পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নদী দখলের মতো কয়েক যুগ ধরে অবৈধভাবে বেদখল হতে চলছে রেলের বিপুল পরিমাণ জায়গা। ইতোমধ্যে অনেক জায়গা পুরোপুরি বেদখল হয়ে গেছে। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রসাশনের নাকের ডগায় বসেই প্রভাবশালীরা এ দখল চালিয়ে যাচ্ছে। রেল লাইনের কোল ঘেঁষে কাঁচা-পাকা স্থাপনা এবং অবৈধ দোকান ও বস্তি বসিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও কার্যত কোন সফলতা আসেনি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় প্রভাবাশালী ও পুলিশের অসাধু সিন্ডিকেট মাসোয়ারা নিয়ে স্থায়ীভাবে এ দখল টিকিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নগর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু দখল করেই ক্ষ্যান্ত নয়, দখলের সাথে সাথে রেল লাইনের দু’ধারে বড় বড় মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেটেরা। এতে একদিকে রেল লাইনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি যেমন বেড়েছে তেমনি জমি থেকে প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া এসব আখড়া থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে মাদক ছড়িয়ে পড়ায় যুব সমাজ ক্রমশঃ ধ্বংশের দিকে যাচ্ছে। নাগরিক ও নগরদিদের দাবি, দেশে চলমান নদীখেকো ও নদী তীর দখলকারীদের উচ্ছেদের ন্যায় রেলের জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও জোড়ালো অভিযান শুরু করবে প্রশাসন।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, রেললাইনের দুপাশে ১০ ফুট জায়গা খালি রাখার নিয়ম রয়েছে। সরকারী নির্দেশনা ছাড়াও যে কোন দুর্ঘটনা এড়ানো ও বাড়তি সতর্কতার জন্য এমন বিধান। অথচ রাজধানীর মতো দেশের জেলা শহরগুলোর কোথাও এমন খালি রাখার চিত্র তেমন চোখে পড়ে না। গত কয়েকদিন ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বেশিরভাগ জায়গা ঘুরে রেল লাইনের দু’ধারে বস্তি, দোকানপাট এবং আধা-পাকা স্থাপনা বানিয়ে দখলের চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনকালে দেখা গেছে, ঢাকার নারায়ণগঞ্জ, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, জুরাইন, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, নাখালপাড়াসহ উত্তরা ও টঙ্গীর বিভিন্ন অংশে রেললাইনের দু’ধারে বস্তি, দোকান, বাজার, ছাপড়া ঘর, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ সংগঠনের নামে-বেনামে পাকা ও আধা-পাকা স্থাপনা রয়েছে। এর বাইরে অনেক এলাকায় সরকারী-আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান ও বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড বানিয়ে দখল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ করা হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যায়। প্রভাবশালীদের বাইরে রেলওয়ের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে এ দখল চলে। যার কারণে কখনো উচ্ছেদে গেলে আগে দখলদারদের কল করে জানিয়ে দেয় তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজার থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার ঝুঁপড়ি আছে। এসব ঝুঁপড়ি একেবারে রেল লাইন লাগোয়া। কোথাও কোথাও রেললাইনের সঙ্গে ঘরের দরজার দূরত্ব দেড়-দুই হাতেরও কম। কারওয়ান বাজার এলাকায় দেখা গেছে, প্রকাশ্যে গাঁজা, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বিক্রি করছে। বস্তির নারীরা কাউকে দেখা মাত্রই মাদক কেনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। ছোট শিশু থেকে অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের মাদক কিনতে দেখা গেছে। তবে খুব কাছেই পুলিশ থাকলেও তাদেরকে নিরব ভূমিকায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তেজগাঁও ক্রসিংয়ের কাছে ছাপড়া ঘরে থাকা এক নারী বলেন, প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে তারা এখানে আছি। জায়গাটি বাবা একজনের কাছ থেকে কিনেছেন। তবে তাদের কাছে কোন কাগজপত্র নেই। এর আগে কয়েকবার উচ্ছেদ করা হলেও তারা আবারও একই জায়গায় ঘর তুলে থাকতে শুরু করেন।
জুরাইনে কাঁচা মালের এক দোকানী বলেন, দৈনিক ১০০টাকার বিনিময়ে রেল লাইনের পাশে দোকান করার সুযোগ পেয়েছেন। রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও পুলিশ ও রেলের কর্মীরা সব দোকানদারদের কাছ থেকে উঠানো টাকার ভাগ নিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্র বলছে, সারা দেশে রেলওয়ের মালিকানাধীন জমি রয়েছে প্রায় ৬১ হাজার ৬০৫ দশমিক ৮৪ একর। এর মধ্যে রেলওয়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে ৩১ হাজার ৩১১ দশমিক ৫০ একর জমি। এ ছাড়া ৭৯৫ দশমিক ১৯ একর মৎস্য, ৩০ দশমিক ৫৫ একর নার্সারি, ১২ দশমিক ৪৭ একর সিএনজি, ৪৫ দশমিক ৬৭ একর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২১০ দশমিক ৬৯ একর সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে লাইসেন্সের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া আছে। বাণিজ্যিক লাইসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে ৯০৯ দশমিক ৮৪ একর জমি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রেলওয়ের প্রায় ৪ হাজার ৪৬৫ দশমিক ৬২ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমাঞ্চলেই দখল হয়েছে ৩ হাজার ৩৮৭ দশমিক ২৭ একর। আর পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ৭৮ দশমিক ১৫ একর। প্রকৃত চিত্র এর চেয়ে আরও ভয়াবহ বলে দাবি করেছেন রেলের ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত নানা সূত্র ও নগরবিদরা। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে খাতা-কলমে (শক্ত ডকুমেন্ট ছাড়া) লিজ বা ইজারা দেওয়া আছে ১২ হাজার ৭২১ দশমিক ৪ একর জমি। আর বর্তমানে রেলের দখলে অব্যবহৃত জমি রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ১০৭ একর। এর মধ্যে কৃষি জমি ১০ হাজার ৭১৬ দশমিক ৮১ একর।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রেললাইনের দুই পাশের প্রায় দু’শো একর জমি দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ পথে ছোট-বড় বাজার ও দোকানের সংখ্যা প্রায় হাজারখানিক। কোথাও জাল দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে আবাসন কোম্পানির ভবনও তোলা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় ১৯ একর এবং নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে ২৯ একর জমি দখল হয়ে গেছে।
ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রামে রেলের ২১৫ থেকে ২৩০ একর জায়গা দখল হয়ে আছে। এর মধ্যে অবশ্য ১৫০ একরই বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে। আর বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে ৭৩ একর জমি। পাকশীতে দখল করা জমির মধ্যে ২ হাজার ৫৮ একরই বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের দখলে। লালমনিরহাটে রেলের ৮৪১ একর জমি বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে আছে।
একইভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের দুই পাশের অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে। সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ, জামালপুরসহ বিভিন্ন স্থানেও একই অবস্থা। কোথাও মার্কেট আবার কোথাও বাড়ি-ঘর ও বস্তি বানিয়ে এসব জায়গা দখল করা হয়েছে। এদিকে লাখো কোটি টাকার এসব জমি উদ্ধারে রেল যেমন ব্যর্থ হচ্ছে তেমিন বছরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
রেলের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭৬ সালে রেলওয়েতে পৃথকভাবে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয় করা হলেও জনবল অনেক কম। যার কারণে রেলের সম্পদের ওপরে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া প্রতিনিয়ত দলীয় ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালীরা নানা অজুহাতে রেলের জায়গা লিজ নিয়ে দখলের চেষ্টা চালু রেখেছে। এছাড়া ১৯৬০ সালে ফুলবাড়িয়া থেকে রেলস্টেশন কমলাপুরে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে সেখানকার বিপুল পরিমাণ জমি সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়।
ঢাকা বিভাগের রেলওয়ের ভূসম্পদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত অনেক জায়গা দখল হয়ে আছে। অনেক সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু পরে আবারও দখল হয়ে যায়। তিনি বলেন, আগে সরকারি জায়গা দখল করার এত প্রবণতা ছিল না। কিন্তু এখন সেই প্রবণতা বেড়েই চলছে। এদিকে রেল লাইনের পাশে থাকা বস্তিুগলো নিয়ে আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেগুলো নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
কয়েকজন ট্রেন চালক জানান, রেল লাইনের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা থাকায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। যার কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি লাগে। চালকরা বলেন, স্বাভাবিকভাবে ঘণ্টায় ৪০ কি.মি. গতিতে চালানোর কথা থাকলেও ২৫-৩০ কি. মি. এর বেশি চালানো সম্ভব হয় না। যার কারণে কমলাপুর থেকে ১৩/১৪ কি. মি দুরত্বের বিমান বন্দর স্টেশনে যেতে কমপক্ষে ২৬ মিনিট সময় লাগে। যা ১৫ মিনিট লাগার কথা।
এদিকে, রেল লাইনের পাশের জায়গা দখল করে বস্তি ও দোকানপাট নির্মাণের কারণে এখানে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি ও হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা বেড়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৩ সাল থেকে ১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ও ট্রেন দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে রেললাইনে হত্যা করা হয়েছে ১৩৪ জনকে। এছাড়া ২০১৮ সালের প্রথম ৬ মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে ও দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪৬৬ জন। রেলওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, রেল লাইনে হত্যাকান্ডের মধ্যে ২০১৩ সালে ৩৮, ২০১৪ সালে ৩৩, ২০১৫ সালে ২৪, ২০১৬ সালে ২০ এবং ১৭ সালে ১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রেল লাইনের আশপাশের জায়গা দখল করায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। রেল লাইনের দু’ধার থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ রেল লাইন সংস্কার করা হলে দুর্ঘটনা কমবে।
রাজধানীর বিশিষ্ট নাগরিক ও নগরবিদরা মনে করেন, দেশে চলমান নদীখেকোদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের ন্যায় রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে জোড়ালো অভিযান চালানো উচিত। তবে উচ্ছেদের সাথে দখলদারদের স্থায়ীভাবে প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, মামলা ও নানা জটিলতা কারণে অধিকাংশ বেদখল জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। তবে খুব শিগগিরই অভিযান শুরু হবে। তিনি বলেন, উচ্ছেদের পর পরই দখলদাররা আবার স্থাপনা গড়ে তোলে। এজন্য শুধু উচ্ছেদের পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত স্থান সুরক্ষার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেলেলাইনের পাশের জমি দখল প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, যতোটুকু জমি আছে সেখানে নতুন করে রেললাইন নির্মাণ করা হবে। তখন এগুলো আর বেদখল হওয়ার সুযোগ থাকবে না। নতুন রেললাইন নির্মাণের পর নিরাপত্তার জন্য রেললাইনের দুদিকে কাঁটাতারের বেরা দেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।