পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় নদী উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযানে মাঠে নেমেছে বিআইডবিøউটিএ। কয়েকদিন ধরে অভিযান সফল হলেও রাজধানীর বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীতীরে এসএস রহমান গ্রæপের ভবনসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে বাধার মুখে পড়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাবিøউটিএ)। গত মঙ্গলবার বাধার ঘটনার পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কারণ দেখিয়ে চলমান অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের চাপের কারণে বিআইডাবিøউটিএ-এর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন এবং বিআইডাবিøউটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানকে উচ্ছেদ অভিযান থেকে সাময়িক সরিয়ে নেয়া হয় বলে জানা গেছে।
সারাদেশে ৪০৫ নদ-নদীর মধ্যে ৩৭টি সবচেয়ে বেশি দখল-দূষণের শিকার। আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি একযোগে অবৈধ নদী দখলদারদের তালিকা ডিসিদের প্রকাশ করতে নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
সারাদেশে উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, বিআইডাবিøউটিএ যে অভিযান শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে। ঠেকাতে কারো প্রভাবই খাটবে না। চলমান এ অভিযানে এক হাজার ৭৬০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দূষণ বন্ধ ও নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। তা চলমান থাকবে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নদ-নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে নির্দেশ দেয়ার পর সারাদেশেই বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযানে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। তবে প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা পাচ্ছে প্রশাসন। মামলা করে স্থাপনা উচ্ছেদ ঠেকিয়ে রাখছে অনেকে। এসব মামলা মোকাবিলায় নিজস্ব আইনজীবী নিয়োগ করেছে সরকার।
জানা গেছে, গত দুইদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীর অভিযানে নামে বিআইডাবিøউটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ তার সঙ্গে থাকা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদ অভিযানের একপর্যায়ে তারা মোবাইল ফোনে চরমভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই জায়গাটায় নদীর বেশিরভাগ অংশ সরকার দলীয় এক প্রভাবশালীদের দখলে। আমিন-মোমিন হাউজিং প্রপার্টির পাশাপাশি সেখানে নদীর দখল করে ইটের ভাটাও তৈরি করা হয়েছে। অবৈধ দখলের কারণে ওই অংশে নদী প্রায় উধাও। ওই হাউজিং প্রপার্টিতে বুলডোজার নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাবিøউটিএ) অভিযান শুরু করতেই বাধার সম্মুখীন হয়। উচ্ছেদ অভিযানের একপর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ কর্মকর্তারা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আবার এই ব্যস্ততার মধ্যেই এর মধ্যেই ছোট-বড় আরো অনেক স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। একপর্যায়ে প্রভাবশালীদের বাধার মুখে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করেতে বাধ্য হয় বিআইডাবিøউটিএ।
এ প্রসঙ্গে বিআইডাবিøউটিএ-এর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, অভিযান শুরুর একপর্যায়ে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান আজকের মতো (মঙ্গলবার) বন্ধ করতে। তাই আমি চলে যাচ্ছি। এ সময় কার নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করা হয়-জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পরিচালক বন্দরের নির্দেশে অভিযান বন্ধ করা হয়েছে।
অভিযান চলাকালেই আকস্মিক তা স্থগিত করা প্রসঙ্গে বিআইডাবিøউটিএ থেকে সদ্য বদলি হওয়া চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক বলেন, নবাগত চেয়ারম্যান বুধবার থেকে কাজ শুরু করবেন, তবে এই কদিন আমিই অভিযানের বিষয়ে দেখভাল করছিলাম।
গত মঙ্গলবার অভিযান শুরুর একপর্যায়ে আমরা জানতে পারি আমিন-মোমিন গ্রæপের জমি নিয়ে হাইকোর্টে রিট রয়েছে। অন্যদিকে ১০ তলা ভবনটিও আমাদের নদীর সীমানার ভেতর নয়, সেটি রাজউকের আওতায়। ফলে ওই দুটি বিষয় সুরাহা না করে তা ভাঙা আইনগতভাবে আমাদের ঠিক হবে কি না, সেটা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অভিযানে থাকা টিমকে ফেরত আনা হয়েছে। তবে অভিযান বন্ধ হয়নি। আগামী মার্চ মাস থেকে যথারীতি আবার অভিযান শুরু হবে।
