Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে সড়কপথে চাঁদাবাজি : হুমকিতে কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৫ পিএম

স্থলপথে বাণিজ্যে কুড়িগ্রামের সোনাহাট বেশ সম্ভাবনাময় একটি স্থলবন্দর। যাত্রার অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও সে সম্ভাবনার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। বৈধ সব ধরনের পণ্য রফতানি ও ১০টি পণ্য আমদানির অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে বন্দর দিয়ে মাত্র দুটি পণ্য আমদানি হচ্ছে। কিন্তু যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে এ কার্যক্রমও বন্ধ হওয়ার পথে।

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় সোনাহাট স্থলবন্দরের অবস্থান। ওপারে ভারতের আসাম প্রদেশ। পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে সোনাহাটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর। ভৌগোলিক কারণে বন্দরটির গুরুত্ব অনেক। রয়েছে সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধাও। কিন্তু কাগজে-কলমে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলেও এখান দিয়ে রফতানি তো দূরে থাক, আমদানিই হচ্ছে মাত্র দুটি পণ্য পাথর ও কয়লা। কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে এ বাণিজ্যও।
এক্ষেত্রে ভারতীয় অংশে সড়কপথে চাঁদাবাজি ও হয়রানিই সোনাহাট স্থলবন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা ১৫ দিন থেকে এক মাস টানা আমদানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হন, যেমনটি চলছে তিন সপ্তাহ ধরে।

এলসি খোলার পরও পণ্য আনতে না পারায় ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু কেবল ব্যবসায়ীরাই যে বিপাকে রয়েছেন, তা নয়। বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের জীবিকাও। বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকা তাই তাদের জন্যও ক্ষতিকর।
সোনাহাট স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হামিদুল ইসলাম জানান, বন্দর চালু হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার মানুষ পণ্য লোডিং-আনলোডিংসহ অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পণ্য না এলে তাদের রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে শ্রমিকরা এখন পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, বন্দর চালুর পর থেকে ভারতীয় অংশে সড়কপথে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রায়ই টানা ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত আমদানি বন্ধ থাকে। এতে বন্দরের আমদানিকারকরা বাংলাদেশে তাদের গ্রাহকদের সময়মতো পাথর ও কয়লা সরবরাহ করতে পারছেন না। এতে তারা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

এ অবস্থায় সোনাহাটের আমদানিকারকরা তো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেনই, বন্দরের ভবিষ্যৎও এতে হুমকির মুখে পড়ছে। কারণ গ্রাহক একবার বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তাদের আবার বন্দরমুখী করাটা বেশ কঠিন। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বিষয়টি বেশ কয়েকবার স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষসহ ঊর্ধ্বতন মহলকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। বন্দরের কার্যক্রমে বিঘœ ঘটায় সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানান তারা।
সোনাহাট স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক জানান, বন্দরটি চালুর পর অনেক আশা নিয়ে আমরা ব্যবসা শুরু করি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে শুরু করেন। কিন্তু ভারতীয় প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে এলসি খুলেও কয়লা ও পাথর আমদানিতে আমাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সরকার রাকিব আহমেদ জুয়েল জানান, সোনাহাটের প্রায় সব ব্যবসায়ীই ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। বছরের এই সময়টায় ভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য কয়লা ও নির্মাণকাজের জন্য পাথরের বেশ চাহিদা থাকে। ফলে পণ্য দুটির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলে ব্যবসায়ীরা এ সময় কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পান। কিন্তু এলসি খোলার পরও ভারত থেকে সময়মতো পণ্য না আসায় আমরা লোকসানে পড়ছি। এর সঙ্গে গুনতে হচ্ছে ব্যাংকের সুদের টাকা। আমরা চাই উভয় দেশের সরকারি হস্তক্ষেপে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হোক।
সোনাহাট স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়্যারহাউজ ইনচার্জ রবিউল আলম জানান, সচল থাকলে বন্দরে প্রতিদিন ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টন পাথর ও কয়লা আমদানি হয়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করতে পারে। কিন্তু প্রায় সময় আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