গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গোডাউনের সন্ধান পাওয়া মাত্র অভিযোগ জানাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কল সেন্টার খুলেছে। গত শনিবার মেয়র সাইদ খোকন এমন নির্দেশনা দেওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ডিএসসিসির দেওয়া কল সেন্টার (০২৯৫৫৬০১৪) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সেন্টারের অপারেটর আলমগীর কবির সুমন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে কল সেন্টার থেকে কর্তৃপক্ষকে এসব তথ্য জানিয়ে চিঠিও ইস্যু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত শনিবার দুপুরের দিকে এই নম্বরটি অভিযোগ নেওয়ার জন্য খোলা হয়। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত এ সংক্রান্ত অভিযোগের কোন কল পাওয়া যায়নি। রাত ১০টার পর থেকে দুই-একটি কল আসে। আর বেশিরভাগ অভিযোগের জন্য কল আসে গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুরের দিকে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মোট ২০টি অভিযোগ এসেছে।
যে অভিযোগগুলো আসছে তার বেশিরভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক উল্লেখ করে সুমন জানান, এর বাইরে মিরপুরে একটি ও গুলশানের একটি অভিযোগ এসেছে। এ দুটি অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের কল সেন্টারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক যে অভিযোগ আসছে তা চিঠি আকারে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখন ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর।
অভিযোগগুলো কেমন ছিল জানতে চাইলে সুমন বলেন, বাসা-বাড়িতে কেমিক্যালের গোডাউন আছে এমন তথ্যই বেশিরভাগ এসেছে। তার কাছ থেকে গোডাউনের মালিক ও ভবন মালিকের ঠিকানা নেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগকারীর কোনো পরিচয় ও ঠিকানা নেওয়া হচ্ছে না।
এর আগে গত শনিবার মেয়র সাইদ খোকন চকবাজার চুড়িহাট্টা এলাকায় গিয়ে পুরান ঢাকার কোনো এলাকায় কেমিক্যাল সামগ্রী দেখলেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ফোন দেওয়ার আহŸান জানান। মেয়র বলেন, সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ করে বলছি, কোন বাড়ির মালিক কিংবা ব্যবসায়ী যদি কোন প্রকার কেমিক্যাল স্টোর করতে দেখেন আপনারা আমাদের কন্ট্রোল রুম ‘৯৫৫৬০১৪’ নম্বরে ফোন করে জানান।
মেয়র বলেন, যদি কেউ তার বাড়ির আশপাশে পাড়া-মহলায় কেমিক্যাল রাখছে এমন দৃশ্য দেখেন তাহলে আমাদের কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, কাউন্সিলর অফিস, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জানান। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কল সেন্টারে পাওয়া অভিযোগগুলোর বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, সব স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে আজ সোমবার অবৈধ কেমিক্যালের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ পর্যন্ত যেসব অভিযোগ আসছে সেগুলো কিভাবে সমাধান করা হবে সে ব্যপারে সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।
একা তো অভিযান করা যাবে না।
২০১০ সালেও নিমতলী ঘটনার পর সরকার পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণের বিষয়ে বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। ওই সময় গঠিত তদন্ত কমিটি সরকারি হিসেবে প্রায় ৮ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সুপারিশও করেছিল। কিন্তু কি কারণে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায় তা কেউ বলতে পারেনি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করে বলেছেন, কেমিক্যাল গোডাউন না সরানোটা দুঃখজনক ব্যাপার। তবে এবার কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, কেমিক্যাল গোডাউন বিস্ফোরণে গত বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় ভয়াবহ আগুন লাগে। সেখানকার ওয়াহিদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলায় থাকা গোডাউনের বিস্ফোরণে চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট প্রায় ১৬ ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা হয় ৬৭টি লাশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।