরিজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো তখন ঝক্কিঝামেলার পাশাপাশি সময়মতো পণ্য হাতে পাওয়াটা ছিল দুরূহ ব্যাপার। তবে এখন দেশেই মানসম্পন্ন সেসব পণ্য উৎপাদিত হওয়ায় দিনে দিনেই পণ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে তৈরী পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ অনেকটা কমেছে। অন্য দিকে এসব এক্সেসরিজ সরাসরি বিদেশে রফতানি হচ্ছে। প্রচ্ছন্ন এবং সরাসরি এ দুই মিলিয়ে গত অর্থবছরে ছয় দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের এক্সেসরিজ রফতানি হয়েছে। এ খাতটি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে রফতানি বাণিজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে তার আলোকে বিজিএমইএ ২০২১ সালে তৈরী পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের রফতানির লক্ষ্যমাত্রাও ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হবে। এ জন্য সরকারের নীতিগত সহায়তার কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আব্দুল কাদের খান বলেছেন, একসময় ট্রেডিং ব্যবসা ভয়াবহ ছিল। এটা আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর। যদিও আস্তে আস্তে এটা কমে আসছে। একই সঙ্গে ছোট ছোট কোম্পানি, যারা নিয়ম মেনে একটি বা দু’টি পণ্য তৈরি করছে তারা বিপাকে পড়ছে। তবে এ ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ এবং এ খাতে বিশেষ নজর দেয়ার কথা জানান আব্দুল কাদের খান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।