পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/আজ বসন্ত’ (সুভাষ মুখোপাধ্যায়)। কবির এই অনুভূতি ধরা দিয়েছিল গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আকাশ-বাতাস-বনবাদারে। সকালের স্নিগ্ধ বাতাস। হালকা ঠানন্ডার অনুভূতি। গাছগাছালি ছেয়ে আছে ফুলে। নতুন গজানো সবুজ পাতায় বসন্তের আবাহন। পহেলা ফ্লাগুনে প্রকৃতি সেজে উঠে নানা রঙে। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও ছড়িয়ে পড়ে বসন্তের রঙ। বসন্তকে বরণ করে নিতে প্রকৃতির রঙে রঙ মিলিয়ে বাসন্তি শাড়ী পড়ে টায়রা মাথায় নারীশিশু-কিশোর কিশোরীরা মেতে ওঠে উৎসবে।
বাংলা একাডেমী আয়োজিত বইমেলায় ঋতুরাজ বসন্ত যেন অন্যরকম ভাবে ধরা দেয়। ললনাদের পরনে বাসন্তি রঙের শাড়ীতে লাল পাড় আর তরুণ-যুবকদের হলুদ পাঞ্জবী, কোর্তা গায়ে দিয়ে বসন্তের প্রথম দিনে জমজমাট হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চত্বর, শাহবাগ, সোরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা আর রমনার সবুজ প্রান্তর। একই চিত্র দেখা গেছে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেটে।
প্রতিবারই ফাগুনের প্রথম দিনে বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকায় হয়েছে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান। বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় শুরু হয়ে দিনব্যাপী বসন্ত উৎসব চলে। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে জাতীয় বসন্তবরণ উদযাপন পরিষদ। বসন্তের সাজে যেন সেজেছিল সংগীত শিল্পীরাও। অনুষ্ঠান শুরু হয় ধ্রুপদী সুরের মূর্ছনায়। একক আবৃত্তি ও একক সংগীতের মধ্য দিয়ে চলছে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। সারাদিন চলে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে দলীয় নৃত্য ও আদিবাসীদের নাচ। এছাড়াও একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, বেলায়েত হোসেন ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। দলীয় পরিবেশনা করেন সুরতীর্থ, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ ও বাফা। বসন্ত বরণ উৎসব আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানজার আহমেদ সুইট সাংবাদিকদের জানান, বকুলতলায় সকাল ৭টা থেকে সকাল ১০টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বসন্ত উৎসব পালিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলা ছাড়াও পুরনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ও উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত মঞ্চেও পহেলা ফাল্গুন উদযাপন করা হয়।
বসন্তের সেই ছোঁয়া বিকেলে দেখা যায় প্রাণের উৎসব বইমেলাতেও। শাহবাগ মোড়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, টিএসসি, চারুকলার বকুলতলা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফাগুনের রঙ। সবুজে ঘেরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলায় ফাগুনের আগমনী ধ্বনি। চারুকলা ও রবীন্দ্র সরোবরের বসন্ত উৎসব ও শহীদ মিনারের সম্মিলিত জোটের একুশের অনুষ্ঠানমালার ভিন্নভিন্ন পথের বাসন্তী সাজের তারুণ্য সবশেষে এক পথে মিলিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলায়। বাসন্তী সাজের আনন্দে মেতে উঠে তরুণ-তরুণীর মন। ঝিরিঝিরি বাতাসে প্রফুলচিত্তে সকল জরাজীর্ণ মুছে ফেলে আনন্দে মাতছে কিশোর-যুবারা। মাথায় টায়রা ও বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে তরুণীদের মেলায় আগমন সে কথাই বলে যায়। দলবেঁধে শাড়ি পরে কেবল ঘুরে বেড়ানোর মধ্যই সীমাবদ্ধ থাকে না সেই আনন্দযাত্রা। চলে সেলফি তোলার হিড়িক। আনন্দ-হুল্লোড়ে মেতে উঠছে চারদিক। অনেকে আবার প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বই কিনছেন ইচ্ছেমতো। চোখে-মুখে সলজ্জ তৃপ্তির আভা।
চট্টগ্রাম শহরের সিআরবির শিরিষতলায় মঞ্চে একদল শিল্পীর নাচ চলে ‘আজ ফাগুনের আগুন লাগে পলাশে-শিমুলে’ গানের সঙ্গে। বাতাসে সুরে ঢেউ। ছন্দ আর নুপুরের ঢেউ পলাশ আর শিমুল ফুলে, গাছের শাখায়। ছায়া-সুনিবিড়, পাহাড় আর গাছ-গাছালি ঘেরা বন্দর নগরীর ভেতরে যেন একটুকরো ছোট্ট গ্রামে বসন্ত উৎসবে মেতে উঠে বাসন্তী শাড়ী ও হলুদ পাঞ্জাবী পরিহিত তরুণ-তরুণীরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত চট্টগ্রাম শহরে সৃষ্টি হয় ভিন্ন আমেজ। এদিকে বোধনের আয়োজনে ডিসি হিলের পরিবর্তে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আমবাগানের শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে বসন্ত উৎসব হয়েছে। এ ছাড়া এমএ আজিজ জিমনেসিয়ামে একুশে বইমেলা পরিষদ, চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে বসন্ত উৎসব পালিত হয় নগরের বিভিন্ন স্থানে।
রাজশাহীতে নানা আয়োজনে ঋতুরাজ বসন্ত বরণ করা হয়েছে। ‘মাতরে সবে আনন্দে রং বাহারি বসন্তে’ শ্লোগানে রাজশাহী কলেজের নজরুল চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। বসন্ত বরণ করতে নগরীর বঙ্গবন্ধু কলেজে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও বিভাগীয় শহর সিলেট, রংপুর, খুলনাসহ জেলা শহরগুলোতে পহেলা ফাল্গুন পালিত হয়।
‘হে কবি, নীরব কেন/ ফাগুন যে এসেছে ধরায়; বসন্তে বরিয়া তুমি/ লবে না কি তব বন্দনায়’ (সুফিয়া কামাল)। না কবিরা নীরব বসে নেই। তারা প্রকৃতি আর গণমানুষের মনন-চেতনা নয়; কবিরা ব্যস্ত ব্যাক্তি বন্দনা নিয়ে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।