Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনহীনতার সংস্কৃতি গিলে খাচ্ছে সবকিছু

প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর

আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের নানা প্রসঙ্গ ঠাঁই করে নিচ্ছে। এসবে যেমনি জনগণের নিরাপত্তাহীনতা ও সেই সাথে নানা আশঙ্কার কথা থাকছে তেমনি রাজনৈতিক বিশ্লেষণও স্থান পাচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এরকমই একটি সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়েছে, অরাজকতার পথে বাংলাদেশ। বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও আইনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হলে দ্রুতগতিতে বাংলাদেশ অরাজকতার দিকে ফিরে যাবে। সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে কমপক্ষে ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকা-ের নেপথ্য কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ব্যাপক সহিংসতা ও বিরোধীদের বর্জনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এ আদালত সরকারের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে টার্গেট করা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের। এর সঙ্গে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, নির্যাতন ও গুম যোগ হয়েছে। এ সবকিছু আইনের শাসনের ওপর যে আস্থা, তা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অন্য বিশ্লেষণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মৌলিক কিছু পরিবর্তনেরও আভাস দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে ধর্মীয়বোধ-বিশ্বাসের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব যাদের দ্বারা প্রতিফলিত হয় তাদের সাথে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে বরং এরা অনেকেই এখন সরকারের সাথে সম্পর্কিত হয়ে উঠছে। বিদেশি মিডিয়ায় এ ধরনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের কোনো কোনো মিডিয়াতেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেসব আলোচনাতেও সম্পর্কের সুখকর এবং বিব্রতকর বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে। এসব আলোচনা একদিকে যেমনি অর্থহীন নয়, তেমনি বর্তমান প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে খুব একটা গুরুত্ববাহী মনে করারও কোনো কারণ নেই। এসব আলোচনার মূল প্রাণ হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই জোটভোট। এখন বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে ভোটের কোনো প্রসঙ্গ নেই। অতএব কে কার পক্ষে-বিপক্ষে সে নিয়ে বড় ধরনের মাথা ঘামানোর বোধহয় খুব একটা সুযোগ নেই। তবে এর ভিন্নমাত্রিক প্রভাব রয়েছে, যার সাথে হয়তো নির্বাচনের দূরতম যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে।
গোটা জাতি এবং আন্তর্জাতিক মহল যখন বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখার অপেক্ষা করছে তখন সরকারের বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে সরকার উচ্ছেদের নানা অভিযোগের কথা। মাঝে মাঝেই এ ধরনের কথা প্রচারিত হচ্ছে। এরপর চলে ধরপাকড়। অতি সম্প্রতি মোসাদ সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে এখনো বেশ তোলপাড় চলছে। বিষয়টি যেহেতু খবরের মধ্যেই রয়েছে তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা হয়তো সঙ্গত হবে না। মোসাদ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে কেন উচ্ছেদ করতে যাবে, সে বিষয়টি বোঝা খুব কষ্টসাধ্য। এ কথা ঠিক, বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে মোসাদের ভূমিকা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। একদিকে যেমনি মার্কিন নির্বাচনে ইহুদি চক্রান্ত প্রকাশ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে, অন্যদিকে ইহুদি বিরোধিতার মধ্য দিয়েই লন্ডনে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছে লেবার পার্টি। সে কারণেই হয়তো নির্বাচিত হওয়ার পরই লন্ডনের মেয়রের নতুন পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে একজন মুসলিম হিসেবে। