Inqilab Logo

বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তাকদীরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:১০ এএম

আরবী তাকদীর শব্দটি কাদর শব্দমূল হতে উৎসারিত। কাদর অর্থাৎ আল্লাহপাকের সিদ্ধান্ত ও পরিমাণ অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। সুতরাং তাকদীরে কোনো পরিবর্তন হবার নয়। এতদর্থে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাকদীরের ওপর রাজি-খুশি থাকা ফরজ।
মাখলুকের স্তর ও শান অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, যা অস্তিত্ব লাভ করে, মাখলুককে স্থান-কাল যা পরিবেস্টন করে, মাখলুকের ওপর শাস্তি-শান্তি যা প্রয়োজন হয়, এ সব কিছুর নির্ধারনই হলো তাকদীর। (ক) শরহে ফিকহে আকবার: পৃ. ১৩, (খ) লিসানুল আরব:খন্ড ৫, পৃ. ৮৭, (গ) শরহুল মাকাসিদ: খন্ড, পৃ. ৮৬)।
তাকদীর শব্দ মূলের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পরিমাণ করা, নির্ধারণ করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় তাকদীর বলা হয়, যা কিছু অদ্যাবধি সংঘটিত হয়েছে, যা কিছু হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সবই আল্লাহপাক অবগত আছেন এবং তার অবগতি ও নির্ধারণ হিসেবে সব কিছুই হচ্ছে এবং হবে।
একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, আল্লাহপাক যা মঞ্জুর ও অনুমোদন করেন তাই হয় এবং যা তার নিকট মঞ্জুর হয় না, তা বাস্তবায়িত হয় না। এতদ সম্পর্কে আল-কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ক. আল্লাহপাক যা ইচ্ছা তাই করেন। (সূরা বুরুজ: আয়াত ১৬)। খ. তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা ও পছন্দ করেন, তাই সৃষ্টি করেন। (সূরা কাসাস: আয়াত ৬৮) গ. শরহে আকীদায়ে সিফারানিয়্যাহ এর দ্বিতীয় খন্ড ১৫৫-১৫৬ পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহপাকের ইচ্ছা তার ইলম ও জ্ঞানের অনুগামী। অতএব আমাদের নিকট যা কিছু সম্ভব ও সৃষ্ট তার কোনো কিছুই আল্লাহর ইরাদা বা ইচ্ছা ছাড়া অস্তিত্ব লাভ করতে অথবা অস্তিত্বহীন হতে পারে না।
বস্তুত: সৃষ্ট জগতে ভালো-মন্দ সবকিছু আল্লাহপাকের ইলম ও পরিমাপ মতো হয়। ভালো-মন্দ কোনো কিছুই আল্লাহপাকের ইলম ও পরিমাপের বাইরে নয়। আল্লাহপাক আল-কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘আমি সবকিছু তাকদীর (পরিমাপ) মত সৃষ্টি করেছি। (সূরা আল কামার : আয়াত ৪৯)। সুতরাং আল্লাহপাকের সিদ্ধান্ত ও পরিমাণ অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই বিশ্বজগতের বিশাল কারখানা সৃষ্টি করার পূর্বে আপন আযালী বা আদি ইলমে তার পরিকল্পনা ও চিত্র বানিয়েছেন। শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সকল বস্তু/বিষয়ের পরিমাপ/পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। এই চিত্র তৈরি ও পরিমাণ নির্ধারণকেই তাকদীর নামকরণ করা হয়েছে। আর সেই অনুযায়ী বিশ্বজগতের নির্মাণ ও সৃষ্টিকে আল-কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘কাযা’।
সুতরাং এই চিত্র ও তার বাস্তবায়নকেই ‘কাযা ও কাদর’ বলা হয়। আল-কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ক. আল্লাহর নির্দেশ ও সৃষ্টি নির্ধারিত ও পরিমাপমত। (সূরা আল আহযাব : আয়াত ৩৮)। খ. আল্লাহপাক যখন কোনো বিষয়ের বাস্তবায়ন ইচ্ছা করেন, তখন বলেন, হও, সাথে সাথে তা হয়ে যায়। (সূরা আল-বাকারাহ: আয়াত ১১৭)।
এই নীতিমালার সহজ ও সরল বিশ্লেষণ শরহু ফিকহে আকবারের ৪১ পৃষ্ঠায় এভাবে করা হয়েছে যে, তাকদীর হল বান্দাহ থেকে যা সংঘটিত হয় আর তা আল্লাহপাকের আদী ইলমে নির্ধারিত, চাই তা শুভ হোক বা অশুভ, তিক্ত হোক বা মিষ্ট। আর তা আল্লাহপাকের সৃষ্টি ও ইচ্ছাতে বাস্তবতা লাভ করে। আল্লাহপাক যা ইচ্ছা করেন তা বাস্তবায়িত হয়, যা ইচ্ছা করেন না, বাস্তবায়িত হয় না। সুতরাং কাদর হলো ইজমালী হুকুম আর কাযা তাফসিলী হুকুম।
প্রকৃতপক্ষে তাকদীর মেনে নেয়ার ফলে মানুষ জড় পদার্থে পরিণত হয় না। বরং তাতে সংকল্প ও স্বাধীনতার সিফাত অক্ষুণœ থাকে। যেমন প্রত্যেক মানুষ এ কথা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করছে যে, সে নিজ স্বাধীনতায় যা করতে চায়, তা করে, আর যা করতে চায় না, তা করে না।
এই নিরীখে বান্দাহ জড় পদার্থতুল্য কিংবা ‘বান্দাহ স্বীয় কর্মের স্রষ্টা’ মতবাদদ্বয় ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন। মোদ্দা কথা হল, বান্দাহর কর্ম, সৃষ্ট ও অস্তিত্ব দানের দিক হতে আল্লাহপাকের কুদরতের অধীন, আর অন্য সম্পর্কের দিক হতে থাকে আমরা অর্জন বা ইকতিসাব বলি, তা বান্দাহর শক্তি সামর্থের সাথে সম্পৃক্ত।
সুতরাং আল্লাহ খালিক (সৃষ্টা) আর বান্দাহ কাসিব, লাভকারী বা অর্জনকারী। (শরহুল মাকাসিদ: খন্ড ৩, পৃ. ১৬৬-১৬৭)। আর বান্দাহ স্বাধীন। ভালো ও মন্দ তথা আনুগত্য ও বিরোধীতা প্রকাশে সক্ষম। সকল দিক থেকে মজবুর বা সম্পূর্ণ ক্ষমতা শূন্য জড় পদার্থ তুল্য নয়। তবে তাওফীক আল্লাহপাকের পক্ষ হতেই আসে। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ: খন্ড ১, পৃ. ১৫৩)।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফরজ

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
৩১ আগস্ট, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন