Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আখেরাতে কী কী সংঘটিত হবে-২

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:২৩ এএম

গত আলোচনায় আমরা আখেরাতে সংঘটিতব্য বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছিলাম। আজ আরও কিছু বিষয় বলতে চেষ্টা করব। কেয়ামত এবং তার ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআন খোলামেলা আলোচনা করেছে।
সূরা নামলে কেয়ামত এবং তার ভয়াবহতা এভাবে বিবৃত করা হয়েছে, ‘আর যেদিন (জগৎ-সংসারের এ ব্যবস্থাপনাকে তছনছ ও বিধ্বস্ত করে দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে) শিঙা ফুঁকা হবে, তখন নভোমন্ডল ও ভ‚মন্ডলের যাবতীয় সৃষ্টি (মানুষ ও ফেরেশতা প্রভৃতি তার ভয় ও ত্রাসে) সন্ত্রস্ত (এবং সংজ্ঞাহীন) হয়ে পড়বে সেসব কতিপয় ব্যক্তিত্ব ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা তখন (এ ভয়ভীতি থেকে) রক্ষা করতে চাইবেন। সবাই অসহায় ও বিনম্রভাবে তার (আল্লাহ তায়ালার) সামনে হাজির হয়ে যাবে।
বস্তুত তোমরা পাহাড়-পর্বতের প্রতি লক্ষ্য করে (এবং সেগুলোর বাহ্যিক অবস্থার প্রেক্ষিতে) মনে কর, এগুলো চিরকাল স্থির ও অটল-অনড় থাকবে; (নিজের অবস্থান থেকে কখনও টলবে না।) কিন্তু যখন কেয়ামতের শিঙা ফুঁকা হবে, তখন এসব পর্বতমালা এমনভাবে উড়তে থাকবে, যেমন করে শূন্যমন্ডলে মেঘমালা উড়তে থাকে।’ (সূরা নামল: আয়াত ৮৭-৮৮)।
কেয়ামতের ভয়ঙ্কর কঠোরতার চিত্র সূরা হজে এভাবে আঁকা হয়েছে, ‘হে মানবমন্ডলী, তোমাদের পালনকর্তার রোষাণলকে ভয় কর। বিশ্বাস কর, কেয়ামতের প্রকম্পন হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যখন (সে কেয়ামত এসে উপস্থিত হবে আর) তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, তখন (এমনি অবস্থা দাঁড়াবে যে, কারও প্রতি কারও খেয়াল থাকবে না।
এমন কি স্তন্যদানকারিণী মায়েরা তাদের দুগ্ধপোষ্য শিশুদের কথাও ভুলে যাবে এবং গর্ভবতীদের গর্ভপাত হয়ে যাবে। তখন তোমরা মানুষকে দেখতে পাবে নেশাগ্রস্তের ন্যায় (নিস্পন্দ ও অনুভ‚তিহীন)। বস্তুত তখন তারা নেশাগ্রস্ত থাকবে না; বরং (আল্লাহ তায়ালার রোষাণল ও আজাবের ভয়ে তাদের এহেন অবস্থা হবে এবং আল্লাহর আজাব অত্যন্ত কঠিন বিষয়।’ (সূরা হাজ্জ: আয়াত ১-২)।
সূরা কাহাফে কেয়ামত ও হাশর-নাশরের বর্ণনার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার দরবারে উপস্থাপন এবং অপরাধীদের তখনকার অবস্থা ব্যক্ত করা হয়েছে এভাবে, ‘আর সেদিনের কথা লক্ষ্য করুন, যখন (এ জগৎ-সংসারের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা আমার নির্দেশত্রমে তছনছ হয়ে যাবে এবং) আমি পর্বতমালকেও স্থানচ্যুত করে দেব (এবং ভ‚মন্ডলের সমগ্র আবাদীকে চুরমার করে সমান করে দেয়া হবে)।
আর আপনি ভ‚পৃষ্ঠকে দেখবেন-খোলা ময়দান পড়ে আছে, (যাতে না আছে কোনো পাহাড় পর্বত আর না কোনো জনপদ।) আর আমি সমস্ত মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করে নিজের আদালতে সমবেত করব, তাদের মধ্যে একজনকেও ছাড়া হবে না। আর তাদেরকে আপনার পালনকর্তার সামনে কাতারের পর কাতার পেশ করা হবে, (তখন তাদেরকে বলা হবে,) দেখ, তোমাদের যেভাবে প্রথমবার পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তেমনিভাবে (আমার হুকুমে পুনরায় জীবিত হয়ে) আজকের দিনে তোমরা আমার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে।
অথচ তোমরা এ ধারণা বদ্ধমূল করে নিয়েছিলে যে, আমি তোমাদের জন্য প্রতিশ্রæত কোনো সময় আনব না (আর যে কেয়ামতের সংবাদ নবী-রাসূলগণ দিয়ে থাকেন তা কখনও আসবে না। তাহলে এখন কি তোমরা দেখতে পেয়েছ এটি কি হচ্ছে)। আর কৃতকর্মের খতিয়ান সামনে রেখে দেয়া হবে। তখন তোমরা দেখতে পাবে অপরাধীদেরকে, সে খতিয়ানে তাদের কৃতকর্মের যে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, তাতে তারা হতভম্ব এবং তার শাস্তির ভয়ে ভীত।
তখন তারা (নৈরাশ্য ও হতাশায়) বলতে থাকবে, আফসোস, আমাদের দুর্ভাগ্য, এ কেমন খতিয়ান, যাতে ক্ষুদ্রাদপিক্ষুদ্র কোনো কর্ম বাদ পড়েছে, না বৃহত্তর কর্ম। সবই যে এতে সংরক্ষিত রয়েছে। তাতে তারা নিজের সমস্ত কৃতকর্মই উপস্থিত পাবে। বস্তুত আপনার পরওয়াদেগার কারও প্রতি অন্যায় করেন না। (তিনি যেসব অপরাধীর জন্য আজাব ও শাস্তির ফয়সালা দেবেন তা তাদের অপকর্মের দরুনই দেবেন)।’ (সূরা কাহাফ: আয়াত ৪৭-৭৯)।