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন একজন ব্রিটেনের নাগরিক হিসেবে। অথচ তার সে পরিচয় বাদ দিয়ে তিনি যে একজন মুসলিম, তার পিতা একজন বাসচালক ছিলেন, তার পূর্বপূরুষেরা পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন সেসব কথাই উঠে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে তার প্রতিপক্ষ ধনকুবের রক্ষণশীল দলের প্রার্থী আগেই এসব প্রচারণা শেষ করেছিলেন। লন্ডনের ভোটাররা সব জেনেই ভোট দিয়েছেন তাকে। এর মধ্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট একটি বার্তা হয়তো বিশ্ব অঙ্গনে দেয়া হয়েছে, যার অনুধাবন বিশ্ব বাস্তবতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ইহুদিবাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন অথবা শিথিল করার কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। খোদ ব্রিটেনেও ইহুদিবিরোধী লবি শক্তিশালী হচ্ছে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, যুক্তরাজ্যের শাসন ব্যবস্থা ও নিয়মনীতিতে বর্তমান সময়ের নেতিবাচকতা অনেকটাই কম। অধিকতর ইহুদি প্রভাবিত হয়েই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বুশ নিজ উদ্যোগে সিআইএকে দিয়ে ইরাক সম্পর্কে ভুল রিপোর্ট তৈরি করিয়েছিলেন। বর্তমান সময়ে ফ্রান্স এবং ভারত ছাড়া মোসাদের শক্তিশালী কোনো ঘাঁটি নেই। এ অঞ্চলে মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি এবং ডিমুসলিমাইজেশনে ইহুদি লবি মূলত ভারতনির্ভর। কারণ তাদের পলিসি ভারতীয় পলিসির সাথে মেলে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্ক যে মাত্রায় তাতে ভারতীয় নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে মোসাদ বাংলাদেশে সরকার উৎখাতে সক্রিয় রয়েছে, বিষয়টি মেলে না। আবার এ ঘটনায় মোসাদ নাকি ব্যবহার করছে বিএনপি-জামায়াতকে। সরকারের ভাষায়, বিএনপি-জামায়াতের পরিচিতি হচ্ছে জঙ্গি মৌলবাদী। আর জনগণের ভাষায় বিএনপি জোট হচ্ছে গণতন্ত্রপন্থি এবং সমাজে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পক্ষের শক্তি। তাহলে ভারতীয় সমর্থনপুষ্ট সরকারকে উৎখাতের দায়িত্ব কেন মোসাদ নেবে, সে বিষয়টি অনেক গুরুতর বিবেচনার দাবি রাখে। তবুও বিষয়টি যেহেতু দেশের প্রভাবশালী গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাই সময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ ধরনের ঘটনায় অনুসন্ধানের দায়িত্ব গোয়েন্দাদের হলেও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষপট বিবেচনায় নানা প্রশ্ন থেকেই যায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের কথা বলা যায়, যিনি নিজে সিআইএকে দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করিয়েছিলেন অপকর্ম সাধন করতে। বাংলাদেশেও ১/১১-এর সময়ে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে দেশের প্রভাবশালী গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এমন সব ভয়াবহ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল যেগুলো পরবর্তীকালে আদালতে টেকেনি। সে বিবেচনায় অবশ্যই দেখার রয়েছে কী হয়। বাস্তবত এ কথা স্বীকার করতেই হবে, এ ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে জনগণের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা বা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রবণতা খুব একটা ফলপ্রসূ নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যারা বিশ্লেষণ করছেন তাদের অবশ্যই নিজস্ব কিছু দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৪ সাল পূর্ব থেকে দেশে রাজনৈতিক দলগুলো যে ধরনের জোট বা ঐক্যে ছিল এখনো তাতে দৃশ্যমান খুব একটা পরিবর্তন এসেছে তা বোধহয় বলা যাবে না। মাঝে মাঝে সরকারের কোনো কোনো মহল এমনকি কোনো কোনো মিডিয়াতেও বিএনপি ভাঙল, গেল গেল বলে চিৎকার শোনা যায়। মাঝে-মধ্যে বিএনপি অফিসে হামলার ঘটনাও ঘটে। একে রাজনীতিতে ব্যাপক কোনো পরিবর্তন বলা যাবে না। কারণ কেউ আলাদা দল করতে চাইলে তার জন্য কোনো সমস্যা নেই। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে শেখ শওকত হোসেন নীলু এবং ইসলামী ঐক্যজোটের কেউ কেউ বেরিয়ে গেলেও তাদেরই অন্য অংশ জোটে রয়েছে। তেমনিভাবে সরকারি জোট থেকে দিলীপ বড়–য়ার সাম্যবাদী দলের অনেকে বিএনপি জোটের সাথে যুক্ত হলেও দিলীপ বড়–য়া সরকারের সাথেই রয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেক পুরনো পরীক্ষিত ছাত্রনেতারাও বিএনপিতে জোটে যোগ দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, জোটের প্রকৃতি নিয়ে। আন্তর্জাতিক মহল এবং দেশের কোনো কোন মহলও এ কথা বলার চেষ্টা করছে যে, দক্ষিণপন্থিরা বিএনপি জোট ছাড়ছে এবং সে তুলনায় আওয়ামী শিবিরে যোগ দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি দৈনিকে এ সংক্রান্ত যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে বোধকরি তা বোঝার চেষ্টা করলেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। যে পরিবর্তনের আভাস দেয়া হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য কি-সেটি পুরোপুরি জানা না গেলেও এটা বোঝা যায়-এর সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। ব্যবহার প্রবণতার হয়তো কোনো সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। জোটভোট-যা কিছুই বলা হোক না কেন এর মূল বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন। নির্বাচন হলে বা দিলে তখন প্রশ্ন আসবে কে কার সাথে রয়েছে। ভোটের হিসাব জোটের হিসাবে নানা প্রসঙ্গ থাকতেই পারে। কার্যত দেশে এখন নির্বাচনের চেয়ে অন্য প্রসঙ্গই অধিকতর স্থান দখল করে নিয়েছে। আর নির্বাচনের প্রসঙ্গে এখন অনেক ভাবনা রয়েছে। ২০১৪ সালের পর এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে প্রতিটিতেই আগেরটির চেয়ে খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের চলমান তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জনের অধিক প্রাণ দিয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক। নির্বাচনী অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে খোদ প্রিসাইডিং অফিসাররা। প্রতিটি ভোট হওয়ার পর যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে তাতে এটা পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে বর্তমান বাস্তবতায় যে কোনো ভোট করতে প্রচ- সাংগঠনিক শক্তির প্রয়োজন হবে। এ ধরনের নির্বাচন কমিশনকে বাগে রাখতে এবং গণতন্ত্র রক্ষা করতে কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই নয় বরং সামাজিক সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে। সেদিক থেকে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার। লক্ষণীয় হচ্ছে, এসব নির্বাচনের কোনো বিরোধিতা বিএনপি করেনি। সবখানে তারা প্রতিরোধ-প্রতিবাদও করেনি। তা সত্ত্বেও নির্বাচন নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য করার বিন্দুমাত্র উদ্যোগ কি রয়েছে? যদি তা না থেকে থাকে তাহলে নির্বাচন আজ হোক বা কাল হোক যখনই হোক সে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া একই কথা। এতে গণতন্ত্র সংহত হওয়ার বিপরীতে অগণতান্ত্রিকতাই আসন গেড়ে বসবে এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে জোটের আলোচনা অর্থহীন। তবে এটা হয়তো বলা অমূলক নয় যে, এর ফলে গণতন্ত্রের যে বাংলাদেশ মডেল তৈরি হয়েছে অর্থাৎ ভোট আছে আবার নেই এটা হয়তো রফতানি হতে পারে। যেহেতু এই প্রক্রিয়া প্রবণতা ভারত থেকেই এসেছে হয়তো আগামীতে সে দেশেও এটা চালু হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ ইচ্ছায় একসময়ে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু হয়েছিল সেটি কিন্তু সমস্যা সমাধানে ইউরোপের কোনো কোনো দেশেও চালু হয়েছিল। সে যাই হোক, বাংলাদেশে এখন যে একাধিপত্যের বিস্তার চলছে তার প্রকৃতি বিশ্লেষণই জরুরি।
