পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দখল-দূষণের কবলে পড়ে বিলিন হয়ে যাচ্ছে সাভারের ঐতিহ্যবাহী বংশী নদী। এ নদীর বিরাট এলাকা প্রভাবশালীদের দখলে থাকলেও উদ্ধারে উদ্যোগ নেই। সরকারিভাবে নদী দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে নোটিশ দেওয়া হলেও তারা এতে কর্ণপাত করছেন না। বরং নদীর দুই পাড়ে সমানতালে চলছে দখল ও ভরাট। নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। নদীর মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে দেদারছে।
নদীর সাভার থানা ঘাট থেকে শুরু করে নামাবাজার হয়ে বাঁশপট্টি পর্যন্ত অংশ এখন দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। এসব নিয়ে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করলেও সুফল মিলছে না। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাভার ভূমি অফিসের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ৬৫ জন নদী দখলদারদের তালিকায় সাভার থানা মুক্তিযোদ্ধা উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি, সাভার বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে।
সরেজমিনে সাভার নামাবাজার এলাকায় দেখাগেছে, নদীর তীর দখল করে কয়েকশ’ পাকা ও আধাপাকা বসতবাড়ি ও দোকান-পাটের মতো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দখলদারের মধ্যে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রভাবশালী নেতারাও রয়েছেন। তারা নদীর তীর দখল করে ইট, খোয়া বালু ফেলে ছোট ছোট কারখানা গড়ে তুলেছেন।
আবার শিল্পবর্জ্যরে দূষণের কারণে বংশী নদীর পানি কালচে রঙ ধারণ করেছে। নদী তীরবর্তী যেসব মানুষ নদীকে কেন্দ্র করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করত, নদীটির মরণদশায় তারা এখন দীর্ঘদিনের পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। নদীর তীর দখল করে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে নদী তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদীটি এখন এলাকার কৃষি পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যাহত দখল আর দূষণের কারণে এক সময়ের আশীর্বাদস্বরূপ এ নদী এখন সাভারবাসীর দুঃখ হয়ে উঠেছে। সাভার ও তার পাশ্ববর্তী ধামরাইবাসীর ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, কৃষিজমিতে সেচব্যবস্থা ও দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষার ক্ষেত্রে বংশী নদীর ব্যাপক ভ‚মিকা ছিল।
সাভারের পোড়াবাড়ী থেকে শহীদ রফিক সেতু পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় অবৈধ দখলের যেন মহোৎসব চলছে। এই নদীটি সাভারের হেমায়েতপুর এলাকা থেকে ধামরাই উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, নদীর অস্তিত্ব না থাকলে গোটা সাভার ও পাশ্ববর্তী ধামরাই উপজেলায় সেচ-কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। পানির হাহাকার দেখা দিবে। মরুভ‚মিতে পরিণত হবে এ দুই উপজেলা।
সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রনব কুমার ঘোষ, ভারপ্রাপ্ত কানুনগো মো. সাইয়েদুল ইসলাম খান, সার্ভেয়ার মো. আব্দুল খালেক খানের স্বাক্ষরিত নদী দখলদারদের নামের তালিকাটি ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিসে পাঠানো হয়েছে। অবশ্য ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান মোল্যার নির্দেশে অনুরুপ তালিকা তৈরি করে শোকজ নোটিশ দেওয়া হলেও কেউ তা আমলে নেয়নি। পরে ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসে তালিকার ওই ফাইল চাপা পড়ে যায়।
এদিকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাভারের খাল-বিল, জলাশয় রক্ষাসহ আমিনবাজারে ওয়েস্ট ডাম্পিং সাইট কর্তৃক সৃষ্ট সমস্যা ও দূষণরোধে করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বলা হয়, নদী-নালা, খাল-বিল, কৃষি ও মৌসুমী ফলে সমৃদ্ধ সাভার এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দূষণের ফলে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নদী ও খালের পানি। এর প্রভাবে চর্ম ও হাপানিসহ নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। অস্তিত্ব হারিয়েছে বংশী, তুরাগ ও ধলেশ^রী নদীসহ খাল-বিল। অপরিকল্পিত নগরায়ন, দখল আর যত্রতত্র গড়ে উঠা শিল্প কারখানা এ জন্য দায়ী।
অ্যাম্বাসী অফ দ্যা ফেডারেল রিপাকলিক অফ জার্মান ও সিটিজেন্স মুভ টু প্রোটেক্ট আরবান ওয়েটল্যান্ডের সহযোগীতায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), নিজেরা করি, এএলআরডি ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় বেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, অবৈধভাবে গড়ে উঠা অননুমোদিত হাউজিং প্রকল্প, কল-কারখানা ও বিনোদন কেন্দ্র সাভারের তুরাগ নদীকে দখল করে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্রুটিযুক্ত সীমানা নির্ধারণ নদী দখলদারদের দখলের পথকে আরো প্রশস্ত করেছে।
সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লা বলেন, এক শ্রেণির প্রভাবশালী সাভারের নদী-নালা ও খাল দখল করে চলেছে। এদের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দখল বন্ধ হবে না।
সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন খান নঈম বলেন, এক সময় সাভার ছিল নদী-নালা, খাল-বিল, কৃষি ও মৌসুমী ফলে সমৃদ্ধ। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্প কারখানার কারণে সেই সাভার এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম শামসুল হক বলেন, দখলের কারণে সাভারের অন্তত ১২টি খাল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বংশী, তুরাগ ও ধলেশ্বরী নদী দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বড় বড় ভবন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামেও দখল করা হয়েছে বংশী নদী।
আলোচনা সভায় বংশী নদীর দখলদারের একটি তালিকা তুলে ধরা হয়। ওই তালিকায় সরকারি দলের নেতাসহ একধিক জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে। উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির পক্ষে সভারের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে ওই তলিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যাতে ৬৫ জন দখলদারের নাম রয়েছে।
বাংলাদেশ নদী রক্ষা আন্দোলনের এক নেতা জানান, যে কোনো নদীর অস্তিত্ব হচ্ছে তল, ঢাল আর তীর। সাভারে বংশী নদীর অধিকাংশ এলাকায় কোনো তীর চোখে পড়েনি। দখল আর দূষণে নদীটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদী পরিদর্শন করে আরও দেখা গেছে, অবৈধ দখলদারদের বেশির ভাগই প্রভাবশালী বাসিন্দা।
এদিকে সাভারের নয়ারহাট এলাকায়ও নদী দখলের ভয়াবহ বেশ কিছু চিত্র চোখে পড়ে। নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া বালু ব্যবসায়ীরাও নদী দখল করে ব্যবসা করছেন। নদী দখল করে নতুন নতুন বিভিন্ন স্থাপনা বসানো হয়েছে। তবে ভ‚মি অফিস নদী দখল করেই এসব স্থাপনা করা হয়েছে বলেও স্বীকার করছেন। কিন্তু তারা রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
বাইপাইলে বংশী নদীর শাখা খালটি ‘নলীর পাড়’ নামে পরিচিত। খালটি ৬০ফিট প্রসস্থ্য থাকলেও দখলের কারনে তা ১০/১২ফিটে পরিনত হয়েছে। তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল করিম ভুইয়া জানান, এখালটি ৬০ফিট ছিল। দখলের কারণে এখন ১০/১২ফিটে পরিণত হয়েছে। আমরা এলাবাসীর পক্ষ থেকে খালটি পুনরুদ্ধারের দাবী জানাই।
সূত্রমতে; বংশী নদীর সঙ্গে ঢাকার আশপাশের অন্যান্য নদীর যোগাযোগ থাকায় বংশী নদীর দূষণ অন্যান্য নদীতেও ছড়িয়ে পড়ছে। বংশী নদীকে দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা না গেলে সাভার ও পাশ্ববর্তী ধামরাই উপজেলার সেচব্যবস্থাসহ পুরো পানি ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।