Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহাড়ে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

সিলেটের উল্টো চিত্র চট্টগ্রামে : নির্বিচারে দখল : কেটে সাবাড় নেই কোনো রিসোর্ট

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

প্রাকৃতিক অবয়ব আর বৈশিষ্ট্য অক্ষন্ন রেখেই যে পাহাড়-টিলায় বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় তা দেখার জন্য নেপাল, ভুটান বা মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশের পুণ্যভূমি সিলেটেই রয়েছে এ ধরনের অসংখ্য রিসোর্ট। গাছ-গাছালিতে ঘেরা ছোট্ট একটি পাহাড়কে কোটি টাকার সম্পদে পরিণত করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দূরদৃষ্টি উন্নত রুচিবোধের কারণে এসব পাহাড়-টিলায় তারকা হোটেল এখন দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে এসব রিসোর্ট।
তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে। পাহাড়কে ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে নীতি-নির্ধারকেরাও এ ব্যাপারে অনেকটা নির্বিকার। ব্রিটিশ আমলে কিছু পাহাড়ের চূড়ায় সরকারি অফিস-আদালত আর অফিসারদের বাংলো তৈরি করা হয়। পরীর পাহাড় হিসেবে পরিচিত কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাহাড়, ডিসি হিলসহ অনেক পাহাড় এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর বেশিরভাগ পাহাড় বেদখল হয়ে গেছে। যেসব পাহাড় অবশিষ্ট আছে সেগুলোকে সুরক্ষা করে পর্যটনসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার করার মতো কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটকদের রুচিতেও বৈচিত্র্য এসেছে। তারা ইট পাথরের নগরের চেয়ে প্রাকৃতিক এবং নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। আর এ কারণে পাহাড়, টিলা আর কোলাহলমুক্ত এলাকায় গড়ে উঠছে পর্যটনকেন্দ্র। চট্টগ্রামে এমন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ফয়’স লেকে একটি বেসরকারি সংস্থার রিসোর্ট ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের পর্যটন আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। মহানগরী এবং আশপাশে একেকটি পাহাড়, টিলা হতে পারে পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অথচ এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
এ অঞ্চলে নির্বিচারে চলছে পাহাড় নিধন। নির্মাণকাজ ও পুকুর ডোবা ভরাট, ইট তৈরির মতো তুচ্ছ কাজে ধ্বংস করা হচ্ছে মহামূল্যবান এই প্রাকৃতিক সম্পদ। পাহাড় ধ্বংসের ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, বিনষ্ট হচ্ছে জীব-বৈচিত্র্য। বর্ষায় পাহাড় থেকে নেমে আসা কাদা-মাটির প্লাবণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। প্রতিবছর পানিবন্ধতায় বিনষ্ট হচ্ছে শত শত কোটি টাকার মালামাল। প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসাবে প্রতিবছরই পাহাড় ধসে গণমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবুও থেমে নেই পাহাড়খেকো ভ‚মিদস্যুদের বেপরোয়া তান্ডব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ তান্ডব থামানো না গেলে ভবিষ্যতের জন্য বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে গত কয়েক বছরে কত সংখ্যক পাহাড় ধ্বংস করা হয়েছে তার হিসাব কারও জানা নেই। তবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মহানগরী ও শহরতলীর আশপাশের এলাকায় গত ২০ বছরে ছোট বড় শতাধিক পাহাড়, টিলা নিধন করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায়ও অনেক পাহাড়, টিলা নির্বিচারে উজাড় করা হয়েছে। পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে শুরু করে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতেও পাহাড় ধ্বংসের তান্ডব চলছে। অথচ পরিকল্পিতভাবে এসব পাহাড় সুরক্ষা করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার পাশাপাশি পাহাড়কে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেত।
পাহাড়কে প্রকৃতির বিরাট মূল্যবান সম্পদ উল্লেখ করে স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, এ সম্পদ ধ্বংস করে আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনছি। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ পাহাড় সুরক্ষা করে এ সম্পদকে কাজে লাগিয়েছে। পাহাড়ের বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে এটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আবার কোথাও পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলে কোটি কোটি টাকা আয় করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়কে ঘিরে পর্যটনসহ অর্থনীতির ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও তার কোনটাই কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, কঠোর আইন থাকার পরও এখনও প্রকাশে পাহাড় কাটা চলছে। নগরীর নিকটবর্তী জঙ্গল সলিমপুরে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ৪ লাখ মানুষ বসবাস করছে। পাহাড় ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর পানিবদ্ধতার মূলেই রয়েছে নির্বিচারে পাহাড় নিধন। পাহাড় কাটা বন্ধ করা না গেলে পানিবদ্ধতা দূরীকরণে ৬ হাজার কোটি টাকার যে মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেটিও কাজে আসবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রকৃতি বিনাশী এ পাহাড় নিধন বন্ধ করা যাচ্ছে না।
স্থপতি নাইমুল ইসলাম খান বলেন, এখনও উদ্যোগ নিলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনেক পাহাড় সুরক্ষা করা যায়। সিলেটেও পাহাড়, টিলা নিধন হয়েছে। তারপরও কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে সেখানে অসংখ্য পাহাড় রক্ষা করা গেছে। এসব পাহাড়কে ঘিরে পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। নেপাল, ভুটানসহ বিশ্বের অনেক দেশে পাহাড়কে সুরক্ষা করে বিপুল অর্থ আয় করা হচ্ছে। একেকটি পাহাড় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বিরাট ভ‚মিকা রাখতে পারে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটের মতো এখানেও পাহাড়, টিলাকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নামতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়

২০ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