পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমি মেঘনা পাড়ের ছেলে/ আমি মেঘনা নদীর নেয়ে/ মেঘনা নদীর ঢেউয়ের বুকে/ তালের নৌকা বেয়ে/ আমি বেড়াই হেসে খেলে’ (আহসান হাবীব)। কবির স্বপ্নের মেঘনা নদীর অবস্থা আগের মতো নেই। নদীখেকোদের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে নদীর পাড়ের ওপর। নদী দখল করে গড়ে তুলছেন শিল্প প্রতিষ্ঠান। শুধু দখল নয় মেঘনার টলটলে পানি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে কুচকুটে কালো রুপ ধারণ করেছে। ‘পানির অপর নাম জীবন’ মেঘনার সেই পানি উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের জন্য হয়ে পড়েছে বিষ। কিন্তু প্রশাসন নীরব।
১৫৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩৪০০ মিটার প্রস্থ মেঘনা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলায় প্রবাহিত। প্রকৃতিগত ভাবে সর্পিলাকার নদীটি নানান স্পটে দখল হয়ে গেছে। শুধু নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা এলাকায় নদী দখল এবং তীর ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন শিল্প প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছামতো নদী দখল করে নিচ্ছে। নদীখেকোদের কাছ থেকে ‘কিছু লেনাদেনার’ বদৌলতে স্থানীয় প্রশাসন নীরব রয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। সম্প্রতি সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও সচিব ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার সরেজমিন পরির্দশনে এসে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। নদী রক্ষা কমিটির নির্দেশনার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে একাধিক সূত্র ধরে জানা যায়। তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। তাদের অবহেলার কারনে নদী রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্থানীয় প্রশাসন অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যোরবাজার ঘাট এলাকায় অবস্থিত হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেটেড, মেঘনা ঘাট ও আনন্দবাজার এলাকায় মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানি, হোলসিম সিমেন্ট, আনন্দ শিপইয়ার্ড, ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স ও ইউনিক গ্রুপের সোনারগাঁ রিসোট সিটি, হাড়িয়া এলাকায় আমান সিমেন্টসহ ১০-১২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী দখলের সাথে জড়িত। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করেই এখনো প্রকাশ্যে চলছে নদী দখল। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় মেঘনা নদী দখলের শীর্ষে রয়েছে মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানি। মেঘনা ঘাট থেকে বারদী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার নদীর জমি দখল করেছে বিভিন্ন কোম্পনি। এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নদী দখলের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সোনারগাঁও উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, নদী দখলের অভিযোগে মেঘনা ঘাট এলাকার মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানি, ইউনিক প্রোাপার্টির সোনারগাঁ রির্জোট সিটি বৈদ্যেরবাজার এলাকায় হরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেটেড, মেঘনা ঘাট এলাকার হোলসিম সিমেন্ট, আনন্দ শিপইয়ার্ড, ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্সকে কৃষিজমি ও পাশ্ববর্তী মারিখালী নদী এবং সরকারী দুটি হালট দখল করে জোরপূর্বক বালু ভরাট করে দখলের অভিযোগে নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশের পরও নদীর জায়গা কোন কোম্পানি ছেড়ে দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিএম রুহুল আমিন রিমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নদী দখলের অভিযোগে ৭টি কোম্পানির বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় উচ্ছেদ অভিযান করা সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক গোলজার আলী বলেন, দখল হওয়ার নদীর জমি উদ্ধারের জন্য সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন বা ভূমি অফিস থেকে আমাদের কাছে কোন সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই লোকবলসহ সহযোগিতা করা হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিনুর ইসলাম বলেন, নদীর জায়গা দখল করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্র্তপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নদী রক্ষায় তাদের সঙ্গে আমরাও অভিযান চালিয়ে নদীর জায়গা উদ্ধার করা হবে।
ভারতের আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় নদীমার্তৃক বাংলাদেশে এমনিতেই নদী হারিয়ে যাচ্ছে। বাঙালীর আত্মপরিচয়ের শ্লোগান ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা/ তোমার আমার ঠিকানা। সেই ঠিকানার ‘মেঘনা নদী’ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদী নিয়ে দেশের সর্বচ্চো আদালত ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। তারপরও প্রশাসন নীরব। প্রশ্ন হচ্ছে নদীখেকোদের কড়ালগ্রাসে মেঘনা নদী কী হারিয়ে যাবে! #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।