বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেশীকে কোনো রকম কষ্টই দেয়া বৈধ নয়। এ ব্যাপারেও হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে সে যেন নিজ প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (আংশিক) -সহিহ বুখারি ও মুসলিম
হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে আছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কে মুমিন নয়?
জবাবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যার নষ্টামি বা ক্ষতি থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। -সহিহ বুখারি ও মুসলিম
নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক! ভাবলেই ভয় হয়, কতটুকু ক্রোধ ও বিরক্তি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন-তিনবার একই কসম উচ্চারণ করে দুষ্ট প্রতিবেশীর ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কতটাই না জঘন্য ও নিন্দনীয় ওই কাজ, যা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার বা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য করা হয়ে থাকে। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া বা তার ক্ষতি করার চেষ্টা করা আমাদের সমাজে বা জনজীবনে মহামারীর মতোই ছড়িয়ে আছে। আমরা নিজেরাও (ইল্লা মাশাআল্লাহ) সবাই এ থেকে পরিপূর্ণ মুক্ত নই হয়তো বা। ভাবলে হয়তো মনে হবে, কই! আমি তো এমন কিছু করি না। কিন্তু হয়তো আমার অজান্তেই প্রতিবেশী আমার দ্বারা কষ্ট পাচ্ছেন। যেমন ধরুন, আমরা যত্রতত্র আবর্জনা ফেলি। অন্যের দরজার সামনে ময়লা বা জুতো রাখি। উচ্চ শব্দে রেকর্ড প্লেয়ার বাজাই। ঝগড়াঝাঁটি ও চিৎকার-চেঁচামেচি করি। পর্দানসিন প্রতিবেশীর পর্দার পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটাই। আমাদের ঘরের চাল বা ছাদের বৃষ্টির পানিতে অপরের দেয়াল পচাই। নিন্দা ও গিবত করি। বদনাম রটাই। পানি বা ময়লার ড্রেনে ব্যাঘাত ঘটাই। এমন হাজারো কাজ, যা খুব সামান্য মনে হলেও এর দ্বারা প্রতিবেশী বিরক্ত ও অতিষ্ঠ বোধ করেন।
আর সীমানা নিয়ে, গবাদি পশু-পাখি নিয়ে, গাছ-পালা, ফল-ফসল নিয়ে, ডোবা-নালা, পুকুর নিয়ে ঝগড়া ও বিদ্বেষের তো অন্তই নেই। এ ছাড়াও একে অপরের সুখে হিংসা করা, শান্তি বিনষ্টে ঝগড়া লাগানো, ছেলে-মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেয়া, চুরি-ডাকাতিতে সাহায্য করা, অপরের উন্নতিতে বাধা দেয়া, বিশ্বাস ভঙ্গ করা, আস্থা নষ্ট করা ইত্যাকার অন্যায় আচরণও সমাজে কম হয় না। এসব থেকে তাওবা করে আমাদের উচিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শকে গ্রহণ করা। প্রতিবেশীকে আপন করে নিয়ে তার সুখে সুখী ও তার দুঃখে দুঃখী হওয়া। এমন একটি হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা, যাতে সকলেরই শান্তি হয়।
হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এমনও ইরশাদ হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
কোনো প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে নিজ সীমানায় লাঠি গাড়তে নিষেধ না করে। -সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরীফ
হাদিসটির দ্বারা এও নির্দেশ করা হয়েছে যে, শুধু অগ্রসর হয়ে বা নিজ থেকে সেবা উপকার করাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে যথেষ্ট নয়; বরং প্রতিবেশী যদি আমাদের দ্বারা বা আমাদের কাছ থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা পেতে চান, তবে সেটিও তাকে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। হাদিসে উল্লিখিত লাঠি বলতে কাপড় শুকানোর খুঁটি বা সুবিধা নেয়ার কথাই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবেশীর প্রয়োজন মেটাতে সহযোগিতা করতেই হবে। যথাসম্ভব ছাড় দিতে হলেও প্রতিবেশীর কল্যাণে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমরা কি কখনো এই প্রতিবেশীর অধিকার ও সদ্ব্যবহারকে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত বলে চিন্তা করেছি? এখন থেকে করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দিন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।