গতকাল বুধবার রাতে ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে গেইল তাল্ডবে ৩৬০ রান তোলে উইন্ডিজ। ৩৬১ রানের লক্ষ্য ৬ উইকেট আর ৮ বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে যায় তারা।
এ নিয়ে নয় ম্যাচে তিনশ বা তার বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতল ইংল্যান্ড। ২০১৫ সালে নটিংহ্যামে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সাড়ে তিনশ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিল তাদের আগের রেকর্ড। ওয়ানডেতে এর চেয়ে বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের কীর্তি আছে কেবল দুটি।
শুরুতেই ফিরতে পারতেন মন্থর ব্যাটিং করা গেইল। নয় রানে লিয়াম প্লানকেটের বলে তার ক্যাচ ছাড়েন ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ফিল্ডার রয়। জীবন পাওয়ার পরও কিছুক্ষণ একইরকম সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন গেইল।
ক্রিজে যাওয়ার পর থেকে শট খেলতে শুরু করেন শেই হোপ। জুটিতে শুরুতে অগ্রণী ছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরেন বিস্ফোরক ওপেনার গেইল। জমে যায় তাদের জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ১৩১ রান।
৬৫ বলে ৬৪ রান করে বিদায় নেন হোপ। বেশিক্ষণ টিকেননি শিমরন হেটমায়ার। অভিষকে শূন্য রানে ফিরেন নিকোলাস পুরান। ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হন ড্যারেন ব্রাভো। দ্রুত জমে যায় তার সঙ্গে গেইলের জুটি।
লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে উড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন ব্রাভো। তার আগেই নিজের ২৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন গেইল। প্রথম ৪৯ বলে ২০ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার তিন অঙ্কে পৌঁছান ১০০ বলে।
শেষ পর্যন্ত বেন স্টোকসের বলে বোল্ড হয়ে থামেন গেইল। ১২৯ বলে খেলা তার ১৩৫ রানের দারুণ ইনিংস গড়া ১২ ছক্কা ও তিন চারে। শেষের দিকে অ্যাশলি নার্সের ৮ বলে অপরাজিত ২৫ রানের সৌজন্যে আড়াইশ ছাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ। স্বাগতিকরা শেষ ১০ ওভারে যোগ করে ১০০ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে ছক্কা ২৩টি। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল তাদের বিপক্ষেই ২০১৪ সালে নিউ জিল্যান্ডের ২২ ছক্কা। নিজের প্রথম ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদিকে (৪৭৬) ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড নিজের করে নেন গেইল।
অলরাউন্ডার স্টোকস ৩ উইকেট নেন ৩৭ রানে। ইংলিশ বোলারদের মধ্যে একমাত্র তিনিই কোনো ছক্কা হজম করেননি। লেগ স্পিনার রশিদ ৭৪ রানে নেন তিনটি।
বড় রান তাড়ায় জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৯১ রানের জুটিতে ইংল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রয়। ৬ চারে ৩৩ বলে ৩৪ রান করা বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে ১০.৫ ওভার স্থায়ী শুরুর জুটি ভাঙেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।
জো রুটের সঙ্গে শতরানের জুটিতে দলকে দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে ফিরেন রয়। সপ্তম সেঞ্চুরি পাওয়া ইংলিশ ওপেনারকে ফিরিয়ে ১১৪ রানের জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু।
শুরু থেকে বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া রয় ৩০ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৬৫ বলে। শেষ পর্যন্ত ৮৫ বলে ১৫ চার ও তিন ছক্কায় ফিরেন ১২৩ রানের দাপুটে এক ইনিংস খেলে।
রয়ের ব্যাটে ১২ ওভারে তিন অঙ্কে যায় ইংল্যান্ডের সংগ্রহ। সফরকারীদের দুইশ আসে ২৫.৫ ওভারে।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে পারেনি স্বাগতিকরা। এলোমেলো বোলিংয়ের সঙ্গে ভুগিয়েছে বাজে ফিল্ডিং। অসংখ্য সহজ-কঠিন সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুল দিতে হয়েছে হোল্ডারের দলকে।
এক তালে খেলে যান রুট। বোলারদের ওপর চড়াও হন অধিনায়ক মর্গ্যান। দেখতে দেখতে জমে যায় টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়কের জুটি। চমৎকার এক ক্যাচ নিয়ে তৃতীয় উইকেটে তাদের ১১৬ রানের জুটি ভাঙেন হোল্ডার।
৫১ বলে তিন ছক্কা ও চার চারে ৬৫ রান করে ফিরেন মর্গ্যান। জয় তখন ইংল্যান্ডের হাতের নাগালে।
এ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফল হওয়া সবশেষ ১৮ ওয়ানডেতে ১৭তম জয় পেল ইংল্যান্ড। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ২০১৪ সালের পর কোনো ওয়ানডেতে হারেনি তারা।
দলকে সমতায় নিয়ে ফিরেন ক্যারিবিয়ানে স্বাগতিকদের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরি পাওয়া রুট। ৯৭ বলে খেলা তার ১০২ রানের ইনিংস গড়া ৯টি চারে। ক্যারিয়ারের চতুর্দশ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছান এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
চার হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেন জস বাটলার। ২০ রানে অপরাজিত থাকেন স্টোকস।
আগামী শুক্রবার একই ভেন্যুতে হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ:৫০ ওভারে ৩৬০/৮ (গেইল ১৩৫, ক্যাম্পবেল ৩০, হোপ ৬৪, হেটমায়ার ২০, পুরান ০, ব্রাভো ৪০, হোল্ডার ১৬, ব্র্যাথওয়েট ৩, নার্স ২৫*, বিশু ৯*; ওকস ২/৫৯, উড ০/৪৯, মইন ০/৮৫, প্লানকেট ০/৫৪, স্টোকস ৩/৩৭, রশিদ ৩/৭৪)
ইংল্যান্ড: ৪৮.৪ ওভারে ৩৬৪/৪ (রয় ১২৩, বেয়ারস্টো ৩৪, রুট ১০২, মর্গ্যান ৬৫, স্টোকস ২০*, বাটলার ৪*; বিশু ১/৭৮, টমাস ১/৭২, হোল্ডার ২/৬৩, ব্র্যাথওয়েট ০/৬৬, নার্স ০/৬৯, ক্যাম্পবেল ০/১৩)
ফল: ইংল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জেসন রয় (ইংল্যান্ড)