পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভাষা আন্দোলন ও ফেব্রæয়ারির একুশ তারিখ বাঙালির অস্তিত্ব, আগ্রহ আর আবেগের জায়গা। আর অমর একুশে গ্রন্থমেলা এ দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মিলনমেলা। একুশ নিয়ে এদেশের মানুষের আবেগ আর ভালোবাসার কমতি না থাকলেও এ নিয়ে রয়েছে পরিকল্পনার কমতি। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শুধু বই বিক্রিই মূল বিষয় নয়। এর সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির বেদনা ও গৌরবগাঁথা ইতিহাস। তবে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যাচ্ছে না। যত দিন যাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথম ২০দিনে প্রায় ৩ হাজার নতুন বই এলেও এসব বইয়ের মধ্যে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও পূর্বাপর নিয়ে গবেষণার অভাবে এসম্পর্কিত নতুন বই কম আসছে বলে জানান প্রকাশকরা। বিগত বছরগুলোতে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলন ও একুশের বই সম্পর্কিত আলাদা ক্যাটাগরি অনুযায়ি তথ্য জানানো হলেও এবার ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত নতুন বইয়ের সংখ্যা জানেন না একাডেমির তথ্য কেন্দ্রের সদস্যরা। এ বিষয়ে তাদেরকে জিঙ্গেস করা হলে তারা কোন তথ্য দিতে পারেননি। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ওয়েবসাইটে যুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নতুন ৭৮টি বই প্রকাশ হওয়ার তথ্য দেয়া হলেও এরমধ্যে একুশের বইয়ের সংখ্যা কত তা দেয়া হয়নি। তবে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরলে প্রত্যেক সচেতন সমালোচকেরই চোখে পড়বে যে একুশ নিয়ে নতুন প্রকাশিত বই খুবই অপ্রতুল। মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে একুশ বা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বই পাওয়া গেছে। নতুন ও পুরাতন মিলে মেলায় ভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, অক্ষর, একুশের ছড়া কবিতা, আমার দেখা ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি, একুশে ফেব্রæয়ারি জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক, আমার লড়াই ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, কালের ধ্বনি, ভাষা আন্দোলন বায়ান্ন পর্ব,প্রথম শহীদ মিনার, ভাষা সংগ্রামী নারীরাসহ অল্প কয়েকটি বই। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের সামনে বিশদ ও বিস্তৃত পরিসরে তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। ভাষা আন্দোলন নিয়ে বাঙালী জাতির এখনও অনেক কিছু জানার বাকি আছে বলে মনে করেন তিনি। গতবছর অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে গোলাম কুদ্দুছের ভাষা আন্দোলন নিয়ে শিশু-কিশোরভিত্তিক বই ‘ভাষা আন্দোলন: সহজপাঠ’, ‘ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ’ ও ‘ভাষা আন্দোলন বায়ান্ন পূর্ব’ নামক তিনটি বই। ভাষা আন্দোলন নিয়ে নতুন বই কেন আসছে তা জানতে চাইলে প্রকাশকরা জানান ভাষা আন্দোলন নিয়ে নতুন কোন গবেষণা হচ্ছে না। যা হচ্ছে মানের দিক থেকে সেগুলো নি¤œমানের তাই এগুলো প্রকাশ করতে আগ্রহ পান না তারা। কাকলী প্রকাশনীর এ কে এম নাসির আহমেদ সেলিম এ বিষয়ে বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে নতুন বই প্রকাশ করার আমাদের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু লেখকরা এ নিয়ে ভালো কোন পান্ডুলিপি নিয়ে আসছেন না। ভালো কোন বই পাওয়া গেলে তা অবশ্যই প্রকাশ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন এ প্রকাশক।
গতকাল বৃহস্পতিবার মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গ্রন্থমেলা চলে সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৩৯৬টি। দিবসটি উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে দেড় শতাধিক নবীন-প্রবীণ কবি কবিতা পাঠে অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কবি অসীম সাহা। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা। বাংলা ভাষার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন ভাষাসংগ্রামী জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরনো ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাÐে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। গতকাল লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন খালেদ হোসাইন, শাহাদুজ্জামান, ফারুক ওয়াসিফ, রাহেল রাজিব এবং তপন পালিত। কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, হাসান হাফিজ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, জাফর আহমদ রাশেদ, আলফ্রেড খোকন এবং সোহেল হাসান গালিব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল বাহার চৌধুরী, আহ্কাম উল্লাহ এবং তামান্না সারোয়ার। ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’র পরিবেশনায় এতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফকির আলমগীর, প্রমীলা চক্রবর্তী, মহাদেব ঘোষ, লাইসা আহমদ লিসা, বুলবুল ইসলাম, জান্নাত-ই-ফেরদৌসী এবং নীলোৎপল সাধ্য। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন এনামুল হক ওমর (তবলা), মো. ফারুক (প্যাড), রবিনস চৌধুরী (কী-বোর্ড) এবং আবু কামাল (বেহালা)।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি :
আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলা চলবে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় অমর একুশের উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার শতবর্ষ : ফিরে দেখা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. মাহবুবুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সাইফুদ্দীন চৌধুরী, আলী হোসেন চৌধুরী এবং এম আবদুল আলীম। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।