পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইট-পাথরের খাঁচায় বন্দী শহর-নগরের জীবনযাত্রা। শহুরে জীবন যেন ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখী’। খোলা আকাশতলে সবুজ পৃথিবীর মায়াভরা প্রকৃতির কাছে নিজেকে সপে দিয়ে শহুরে যান্ত্রিকতার ঘুরপাকে ‘রোবট’ মানুষেরা চায় বাঁধনমুক্ত হতে। কিন্তু চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আয়-রোজগার, সন্তানদের পড়াশোনা ইত্যাদি মিলিয়ে পিছুটানের কারণেই শহর-নগর-শিল্পাঞ্চলের নাগরিকরা পল্লী-গাঁয়ে মায়ের কোলে আর ফিরে যেতে পারেনা। কিংবা পারলেও কদাচিৎ। তাই বলে কী শহর-নগরবাসীর কাছে গ্রামবাংলার মায়া-মমতা কেবলই স্মৃতি?
ঠিক তাও নয়। কেননা ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শহর-নগরে ইট-পাথরের যান্ত্রিক জীবনকে বদলে ফেলে অতীতকে ফিরে পেতে চেয়ে বলেছেন, “দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর”। পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তার ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতায় আকুতি করেছেন- “তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমদের ছোট গাঁয়, গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়; মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি, মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি; মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভায়ের স্নেহের ছায়”।
বন্দরনগরী ও দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের কর্মব্যস্ত প্রাণকেন্দ্রের কয়েকটি সড়কে দিনে-রাতে হাজারো মানুষের কোলাহল। এরই মাঝেও তারা চলতি পথে ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ায়। হরেক যানবাহনে আরোহীদের হঠাৎ করে চোখ আটকে যাবেই। সড়কদ্বীপ (আইল্যান্ড), সড়ক বিভাজক (রোড ডিভাইডার) ও সড়কের মোড়গুলোতে আবহমান গ্রামবাংলার ষড়ঋতুর রূপ-নিসর্গ শোভা পাচ্ছে। নগরে গ্রামবাংলার অন্যরূপ। ছোট বিলবোর্ড আকৃতির মার্বেল পাথর ও টাইলসের প্লাটফরমের ওপর শিল্পীর সুনিপূণ হাতে ঝকঝকে চিত্রশিল্পে তুলে ধরা হয়েছে- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। বাংলার এই ছয়টি ঋতুর বিবর্তন ও মানুষের জীবনধারাকে এতে আকর্ষণীয়ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যে কোনো নগরবাসীকে শহর-নগর ছেড়ে নাড়ির টানে শিকড় পানে ছুটে যেতে উদ্বুদ্ধ করে তুলবে। মন-মননে এনে দেবে আবেগ আর অনাবিল প্রশান্তি।
চট্টগ্রাম মহানগরীর লাভ লেইন মোড় থেকে নূর আহম্মদ সড়ক-কাজীর দেউড়ী আউটার স্টেডিয়াম এলাকা পর্যন্ত সড়কের বিভাজক ও সড়কদ্বীপের মাঝখানে অনেকগুলো পয়েন্টে গ্রামবাংলার ষড়ঋতুর নৈসর্গিক দৃশ্য এভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নগরবাসীর উদ্দেশে। আর এই ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল উদ্যোগটি সদ্য বাস্তবায়ন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। নগরকেন্দ্রের এই সড়কগুলো ঘুরে গেলে শহুরে নাগরিকরা এবং দেশ-বিদেশের পর্যটকগণ সত্যিকারের গ্রামবাংলাকে খুঁজে পাবেন চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ত এলাকাটিতে। এখানকার সড়ক বিভাজক ও সড়কদ্বীপে সবুজায়ন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সড়কের দুই পাশসহ পুরো এলাকা দৃষ্টিনন্দন সাজে সজ্জিত করার কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সৃজনশীলতার মূলে রয়েছে সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের সেই ‘থিম’ বা প্রতিপাদ্য ‘গ্রিন সিটি- ক্লিন সিটি’।
পাথর ও টাইলসে নজরকাড়া চিত্রশিল্পে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের গ্রীষ্ম ঋতুতে তীর্যক রৌদ্রকরোজ্বল খটখটে আবহাওয়া। বর্ষাকালে পানিতে টলমল জলাশয় থেকে সলাজ কিশোরীর শাপলা সংগ্রহ, শরৎ ঋতুতে চপল শিশুদের কাশবনে ফুল সংগ্রহে ছোটাছুটি, হেমন্তে কৃষকের ঘরে নবান্ন প্রস্তুতি, শীতকালে খেজুর গাছের মধুরস সংগ্রহ এবং বসন্তে কোকিল ও বসন্ত বাউড়ীর গানে গানে ঋতুরাজকে আবাহন। প্রতিটি ঋতুর দুইটি করে শিল্পচিত্র শোভা পাচ্ছে। নূর আহম্মদ সড়কে পথচারী শাহীনুল ইসলাম ও আকমল হোসেন এই প্রতিবেদককে বললেন, রোড ডিভাইডার ও আইল্যান্ডের ওপর অপরূপ এই দৃশ্যগুলো চোখে পড়লো। দাঁড়িয়ে দেখলাম কিছুক্ষণ। মন ভরে গেলো। সত্যিকারের বাংলাদেশের গ্রাম যেন ভেসে উঠেছে চোখের সামনে। এটি সারাদেশের শহর-নগরের জন্য অনুসরণীয় একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
নতুন প্রজন্মের জন্য এই উপহার : মেয়র নাছির উদ্দীন
ব্যস্ত যান্ত্রিক নগর জীবনের মাঝে আবহমান গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপ ও বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তোলার এই উদ্যোগটি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য উপহার একথা বললেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমরা ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যকে তুলে এনেছি। চট্টগ্রাম প্রাকৃতিকভাবেই একটি নান্দনিক শহর এটি আমরা নগরবাসী, পর্যটক ও বিশেষ করে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতে চাই। আমরা আরও উদ্যোগ নিচ্ছি। সৌন্দর্যবর্ধনের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। তিনি বলেন, নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এলাকা, নূর আহম্মদ সড়কের বিভাজক ও বিভিন্ন সড়কদ্বীপ, মোড়গুলো দীর্ঘদিন যাবৎ বলতে গেলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল।
মেয়র জানান, আমরা সেখানে সবুজায়নের সাথে সাথে সৌন্দর্যবর্ধন করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা প্রশংসার দাবি রাখে। যান্ত্রিক নগরীতে বাংলাদেশের ষড়ঋতু বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলার ফলে নগরবাসী তার শিকড়ের টানে গ্রামবাংলা মায়ের প্রতি আরও আকৃষ্ট হবেন, বারে বারে ছুটে যেতেই মন চাইবে। বর্তমানে নাগরিক জীবনের চাপে আমরা অনেকেই ইংরেজি তারিখ মনে রাখি, অথচ বাংলা সন-তারিখ বলতে পারিনা। এমনটি ছয়টি ঋতুর ছয় ধরনের রূপ, রঙ ও বৈশিষ্ট্যের কথাও মনে রাখিনা। আমরা আমাদের প্রাণ গ্রামবাংলাকে নগরবাসীর সামনে সজীব ও প্রাণবন্ত করেই ধরে রাখতে চাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।