বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এক তরুণীকে ডাকবাংলাতে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দুই এসআইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, সাটুরিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) মাজহারুল ইসলাম। দু’জনকে আদালতে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাটুরিয়া থানায় অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে। তার আগে দু’জনের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তখন দুই কর্মকর্তাকেই থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
মামলা হওয়ার পর রাতেই ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফর রহমান জানান, সোমবার রাত সাড় ৮টার দিক ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার সময় তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গাইনী কনসালটেন্ট নাসিমা আক্তার, ডেন্টাল সার্জন রফিকুল ইসলাম, রেডিওলজিস্ট হেলাল উদ্দিন ভূইয়া। চার সদস্য বিশিষ্ট এই মেডিকেল বোর্ড দ্রুত সময়ের মধ্য একটি প্রতিবেদন দেবে।
এদিকে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান জানান, ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর ওই তরুণী বাড়ি চলে গেছেন।
গত রোববার পুলিশ সুপারের কাছে ওই তরুণীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান ও ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হামিদুর রহমান সিদ্দীকী বিষয়টি নিয়ে সোমবার তদন্ত করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান জানান, সাটুরিয়া থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় নিয়ে আজ তদন্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির কাছে নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী তাঁর ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। দিনভর প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, ওই তরুণী পুলিশ সুপারের কাছে যে অভিযোগ করেছেন তাঁর সত্যতা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই তরুণী সাটুরিয়া থানায় এসআই সেকেন্দার ও এএসআই মাজহারুলকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করবেন সাটুরিয়া থানার (ওসি তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) রিফাত রহমান শামিম সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ বলে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত কমিটির সদস্যদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ওই তরুণী এবং এ ঘটনায় জড়িতদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরাধ করলে কোনো ভাবে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় এক তরুণীকে দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে সাটুরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাজহারুল ইসলাসের বিরুদ্ধে।
অস্ত্রের মুখে ওই তরুণীকে মাদক সেবনেও বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়ে। এ সময় পাশের আরেকটি রুমে আটকে রাখা হয় তরুণীর খালাকে।
এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর তাৎক্ষণিক ওই অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়ে।
নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর খালা জানায়, সাটুরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসঅাই) সেকেন্দার হোসেন আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকার সময় তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নিয়ে জমি কেনে। জমি বিক্রির লাভের অংশ তাকে দেওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে তিনি সেকেন্দার হোসেনের কাছে প্রায় তিন লাখ টাকা পাবে। কিন্তু টাকা শোধ না করে সেকেন্দার তাকে ঘুরাতে থাকে। সাটুরিয়া থানায় বদলি হওয়ার পরও তিনি সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সে তার এক ভাগ্নিকে (২০) সঙ্গে নিয়ে সাটুরিয়া থানায় যায়। সেখানে সেকেন্দার তাকে টাকা দেওয়া হবে জানিয়ে ডাকবাংলোতে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর সাটুরিয়া থানার এএসআই মাজহারুলকে সঙ্গে নিয়ে ডাক বাংলোতে যায় সেকেন্দার।
সে অারো জানায়, সেখানে দুই পুলিশ কর্মকর্তা টাকা দিতে অস্বীকার করে উল্টো হুমকি দেন। পরে তারা ডাকবাংলোর একটি কক্ষে ইয়াবা সেবন করে ও তার ভাগ্নিকে জোর করে ইয়াবা সেবন করায়। তারা তার ভাগ্নিকে সারারাত আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে টাকা দেওয়ার কথা জানায় এসআই সেকেন্দার। এ জন্য দুই নারীকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। টাকার জন্য তারা ওই ডাকবাংলোতেই অপেক্ষা করে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার পর ওই দুই কর্মকর্তা সেখানে পৌঁছায়। কিন্তু ওই সময়েও তাদের কোনো টাকা দেননি এসআই সেকেন্দার। বরং আগের রাতের মতোই তারা পাওনাদারের ভাগ্নিকে ধর্ষণ করে। পরে শুক্রবার সকালে ৫ হাজার টাকা হাতে দিয়ে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় এসআই সেকেন্দার ও এএসআই মাজহারুল।
নির্যাতনের শিকার তরুণী বলেন, প্রতিবেশী খালার সঙ্গে তিনি সাটুরিয়া গিয়েছিল। তাদের সেদিনই ফিরে আসার কথা থাকলেও দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের আটকিয়ে রাখে। তারা অস্ত্রের মুখে তাকে মাদক সেবন করানোর পর ধর্ষণ করে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী তরুণী। ওই সময় ঘটনা প্রকাশ করলে গুম করার হুমকিও দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। শুক্রবার সকালে সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে রোববার মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।