পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের জরুরী বিভাগ ও মর্গের দিকে যেতেই কানে ভেসে আসে কান্না, চিৎকার আর আহাজারির শব্দ। দেখা গেল, এক একজন দিক বেদিক ছুটে ফিরছেন। প্রত্যেকের চোখ কান্নায় ভিজে একাকার। সবাই কেবল নিহত স্বজনদের লাশের খোঁজ করছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মর্গের সামনে নিহতদের স্বজনদের ভীড়ও বাড়তে থাকে। তখনও খুব অল্প সংখ্যক লাশের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। বেশিরভাগ স্বজন তখনো নিহত আত্মীয়দের পরিচয় সনাক্তে এক জায়গা থেকে অন্যত্র দৌড়ে ছুটছিলেন।
মর্গের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, বেশিরভাগ লাশ পুড়ে আঙ্গার হয়ে গেছে। অল্প কয়েকজন ছাড়া অন্যদের চেহারা দেখে পরিচয় নিশ্চিত করা খুবই কষ্টকর। তবে স্বজনদের কেউ কেউ আকার আকৃতি ও বিভিন্ন চিহ্ন দেখে লাশ শনাক্তের চেষ্টা করেন। স্বজনদের কান্না আর চিৎকারে মর্গের আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে ওঠে। এমন মর্মান্তিক দৃশ্য বলে বোঝাবার নয়।
এদিকে, সনাক্ত হওয়া লাশের হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপন হচ্ছিল। এতে স্বজন হারাদের মধ্যে উদ্বেগ আর আহাজারি বাড়তে থাকে। নিহতদের স্বজনরা মর্গের সামনে বিলাপ করছেন আর বলছেন, যত দ্রæত সম্ভব আমাদেরকে লাশগুলো বুঝিয়ে দিন। আমরা ভিখারী নই। আমাদের কোন টাকা পয়সা দেওয়ার দরকার নেই। আমরা লাশগুলো নিয়ে সুন্দরমতো দাফন করতে চাই।
মর্গের সামনের পুরো এলাকায় দেখা গেল একই রকম দৃশ্য, নিহতদের স্বজনরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন। কেউ স্বজনদের ছবি হাতে নিথরভাবে মাটিতে পড়ে ছিলেন। কেউ কেউ স্বজনদের ছবি নিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন। অনেকে মোবাইলে ছবি নিয়ে মর্গের সামনে অপেক্ষা করেন। কেউ কেউ মর্গের ভেতরে ঢুকে স্বজনদের পরিচয় সনাক্ত করে বাইরে এসে জোরে কান্না শুরু করেন। যাদের কাছে ছবি ছিল না তারা নিখোঁজ স্বজনদের আকার আকৃতি ও পোশাকের বর্ণনা বলে পরিচয় জানতে চেষ্টা করেন।
বিকেলের দিকে মর্গের সামনে এক মা একটি পাসপোর্ট ছবি নিয়ে কাঁদছিলেন আর এক জায়গা থেকে ছুটে অন্য জায়গায় যাচ্ছিলেন। এই মা বলেন, যে রকম করেই হোক আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। আমার বাবারে এনে দেন। বাবারে আমি কোলে নিমু। মাংস, ছালি যা থাকে তাতেই হবে। আমি আমার বাবার ছালি (ছাই) গায়ে মাখামু।
এই মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তার ছেলের নাম ফুয়াদ। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ফোর্থ সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। ছেলের ছবিতে হাত বোলান আর একাকী বিলাপ করে বলতে থাকেন, আমার বাবা কোনো আড্ডা-ফাড্ডা দিতো না। নিয়মিত ভার্সিটিতে যাইতো আবার ক্লাস শেষে বাসায় ফিরা আইতো।
মর্গের সামনে আম গাছের নিচে জড়ো হয়ে বসে অনেকে কান্নাকাটি করছিলেন। দু’জনের কোলে দুটি জমজ শিশুও কাঁদছিল। কাছে গিয়ে জানা গেলোÑ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ বর্ষের ছাত্র কাওসার আহমেদের স্বজন। কাওসার পড়াশোনার পাশাপাশি চকবাজারে মদিনা মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসি চালাতেন। অগ্নিকাÐের সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। কাওসারের ভাই ইলিয়াস কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ও নেই জানতে পেরেছি। লাশ মর্গে আসছে শুনেছি। তবে দুপুর পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারি নাই।
বুধবার মধ্যরাত থেকে চাচা কাজী এনামুল হককে খুঁজতে একাধিকবার জরুরী বিভাগ ও মর্গে এসেছেন ভাতিজা কাজী জহির। তিনি জানান, তার চাচা সিটি কলেজ থেকে বিবিএ পাস করে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সে চাকরি করছিলেন। অগ্নিকাÐের পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সকালের দিকে মর্গের সামনে বড়কাটারা মাদ্রাসার ছাত্র মো. আতাউর। তিনি জানান, তার শিক্ষক মাওলানা ওমর ফারুকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আগুনে পুড়ে যাওয়া ওয়াহিদ মঞ্জিলে মাওলানা ফারুকের একটি ফার্মেসি ছিল।
বাবার খোঁজে মোবাশ্বর হোসেন এসেছেন মর্গের সামনে। তিনি জানান, তার বাবা হাজি মো. ইসমাইলকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে ঘটনার পূর্ব মুহূর্তে তাদের বাসার নিচের একটি দোকান থেকে চা খেয়ে হাঁটতে বের হন। সেই থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অ্যাডভোকেট সুমাইয়া আক্তার নামে এক নারী কান্না করতে করতে বলেন, আমার ভাইয়ের হাত ভেঙে গিয়েছিল। অপারেশন করে হাতের ভেতরে রড দেওয়া হয়েছে। শরীর পুড়ে গেলেও আমরা হাতের রড ও কোমরের বেল্ট দেখে লাশ সনাক্ত করেছি।
মোহাম্মদ হোসেন মর্গে এসেছেন তাঁর ছেলে রোহানকে খুঁজতে। আগুন লাগার সময় রোহান চুড়িহাট্টাতেই ছিল। গতকাল বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তিনি তার ছেলের কোন খোঁজ পাননি। এই বাবা বলেন, ছেলেটি বেঁচে আছে কিনা সেটি জানতে পারলেও নিজেকে অন্তত সান্তনা দিতে পারতাম।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাশ হস্তান্তরে বিলম্ব হওয়ায় স্বজনরাও দিশেহারা হয়ে পড়েন। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির আব্দুর রহিম দুলালের স্বজন বাবু বলেন, আমি দুলালের লাশ শনাক্ত করতে পেরেছি। আমরা কোন টাকা চাই না। দ্রæত আমাদেরকে লাশ বুঝিয়ে দিতে বলেন।
রফিকুল ইসলাম নামে এক স্বজন তাই ভাইয়ের শনাক্ত করে স্বাক্ষর করেছিলেন। পরে তিনি কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যান। এদিকে, লাশ হস্তান্তরের সময় রফিকুলের স্বাক্ষর ছাড়া লাশ অন্য স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় মর্গ কর্তৃপক্ষ। পাশে থাকা অন্য স্বজনরা বলেন, বার বার বেহুশ হয়ে যাওয়ায় কাগজে স্বাক্ষর করতে পারছে না। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্য স্বজনদের লাশ না দেওয়ায় তারাও বিপাকে পড়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।