 

Show all comments
  • Anwar Hossain ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৭ এএম says : 0
    মৃত্যু অবধারিত সত্য; কিন্তু সে বিষয়ে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন। আবার কেউ-কেউ ভাবেন মৃত্যু এলে বুঝি পৃথিবীর ঝক্কি-ঝামেলা সব শেষ। মৃত্যুর পর মাটিতে মিশে যাব। ব্যস, আর কোনো ঝামেলা নেই। কোনো জবাবদিহিতা নেই। আর যদি থাকেও তাহলে এ নিয়ে মাথা ঘামানোর কারণ নেই। যা হবার হবে। এটা নিছক একটি অমূলক ধারণা। নিজের প্রতি অবর্ণনীয় জুলম। কেননা মৃত্যুপরবর্তী জীবনই হলো আসল জীবন। শাশ্বত জীবন। তাই মৃত্যু ও মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে উদাসীন হওয়ার অর্থ হলো নিজকে হারিয়ে ফেলা। নিজকে গভীর আঁধারে নিমজ্জিত করে দেয়া। মর্মন্তুদ ও অশেষ কষ্ট-যাতনার অগ্নিগহ্বরে স্বেচ্ছায় নিজকে নিক্ষেপ করা।
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ বিন জাফর ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৭ এএম says : 0
    মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। প্রস্তুতি নিতে হবে উত্তম পন্থায়। কুরআন-হাদীসে মৃত্যুর পরের বিষয়গুলো অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ যখন মারা যায় এবং তাকে কবরস্থ করা হয় তখন তাকে প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখী হতে হয় তা হলো কবরের ফেতনা।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজীব ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৭ এএম says : 0
    বুখারী ও মুসলিমে আনাস রাযি. এর বর্ণনায় এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় কোনো বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার দোস্ত-আহবাব তাকে রেখে চলে আসে, তখন কবরস্থ ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। তিনি বলেন, ‘(এরপর) দুজন ফেরেশ্তা এসে তাকে বসায় ও জিজ্ঞাসা করে, ‘এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলতে’? ‘অতঃপর মুমিন ব্যক্তি বলবে, ‘আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল’।এরপর ঐ ব্যক্তিকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার জায়গার প্রতি তাকিয়ে দেখো। আল্লাহ তাআলা এর পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘অতঃপর সে উভয়টাই দেখতে পাবে’।
    Total Reply(0) Reply
  • রবিউল ইসলাম রুবেল ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৮ এএম says : 0
    ইমাম কাতাদা রহ. বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে যে, এই মুমিন কবরবাসীর জন্য তার কবরকে সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হবে। সবুজে ভরে দেয়া হবে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ বেলায়েত হোসেন ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৮ এএম says : 0
    “আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব’ (সূরা আল ইসরা:৯৭)। এই ভীতিকর ও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পাপাচারী, জালেম, মুনাফিকদের দেখা যাবে অবনত মস্তকে, অপলক নেত্রে। আর তাদের অন্তর থাকবে শূন্য। সেদিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। সেদিন মানুষের হৃদয় থাকবে ওষ্ঠাগত, বিষর্ণ। কিয়ামতের সে দিনটির দৈর্ঘ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ দিনের ভয়াবহতা থেকে হিফাযত করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির মুন্সি ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
    হে আল্লাহ!আপনি আমাদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করুন এবং ঈমানের সাথে আমাদের খাতেমা বিল খাইর নসীব করুন। আপনি আমাদেরকে আখেরাতের যাবতীয় আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমাদের আমলনামা ডান হাতে দিন এবং দুনিয়াতে আমাদেরকে হায়াতে তাইয়িবা নসীব করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন