বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত আলোচনায় আমরা আখেরাতে সংঘটিতব্য বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছিলাম। আজ আরও কিছু বিষয় বলতে চেষ্টা করব। কেয়ামত এবং তার ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআন খোলামেলা আলোচনা করেছে।
সূরা নামলে কেয়ামত এবং তার ভয়াবহতা এভাবে বিবৃত করা হয়েছে, ‘আর যেদিন (জগৎ-সংসারের এ ব্যবস্থাপনাকে তছনছ ও বিধ্বস্ত করে দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে) শিঙা ফুঁকা হবে, তখন নভোমন্ডল ও ভ‚মন্ডলের যাবতীয় সৃষ্টি (মানুষ ও ফেরেশতা প্রভৃতি তার ভয় ও ত্রাসে) সন্ত্রস্ত (এবং সংজ্ঞাহীন) হয়ে পড়বে সেসব কতিপয় ব্যক্তিত্ব ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা তখন (এ ভয়ভীতি থেকে) রক্ষা করতে চাইবেন। সবাই অসহায় ও বিনম্রভাবে তার (আল্লাহ তায়ালার) সামনে হাজির হয়ে যাবে।
বস্তুত তোমরা পাহাড়-পর্বতের প্রতি লক্ষ্য করে (এবং সেগুলোর বাহ্যিক অবস্থার প্রেক্ষিতে) মনে কর, এগুলো চিরকাল স্থির ও অটল-অনড় থাকবে; (নিজের অবস্থান থেকে কখনও টলবে না।) কিন্তু যখন কেয়ামতের শিঙা ফুঁকা হবে, তখন এসব পর্বতমালা এমনভাবে উড়তে থাকবে, যেমন করে শূন্যমন্ডলে মেঘমালা উড়তে থাকে।’ (সূরা নামল: আয়াত ৮৭-৮৮)।
কেয়ামতের ভয়ঙ্কর কঠোরতার চিত্র সূরা হজে এভাবে আঁকা হয়েছে, ‘হে মানবমন্ডলী, তোমাদের পালনকর্তার রোষাণলকে ভয় কর। বিশ্বাস কর, কেয়ামতের প্রকম্পন হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যখন (সে কেয়ামত এসে উপস্থিত হবে আর) তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, তখন (এমনি অবস্থা দাঁড়াবে যে, কারও প্রতি কারও খেয়াল থাকবে না।
এমন কি স্তন্যদানকারিণী মায়েরা তাদের দুগ্ধপোষ্য শিশুদের কথাও ভুলে যাবে এবং গর্ভবতীদের গর্ভপাত হয়ে যাবে। তখন তোমরা মানুষকে দেখতে পাবে নেশাগ্রস্তের ন্যায় (নিস্পন্দ ও অনুভ‚তিহীন)। বস্তুত তখন তারা নেশাগ্রস্ত থাকবে না; বরং (আল্লাহ তায়ালার রোষাণল ও আজাবের ভয়ে তাদের এহেন অবস্থা হবে এবং আল্লাহর আজাব অত্যন্ত কঠিন বিষয়।’ (সূরা হাজ্জ: আয়াত ১-২)।
সূরা কাহাফে কেয়ামত ও হাশর-নাশরের বর্ণনার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার দরবারে উপস্থাপন এবং অপরাধীদের তখনকার অবস্থা ব্যক্ত করা হয়েছে এভাবে, ‘আর সেদিনের কথা লক্ষ্য করুন, যখন (এ জগৎ-সংসারের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা আমার নির্দেশত্রমে তছনছ হয়ে যাবে এবং) আমি পর্বতমালকেও স্থানচ্যুত করে দেব (এবং ভ‚মন্ডলের সমগ্র আবাদীকে চুরমার করে সমান করে দেয়া হবে)।
আর আপনি ভ‚পৃষ্ঠকে দেখবেন-খোলা ময়দান পড়ে আছে, (যাতে না আছে কোনো পাহাড় পর্বত আর না কোনো জনপদ।) আর আমি সমস্ত মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করে নিজের আদালতে সমবেত করব, তাদের মধ্যে একজনকেও ছাড়া হবে না। আর তাদেরকে আপনার পালনকর্তার সামনে কাতারের পর কাতার পেশ করা হবে, (তখন তাদেরকে বলা হবে,) দেখ, তোমাদের যেভাবে প্রথমবার পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তেমনিভাবে (আমার হুকুমে পুনরায় জীবিত হয়ে) আজকের দিনে তোমরা আমার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে।
অথচ তোমরা এ ধারণা বদ্ধমূল করে নিয়েছিলে যে, আমি তোমাদের জন্য প্রতিশ্রæত কোনো সময় আনব না (আর যে কেয়ামতের সংবাদ নবী-রাসূলগণ দিয়ে থাকেন তা কখনও আসবে না। তাহলে এখন কি তোমরা দেখতে পেয়েছ এটি কি হচ্ছে)। আর কৃতকর্মের খতিয়ান সামনে রেখে দেয়া হবে। তখন তোমরা দেখতে পাবে অপরাধীদেরকে, সে খতিয়ানে তাদের কৃতকর্মের যে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, তাতে তারা হতভম্ব এবং তার শাস্তির ভয়ে ভীত।
তখন তারা (নৈরাশ্য ও হতাশায়) বলতে থাকবে, আফসোস, আমাদের দুর্ভাগ্য, এ কেমন খতিয়ান, যাতে ক্ষুদ্রাদপিক্ষুদ্র কোনো কর্ম বাদ পড়েছে, না বৃহত্তর কর্ম। সবই যে এতে সংরক্ষিত রয়েছে। তাতে তারা নিজের সমস্ত কৃতকর্মই উপস্থিত পাবে। বস্তুত আপনার পরওয়াদেগার কারও প্রতি অন্যায় করেন না। (তিনি যেসব অপরাধীর জন্য আজাব ও শাস্তির ফয়সালা দেবেন তা তাদের অপকর্মের দরুনই দেবেন)।’ (সূরা কাহাফ: আয়াত ৪৭-৭৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।