বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত দু’টি আলোচনায় আমরা আখেরাতে সংঘটিতব্য বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছিলাম। আজ কিয়ামত দিবসে কী কী দৃশ্যের অবতারণা হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করব।
সূরা মু’মিনে কিয়ামত দিবসের একটি দৃশ্য এভাবে আঁকা হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি তাদেরকে সমাগত কিয়ামতের দিন সম্পর্কে সতর্ক করে দিন, যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে (এবং লোকেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে) নিজেদের হৃদয়কে চেপে ধরবে (না জানি মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়)! সেদিন অত্যাচারী অপরাধীদের কোনো সাহায্যকারী বান্ধব থাকবে না। আর থাকবে না এমন কোনো সুপারিশকারী, যার কথা শোনা হবে। (ফয়সালা থাকবে শুধু আল্লাহর হাতে) তিনি চোখের চোরদৃষ্টি এবং অন্তরের গোপন রহস্য সম্পর্কেও অবগত।’ (সূরা মু’মিন: আয়াত ১৮-১৯)।
সূরা ইয়াসিনে কিয়ামতের দিন অপরাধীদের অপমানজনক অসহায় অবস্থার লোমহর্ষক চিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, আজকের দিনে আমি তাদের মুখে ছিপি এঁটে দেবো এবং তাদের হাতগুলো আমার সাথে কথা বলবে (এবং তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সূরা ইয়াসিন: আয়াত ৬৫)।
কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে, কিয়ামতের কঠোরতা ও ভয়াবহতার আরেকটি অসাধারণ প্রভাব মানুষের ওপর এ-ও পড়বে যে, প্রত্যেকেরই শুধু নিজের ভাবনা হবে। নিকটতর আপনজনও সেদিন কারো কোনো কাজে লাগবে না। নাফসি নাফসির পরিবেশ হবে।
এ পরিস্থিতির কতই না শিহরণমূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সূরা ‘আবাসায়’! বলা হয়েছে, ‘সুতরাং যখন কানকে বধির করে দেয়ার মতো ডাক-চিৎকার শুরু হবে, সেদিন (উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার এহেন পরিস্থিতি হবে যে,) মানুষ পালাতে থাকবে তার ভাই থেকে, নিজের মাতা-পিতা থেকে এবং নিজের স্ত্রী ও সন্তান থেকে (নিজের উপরোক্ত প্রিয়জনের প্রতিও কারো কোনো সহানুভ‚তি থাকবে না), সেদিন প্রত্যেক লোকের নিজ নিজ ভাবনা এমন প্রকট হবে, যা অন্য কারো ভাবনাকে ভিড়তেই দেবে না। অনেক (মানুষের) চেহারা সেদিন থাকবে হাস্যোজ্জ্বল ও আনন্দিত। আবার অনেকের চেহারা (অর্থাৎ, অপরাধীদের চেহারা) সেদিন হবে ধূলিমলিন ও কালিমালিপ্ত।’ (সূরা আবাসা: আয়াত ৩৩-৪১)।
বিগত আলোচনায় বলা হয়েছে, কোরআন মাজীদের বিরাট অংশ জুড়ে কিয়ামত, হাশর-নশর তথা পারলৌকিক হিসাব-কিতাব সংক্রান্ত এমন ধরনের বিবরণ দান করা হয়েছে। এখানে এ প্রসঙ্গে মাত্র কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করা হয়েছে। বলতে গেলে কোরআন মাজীদের কোনো কোনো পূর্ণাঙ্গ সূরাও কিয়ামত-আখেরাতের বিবরণে ভরপুর।
যেমন- সূরা ওয়াকিয়াহ, সূরা হাক্কাহ, সূরা কিয়ামাহ, সূরা তাকভির, সূরা ইনফিতার, সূরা ইনশিকাক ও সূরা গাশিয়ায় কিয়ামত-আখেরাতের অবস্থাই বিবৃত হয়েছে। বড় বড় এসব সূরা উদ্ধৃত করার অবকাশ এখানে নেই। তার পরও একটি ছোট্ট সূরা নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো। তাতেও কেবল কিয়ামত-আখেরাতের দৃশ্যই বিবৃত হয়েছে।
‘ভূমন্ডলকে যখন কিয়ামতের ভ‚কম্পনে তছনছ করে দেয়া হবে এবং ভূমি যখন তার ভেতরকার বোঝা (সমাহিত মৃত ও অন্য বস্তুসামগ্রী) বাইরে বের করে দেবে এবং মানুষ যখন এ অবস্থা দেখে বলতে থাকবে, এ ভূমন্ডলের হলো কি? সেদিন ভূমন্ডল তার যাবতীয় সংবাদ ও উপাখ্যান বলে দেবে, (যে, অমুক বান্দা আমার ওপর এ ধরনের ভালো-মন্দ সম্পাদন করেছে আর অমুক এ ধরনের)। (আর তা বলবে) এ কারণে যে, এমন নির্দেশ আপনার পালনকর্তা দেবেন।
সেদিন মানবকুল বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আসবে নিজেদের কৃতকর্ম দর্শন করার জন্য (তাদের প্রতিদান কিংবা শাস্তি পাওয়ার জন্য)। বস্তুত তখন যে লোক অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকবে, সে তা সেখানে দেখে নিতে পারবে। আর যে অণু পরিমাণ অপকর্ম করে থাকবে, তাও সেখানে তার সামনে উপস্থিত হবে।’ (সূরা যিলযাল: আয়াত ১-৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।