বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজিদে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও প্রতিপাদ্যের দিক দিয়ে যেহেতু ভীতি প্রদর্শন ও সুসংবাদ দান, উৎসাহ দান ও সতর্কীকরণ এবং হেদায়েত ও সদুপদেশলিপি। দর্শন বা তর্কশাস্ত্রের পুস্তক নয়। এতে আখেরাত সংক্রান্ত যুক্তি-তর্কের চেয়ে অনেক বেশি করে আখেরাতে ঘটিতব্য ঘটনাবলি বিবৃত করা হয়েছে। সেসব বিষয়ের আলোচনায় একজন সুষ্ঠু বিবেকবান লোকের অন্তরে আখেরাতের চিন্তা-ভাবনা এবং আল্লাহভীতি সৃষ্টি হতে পারে। বরং বলা যায়, কোরআন মাজিদের বিরাট একটি অংশ এ বিষয়ের সাথেই সম্পর্কিত।
আখেরাতের ধাপসমূহ : আসলে মৃত্যু হলো এ জগৎ-সংসার থেকে আখেরাতের দিকে যাত্রা করার নাম। এ দিক দিয়ে মৃত্যুর মাধ্যমেই যেন আখেরাতের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু মৃত্যুর দিন থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত যে সময়, যাকে ‘বরযখ’ নামে অভিহিত করা হয়, তার সম্পর্ক আখেরাতের বিবেচনায় অনেকটা তেমনি যেমন পার্থিব এ জগতের সাথে গর্ভকালীন সময়ের সম্পর্ক।
অর্থাৎ, আখেরাতের প্রকৃত জীবন যদিও কেয়ামতের মাধ্যমেই শুরু হবে এবং হিসাব-নিকাশ তথা শান্তি-সাজা ও দান-প্রতিদান কিয়ামতের পরই প্রকাশ পাবে; কিন্তু মৃত্যু থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত সময়কাল তার জন্য তেমনি ভ‚মিকা বা অন্তর্বর্তীকালীন ধাপ, যেমন এ জগতে আগমনের প্রাক্কালে প্রত্যেক লোকেরই কিছু সময় মাতৃজঠরে অবস্থান করতে হয়। সেজন্যই কোরআন মাজিদে মৃত্যুর সময় থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তীকালীন বরযখি কালের আলোচনা খুবই অল্প ও সংক্ষেপে করা হয়েছে।
অবশ্য কিয়ামত, হাশর-নশর, হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-দোজখের সওয়াব ও আজাবের আলোচনা শত শত জায়গায় এবং এমন বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে, যা মানবান্তরে আখেরাতের চিন্তা-খোদাভীতি সঞ্চার করার জন্য একান্ত যথেষ্ট, বরং যথেষ্ট অপেক্ষাও অনেক বেশি। নিঃসন্দেহে এ বৈশিষ্ট্য কোরআন নিজেই নিজের দৃষ্টান্ত। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াত এখানেও পাঠ করে নিন।
সূরা মু’মিনুনের এক স্থানে মোটামুটিভাবে পরকালের এই ধাপগুলোর আলোচনা করা হয়েছে এভাবে, ‘এমনকি সেসব অপরাধীর মধ্য হতে যখন কারও মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, হে আমার পরওয়ারদেগার, আমাকে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে দাও, যেন আমি যা কিছু ছেড়ে এসেছি, তাতে নেক আমল (সৎকর্ম) করতে পারি এবং জীবনে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি করেছি, সেগুলোর ক্ষতিপূরণ করতে পারি।
আল্লাহ বলেন, কক্ষণও নয়; এটি শুধু কথার কথা যা সে বলছে। (মৃত্যুর পর কক্ষণও কারও প্রত্যাবর্তনের অনুমতি নেই।) বস্তুত তাদের পেছনে একটি আড়াল রয়েছে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত। (অর্থাৎ, মৃত্যুর পর হাজার অনুনয়-বিনয় সত্তে¡ও তাকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হবে না; বরং কিয়ামতের দিন পর্যন্ত এক বন্দিদশায় এবং অনেকটা যেন হাজতবাসে থাকবে।)
তারপর যখন শিঙায় ফুঁ দেয়া হবে এবং কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, তখন সেদিন তাদের যাবতীয় পারস্পরিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে। তাদের কেউ কারো অবস্থা জিজ্ঞেস করার থাকবে না। (সেদিন প্রত্যেকের বিচার হবে তার কৃতকর্মের ওপর।) সুতরাং যাদের সৎকর্মের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সেদিন সফল ও কৃতকার্য।
পক্ষান্তরে যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারাই হবে সেসব লোক যারা নিজেদের ধ্বংস করেছে। তারা জাহান্নামেই পড়ে থাকবে। আগুন তাদের মুখমন্ডলকে ঝলসে দেবে, আর তাদের চেহারা হবে বীভৎস।’ (সূরা মু’মিনুন: আয়াত ৯৯-১০৪)।
সূরা ক্বাফে একই জায়গায় মৃত্যু ও কিয়ামতের উল্লেখ এভাবে করা হয়েছে, ‘(প্রত্যেক লোকই সতর্ক হয়ে যাক) মৃত্যুযন্ত্রণার সময় আল্লাহর ফয়সালা অনুযায়ী নিকটবর্তী হয়ে গেছে। এ মৃত্যু হলো সে বিষয়, হে মানুষ, যা থেকে তুমি আঁতকে উঠতে এবং পালাতে থাকতে। (তদুপরি এ কথা মনে করো না যে, মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে গেছে; বরং যে কিয়ামতের কথা তোমাদের শোনানো হচ্ছে, তা অবশ্যই নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হবে। সব মানুষকে পুনরায় জীবিত করে তোলার জন্য) তখন শিঙা ফুঁকা হবে। আর তাই হলো ভর্ৎসনা দিবস।
সেদিন প্রত্যেক লোক আখেরাতের আদালতে এমনভাবে হাজির হবে যে, তার সাথে তাকে ধরে আনার জন্য একজন ফেরেশতা থাকবে, আরেকজন থাকবে সহকারী সাক্ষী হিসেবে। এদের মধ্যে যারা অস্বীকারকারী ও আখেরাত বিস্মৃত থাকবে তাদের বলা হবে, তোমরা বিচার এবং এ দিবসের ব্যাপারে বেখবর ও গাফেল ছিলে। আমি তোমার চোখের ওপর থেকে এমন আবরণ তুলে দিয়েছি (অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতে, এখন সেগুলো তোমাদের চোখের সামনে উপস্থিত)।’ (সূরা ক্বাফ: আয়াত ১৯-২২)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।