Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আখেরাতে কী কী সংঘটিত হবে-৩

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গত দু’টি আলোচনায় আমরা আখেরাতে সংঘটিতব্য বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছিলাম। আজ কিয়ামত দিবসে কী কী দৃশ্যের অবতারণা হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করব। 

সূরা মু’মিনে কিয়ামত দিবসের একটি দৃশ্য এভাবে আঁকা হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি তাদেরকে সমাগত কিয়ামতের দিন সম্পর্কে সতর্ক করে দিন, যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে (এবং লোকেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে) নিজেদের হৃদয়কে চেপে ধরবে (না জানি মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়)! সেদিন অত্যাচারী অপরাধীদের কোনো সাহায্যকারী বান্ধব থাকবে না। আর থাকবে না এমন কোনো সুপারিশকারী, যার কথা শোনা হবে। (ফয়সালা থাকবে শুধু আল্লাহর হাতে) তিনি চোখের চোরদৃষ্টি এবং অন্তরের গোপন রহস্য সম্পর্কেও অবগত।’ (সূরা মু’মিন: আয়াত ১৮-১৯)।
সূরা ইয়াসিনে কিয়ামতের দিন অপরাধীদের অপমানজনক অসহায় অবস্থার লোমহর্ষক চিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, আজকের দিনে আমি তাদের মুখে ছিপি এঁটে দেবো এবং তাদের হাতগুলো আমার সাথে কথা বলবে (এবং তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সূরা ইয়াসিন: আয়াত ৬৫)।
কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে, কিয়ামতের কঠোরতা ও ভয়াবহতার আরেকটি অসাধারণ প্রভাব মানুষের ওপর এ-ও পড়বে যে, প্রত্যেকেরই শুধু নিজের ভাবনা হবে। নিকটতর আপনজনও সেদিন কারো কোনো কাজে লাগবে না। নাফসি নাফসির পরিবেশ হবে।
এ পরিস্থিতির কতই না শিহরণমূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সূরা ‘আবাসায়’! বলা হয়েছে, ‘সুতরাং যখন কানকে বধির করে দেয়ার মতো ডাক-চিৎকার শুরু হবে, সেদিন (উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার এহেন পরিস্থিতি হবে যে,) মানুষ পালাতে থাকবে তার ভাই থেকে, নিজের মাতা-পিতা থেকে এবং নিজের স্ত্রী ও সন্তান থেকে (নিজের উপরোক্ত প্রিয়জনের প্রতিও কারো কোনো সহানুভ‚তি থাকবে না), সেদিন প্রত্যেক লোকের নিজ নিজ ভাবনা এমন প্রকট হবে, যা অন্য কারো ভাবনাকে ভিড়তেই দেবে না। অনেক (মানুষের) চেহারা সেদিন থাকবে হাস্যোজ্জ্বল ও আনন্দিত। আবার অনেকের চেহারা (অর্থাৎ, অপরাধীদের চেহারা) সেদিন হবে ধূলিমলিন ও কালিমালিপ্ত।’ (সূরা আবাসা: আয়াত ৩৩-৪১)।
বিগত আলোচনায় বলা হয়েছে, কোরআন মাজীদের বিরাট অংশ জুড়ে কিয়ামত, হাশর-নশর তথা পারলৌকিক হিসাব-কিতাব সংক্রান্ত এমন ধরনের বিবরণ দান করা হয়েছে। এখানে এ প্রসঙ্গে মাত্র কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করা হয়েছে। বলতে গেলে কোরআন মাজীদের কোনো কোনো পূর্ণাঙ্গ সূরাও কিয়ামত-আখেরাতের বিবরণে ভরপুর।
যেমন- সূরা ওয়াকিয়াহ, সূরা হাক্কাহ, সূরা কিয়ামাহ, সূরা তাকভির, সূরা ইনফিতার, সূরা ইনশিকাক ও সূরা গাশিয়ায় কিয়ামত-আখেরাতের অবস্থাই বিবৃত হয়েছে। বড় বড় এসব সূরা উদ্ধৃত করার অবকাশ এখানে নেই। তার পরও একটি ছোট্ট সূরা নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো। তাতেও কেবল কিয়ামত-আখেরাতের দৃশ্যই বিবৃত হয়েছে।
‘ভূমন্ডলকে যখন কিয়ামতের ভ‚কম্পনে তছনছ করে দেয়া হবে এবং ভূমি যখন তার ভেতরকার বোঝা (সমাহিত মৃত ও অন্য বস্তুসামগ্রী) বাইরে বের করে দেবে এবং মানুষ যখন এ অবস্থা দেখে বলতে থাকবে, এ ভূমন্ডলের হলো কি? সেদিন ভূমন্ডল তার যাবতীয় সংবাদ ও উপাখ্যান বলে দেবে, (যে, অমুক বান্দা আমার ওপর এ ধরনের ভালো-মন্দ সম্পাদন করেছে আর অমুক এ ধরনের)। (আর তা বলবে) এ কারণে যে, এমন নির্দেশ আপনার পালনকর্তা দেবেন।
সেদিন মানবকুল বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আসবে নিজেদের কৃতকর্ম দর্শন করার জন্য (তাদের প্রতিদান কিংবা শাস্তি পাওয়ার জন্য)। বস্তুত তখন যে লোক অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকবে, সে তা সেখানে দেখে নিতে পারবে। আর যে অণু পরিমাণ অপকর্ম করে থাকবে, তাও সেখানে তার সামনে উপস্থিত হবে।’ (সূরা যিলযাল: আয়াত ১-৮)।