বিআইডাবিøউটিএ-এর অন্য এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অভিযান বন্ধ করা হয়নি, নির্বাচনের পর অভিযান চলবে। কাউকে প্রত্যাহার করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, অভিযানের সময় আমিন-মোমিন হাউজিং প্রপার্টির লোকজন দাবি করেছিল যে তাদের জমির বৈধ কাগজপত্র আছে। তা ছাড়া নদীর সীমানা পিলার নিয়েও তারা আপত্তি তোলে। এ কারণে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আপাতত অভিযান স্থগিত করে চলে আসতে বলা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই ফের অভিযান চলবে।
অন্যদিকে, গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে বসিলা ব্রিজের উত্তর অংশ থেকে ফের অভিযান শুরু হয়। এরপর সেখানে ১২টি পাকা ও আধাপাকা ভবন উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় নদীতীরে থাকা টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়। এরপর বিকেল ৩টার দিকে বসিলা এলাকার আমিন-মোমিন হাউজিংয়ে অভিযান শুরু করা হয়। হাউজিংয়ের মাঝখান দিয়ে একটি সড়ক চলে গেছে। পাশেই সড়কলাগোয়া নদীর সীমানা পিলার। পাশে ছোট ছোট টিনশেড ঘর। অভিযানের সময় এসব ঘরের বেশির ভাগ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদীর জমি দখল করেই এখানে হাউজিং প্রপার্টি গড়ে তোলা হয়েছে। আমিন- মোমিন হাউজিংয়ের ভেতরেই জমির মালিকানা দাবি করে একটি সাইনবোর্ড টানানো আছে। ওই সাইনবোর্ডে লেখা, ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক মো. রকিবুল আলম দীপু। চেয়ারম্যান এসএস রহমান গ্রæপ। আসলে সে কোনো মালিক নয়। সরকার এ জমির মালিক।
রকিবুল আলম দীপু বলেন, আমার (দীপু) বাবা ক্যান্সারের রোগী। আমি বাবাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে আছি। বাবার কেমো চলছে। বুড়িগঙ্গায় আমার কোনো জমি নেই। আমি কখনো বুড়িগঙ্গার জমি দখল করিনি। তিনি অনেকটা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব। আমার নাম, আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ও আমার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নদীর জায়গা দখল করা হয়েছে অথচ আমি জানি না!
এদিকে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি ৬৪ জেলায় একযোগে অবৈধ নদী দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই তালিকায় থাকবে দূষণকারীরাও। জনসাধারণ যাতে দেখতে পারেন সে জন্য এই তালিকা টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে উন্মুক্ত স্থানে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, অবৈধ দখলদারদের তালিকা জেলায় জেলায় প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযান চলবে। নদীর জমি নির্ধারণ করা বড় সমস্যা। দখলদাররা সীমানা পর্যন্ত মুছে দিয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি এ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪০৫ মধ্যে ৩৭টি নদ-নদীর মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলের বড়াল নদী, কুমিল্লা অঞ্চলের ডাকাতিয়া, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্ণফুলী, হালদা, নেত্রকোনার মগড়া, খুলনার ময়ূর, হবিগঞ্জের খোয়াই ও সোনাই; সিলেট অঞ্চলের সুরমা, পিয়াইন, বিবিয়ানা, বাসিয়া; চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ অঞ্চলের নবগঙ্গা; টাঙ্গাইলের লৌহজং, লাঙ্গুলিয়া; ঢাকা অঞ্চলের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বংশী; কক্সবাজারের বাঁকখালী; ময়মনসিংহ অঞ্চলের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র; রংপুরের ঘাঘট, ইছামতী; দিনাজপুরের পুনর্ভবা; বগুড়ার করতোয়া; নওগাঁ-জয়পুরহাটের ছোট যমুনা, নাটোরের নারোদ, কুড়িগ্রামের সোনাভরি, বরিশাল অঞ্চলের সন্ধ্যা, ফরিদপুরের কুমার, সাতক্ষীরার আদি যমুনা, যশোরের কপোতাক্ষ ও ভৈরব, নরসিংদী অঞ্চলের হাড়িধোয়া, গাজীপুরের চিলাই। ৩৭ নদ-নদীতে তিন ধরনের দখল রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে স্থায়ী আবাসন ছাড়াও সরকারি অপরিকল্পিত স্থাপনার মাধ্যমেও নদ-নদী দখলের শিকার হচ্ছে। এমন দখলের শিকার বৃহত্তর রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলের বড়াল নদী।
বিশিষ্ট নদী গবেষক শেখ রোকন ইনকিলাবকে বলেন, ৯০-এর দশক থেকে নদ-নদীতে দখল ও দূষণ বেড়েছে। একই সময়ে পরিবেশ ও নদী সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা প্রণীত ও নতুন নতুন সংস্থা গঠন হলেও দখল বা দূষণ হ্রাসে দৃশ্যত কোনো প্রভাব পড়েনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রতি বছরই নদীতে দখল উচ্ছেদ অভিযান চলে। এসব অভিযান অনেকটা লোক দেখানো। উচ্ছেদের পর আবার নদী বেদখল হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।