নির্বাচনের মাঠে যে সংঘর্ষ চলছে তা কার্যত বিএনপির সাথে নয়। ঢাকায় নিজেরা মিছিল করতে গিয়ে একে অপরকে হামলা করেছে। বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে তিনি বলেছেন, মিষ্টির দোকানে আশ্রয় নিয়েও নিরাপদ হতে পারেননি। শুধু এ ক্ষেত্রে নয়, সারা দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের যে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা রয়েছে সে কথা দলের মুখপাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফও স্বীকার করেছেন। প্রচলিত স্বরের চেয়ে অনেক নিচু গলায় তিনি স্বীকার করেছেন, দলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা থেকেই আধিপত্য বিস্তারের এই প্রবণতা। আধিপত্য বিস্তার করে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মূলত জাতীয় নির্বাচনবিমুখিতারই দলীয় রূপ। অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তার চিত্র পাওয়া যায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অন্য দু-একটি ঘটনায়। করমর্দন না করাকে কেন্দ্র করে পিটুনি খেতে হয়েছে ইউএনওকে। বলা হচ্ছে, উপজেলা পর্যায়ে কে কোন টেন্ডার পাবেন বা পাবেন না সেটি আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে তথাকথিত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। এ ধরনের পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত দেশের অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে সে কথা কি ভাবা যায়? অন্যদিকে প্রচ- দলীয়করণের কারণে আমলাতন্ত্রে অদক্ষতা মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে। বিরূপ প্রভাব রয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। সাধারণভাবেও মনে করা হয়, শিক্ষা মানুষকে সভ্য করে। উচ্চ শিক্ষা উন্নত মানুষ তৈরি করে। বাংলাদেশে ঘটছে তার উল্টোটি। গত কয়েক বছরে দেশের উচ্চ শিক্ষায়তনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির উচ্চ হার। অন্য খবরে বলা হয়েছে, যৌন কেলেঙ্কারিতে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বরখাস্ত। আলোচ্য খবরে বলা হয়েছে, নৈতিক অবক্ষয় আর অধঃপতন একের পর এক গ্রাস করে চলছে সর্বত্র। ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক শিক্ষক বরখাস্তের ঘটনা ঘটছে। যৌন নির্যাতনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী ছাত্রীরা জানিয়েছেন বাস্তব চিত্র অনেক খারাপ। অধঃপতনের প্রকৃত চিত্র গণমাধ্যমে আসে না। যৌন নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটছে দু-একটি বাদে তার বেশির ভাগই আড়াল থাকে। পারিবারিক, সামাজিক কলঙ্ক ও লোকলজ্জার ভয়ে কেউ এসব প্রকাশ করে না। কেবল বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে কিছু ঘটনা ফাঁস হয়। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠামাত্রই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনাই উচ্চতর শিক্ষায়তনে একমাত্র বিষয় নয়। দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়েই যৌনতার বাইরেও নানা ধরনের আসক্তি কাজ করছে। মাদক আসক্তি গ্রাস করছে এই শ্রেণীকে। কেবলমাত্র উচ্চ শিক্ষায়তনই নয় বরং দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নানা ধরনের অনিয়ম স্থান করে নিয়েছে। সব মিলে কথা এই দাঁড়ায় যে, শিক্ষাঙ্গনে যেখানে শিক্ষা পেয়ে উন্নত মানুষে পরিণত হওয়ার কথা তার বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রেই অমানুষ হয়ে বেরুচ্ছে। ভাবতে হবে সমস্যার গোড়া নিয়ে। দেখতে হবে সমস্যা কি পাঠ্যসূচিতে নাকি নীতি ব্যবস্থাপনায়, নাকি সামগ্রিক চর্চায়?
নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জের ধরেই হোক আর নির্বাচনহীনতার সংস্কৃতির কারণেই হোক বাস্তবতা হচ্ছে প্রতিযোগিতা এখন চলছে সরকারের নিজেদের মধ্যেই। এখানে কোথাও অন্যদের উপস্থিতির সুযোগ নেই। সরকার উৎখাতের সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে যে তত্ত্বের কথা বলা হয়েছে তার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। বোধকরি সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে এ ধরনের ভীতির কারণ নেই। দেশ একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, সে কথা বিদেশিরাও বলতে শুরু করেছে। সবার মনে রাখা দরকার, লৌহ প্রাচীর কোনো নিরাপত্তা বলয় নয় বরং জনগণের আস্থাই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে।

[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচনহীনতার সংস্কৃতি গিলে খাচ্ছে সবকিছু
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