বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
যদিও এ কথা সত্য যে, আল্লাহ তায়ালার সত্তাকে অনুধাবন করার এবং বান্দাদের হেদায়েতের জন্য তার প্রতিষ্ঠিত রেসালত পরম্পরাকে মেনে নিয়ে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে নেয়ার পর বান্দার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে নিজেদের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়া যে, এ জগৎ-সংসারে আমাকে আল্লাহর হুকুম-আহকাম তথা বিধিবিধান এবং তৎকর্তৃক অবতীর্ণ হেদায়েতের অনুগত থেকেই জীবন যাপন করতে হবে।
তথাপি কোরআন মাজীদ শুধু এই অপরিহার্যতার ওপরই ক্ষান্ত হয় না, বরং বিশেষভাবেও মানুষকে (নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে আগত) আল্লাহ তায়ালার হেদায়েত ও হুকুম-আহকামের আনুগত্যকে জীবনের আদর্শে পরিণত করে নেয়ার আমন্ত্রণ জানায়। পরিপূর্ণ গুরুত্বসহকারে বিভিন্ন জায়গায় তাদের কাছে তা দাবি করে।
বস্তুত এটিই হলো মুক্তির পথ। এ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত পথ ধ্বংসের পথ। সূরা আন’আমে বলা হয়েছে, ‘বলে দিন হে নবী, আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হেদায়েতই জীবনের সঠিক পথ। আর আমাদের সবার প্রতি পালনকর্তার হুকুম পালনের নির্দেশ করা হয়েছে।’ (সূরা আন’আম : আয়াত ৭১)।
সূরা আ’রাফের একেবারে শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘সে হেদায়েতেরই অনুসরণ করো, যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এবং তাকে ছাড়া অন্য মালিকদের আনুগত্য করো না। (কারণ, প্রকৃত মালিক ও পালনকর্তা শুধু তিনিই।)’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৩)।
সূরা যুমারে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং প্রত্যাবর্তন করো নিজের প্রভুর দিকে, তার হুকুম পালন করো তোমাদের ওপর তার আজাব নেমে আসার পূর্বে। অথচ তখন কেউ তোমাদের সাহায্য করতে পারবে না। আর অনুসরণ করো সেই উৎকৃষ্টতর হেদায়েতের, যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, তোমাদের ওপর আকস্মিক আজাব নেমে আবার পূর্বে অথচ তোমরা জানতেও পারবে না।’ (সূরা যুমার : আয়াত ৫৪-৫৫)।
এ তো ছিল খোদায়ী হেদায়েতের আনুগত্যের ব্যাপারে তাকিদ। তদুপরি কোরআন মাজীদে এসমস্ত আয়াত ছাড়াও ‘আতীউল্লাহ’ ও ‘ওয়া আতীউর রাসূল’ কিংবা এর সমার্থক বহু শব্দে একই দাবি জানানো হয়েছে। তারপর মান্যকারী ও অমান্যকারীদের পরিণতি সম্পর্কেও কোরআনের ভাষাতেই শুনুন।
সূরা ফাতহে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে এবং তাদের নির্দেশিত পথে চলবে, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা এমন জান্নাতে পৌঁছাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। পক্ষান্তরে যারা অমান্য করবে এবং সত্য পথ থেকে ঘুরে দাঁড়াবে, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা এ অপরাধের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি দেবেন।’ (সূরা ফাতহ : আয়াত ১৭)। অন্যত্র মান্যকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর যারা আনুগত্য করে আল্লাহ এবং তার রাসূলের, তারা অর্জন করল মহা সাফল্য। (সূরা আহযাব : আয়াত ৭১)।
সূরা নিসায় এই ‘মহা সাফল্য’-এর তফসির ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে- ‘আর যে বান্দা আনুগত্য করবে আল্লাহ ও তার রাসূলের, সে আল্লাহ তায়ালার সেসব বান্দার সাথে থাকবে, যাদের প্রতি তার বিশেষ আশীর্বাদ রয়েছে। অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মীগণ। বস্তুত কতই না চমৎকার এসব সঙ্গী! আর এটা হবে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাদের জন্য করুণা বিশেষ। আর আল্লাহ সর্বোত্তম জাননেওয়ালা।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৬৯-৭০)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।