 

Show all comments
  • Md Jahirul ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
    আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামের মৌলিক আকিদাসমূহের মধ্যে অন্যতম। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস ছাড়া ঈমান বিশুদ্ধ বা পরিপূর্ণ হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য হক ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
    কিয়ামত বলতে এমন এক সময়কে বোঝায় যখন আল্লাহর নির্দেশে জগতের সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপর যখন আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছা হবে তখন তিনি আবার সকলকে জীবিত করবেন। সকলেই পুনরুথিত হয়ে হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। এরপর সকলের কাছ থেকে জাগতিক জীবনের সব কিছু হিসাব গ্রহণ করা হবে। হিসাব-নিকাশের মানদণ্ডে আল্লাহর যে সব বান্দা উত্তীর্ণ হবেন তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারবে না তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ পর্যায় থেকে মানুষ অনন্তকালের জন্য জান্নাতে বা জাহান্নামে অবস্থান করতে থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজীব ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
    আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামের মৌলিক আকিদাসমূহের মধ্যে অন্যতম। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস ছাড়া ঈমান বিশুদ্ধ বা পরিপূর্ণ হয় না। এই মর্মে পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, আর যারা পরকালের উপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাকারা, ২ : ৪) পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, আখিরাত, ফিরিশতাগণ, সমস্ত আসমানি কিতাব এবং নবীগণের উপর ঈমান আনলে। (সূরা বাকারা, ২ : ১৭৭)
    Total Reply(0) Reply
  • রিদওয়ান বিবেক ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১৯ এএম says : 0
    দুনিয়ার দৃশ্যমান জীবন যেমন এক বাস্তব সত্য, তেমন ইমানদারদের কাছে আখিরাতের জীবনও মহাসত্য হিসেবে বিবেচিত। মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন দুনিয়ার জীবন সংক্ষিপ্ত। আখিরাতের জীবন অনন্ত। ফলে দুনিয়ার জীবনকে পরম পাওয়া এবং এ জীবন নিয়ে মগ্ন থাকা মুমিনদের কাজ হতে পারে না। দুনিয়া অভিলাষী মানুষ দুনিয়াকে যখন তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ভাবে তখন আখিরাতের জীবন সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ে। এই অসচেতনতা তাকে বেসামাল করে তোলে। সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষ দুনিয়ার জীবনে যদি আখিরাতের কথা মনে রাখে তবে সে সর্বদাই সতর্ক থাকার চেষ্টা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • নিল আকাশ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১৯ এএম says : 0
    ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও আদর্শের উপর নিজেকে সুদৃঢ় রাখার জন্য আখিরাতের উপর আস্থাশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন শুরু হবে এবং সে জীবনে পুরস্কার কিংবা শাস্তি বা সফলতা কিংবা ব্যর্থতা ইহকালের কর্মকাণ্ডের উপরই নির্ভরশীল- এ কথার বিশ্বাসই মানুষকে পার্থিব জীবনে সত্যপথের অনুসারী বানায় এবং ভালো আমলের পথে উদ্বুদ্ধ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • রবিউল ইসলাম রুবেল ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১৯ এএম says : 0
    আখিরাতের জীবন যে অনন্ত তা হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় স্পষ্ট করা হয়েছে। বিশাল সাগরের পানিতে আঙুল চুবালে তাতে যে পানি লাগে আখিরাতের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবন ততটুকু নগণ্য। মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত কেবল এতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ নিজেদের আঙুল সাগরে চুবিয়ে দিল। এবার সে দেখুক, এ আঙুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরে আসে। (মুসলিম)
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ বিন জাফর ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২০ এএম says : 0
    আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন তুচ্ছ। অথচ দুনিয়ার জীবনের মোহে আমরা আখিরাতের জীবনকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত করছি। দুনিয়ার জীবনের জন্য যেহেতু আখিরাতে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে সেহেতু দুনিয়ায় কেউ অসত্য, অসুন্দর ও অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ এবং তাঁর রসুল প্রদর্শিত সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলতে ব্যর্থ হলে আখিরাতের জীবনে তাকে শাস্তি পেতে হবে। সে শাস্তির কথা দুনিয়ার জীবনে কল্পনা করাও কষ্টকর। কাজেই প্রতিটি মোমিনের উচিত তার হৃদয়কে দুনিয়ার মোহ থেকে রক্ষা করা। দুনিয়ার জীবনের প্রতি অকারণ ভালোবাসার বদলে আখিরাতের বিশাল জীবনে যাতে সুখ-শান্তির অনন্ত স্বাদ অন্বেষণ করা যায় সে চিন্তায় মগ্ন হওয়া। দুনিয়ার জীবনের মোহ ছাড়তে পারলে মানুষ অন্যায় ও অকল্যাণের পথ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হবে। আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন