পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নতুন বছর শুরু না হতেই সীমান্তে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশিদের হত্যাকান্ড। হঠাৎ করে সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্ত এলাকার বাসীন্দারা। এদিকে, সীমান্তে সব ধরণের হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে ছোট বড় নানা পদক্ষেপ নিয়েও কার্যত কোন সুফল মিলছে না। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিধান না থাকলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বারবার ব্যবহার করছে আগ্নেয়াস্ত্র। মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের এভাবে হত্যা করা সুস্পষ্টত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তাদের মতে, শুধুমাত্র বাংলাদেশীরা সীমান্ত অতিক্রমকালে হত্যার শিকার হচ্ছে না, অনেক সময় বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেও বাংলাদেশিদের হত্যা এবং গবাধিপশুসহ কৃষি পণ্য লুটে নিয়ে যায়।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১২ মাসে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে ১৪ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিতে নিহত হয়েছেন ৮ জন। আর ৬ জনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় বিএসএফের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ১৫ বাংলাদেশি। আর অপহরণ হয় ১৩ বাংলাদেশি। একই বছর সীমান্তে আরও এক বাংলাদেশির লাশ পাওয়া গেলেও তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।
এদিকে, চলতি বছর শুরু হয়ে এক মাস না পেরুতেই বিএসএফ দ্বারা বাংলাদেশি হত্যায় গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। খোদ জানুয়ারির এক মাসেই বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে ৬ বাংলাদেশীর মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ জন এবং নীলফামারী ও রাজশাহীতে যথাক্রমে একজন করে দু’জনের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া গত ২ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর ম্যাচেরঘাট সীমান্তে আসাদুল হক (৩০) নামে এক বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ। এতে চলতি বছরের প্রথম ৩৯ দিনে বিএসএফের হাতে ৭ বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়। এছাড়া গত ১৪ বছরে সীমান্তে ৮৫৪ বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ।
আসাদুলের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের নবীনগর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান কদমার ছেলে। তাকে হত্যার পর লাশ হস্তান্তরে গড়িমসি করে দু’দিন লাগিয়েছে বিএসএফ।
নিহতের স্ত্রী সোনালী বেগমের দাবি, দুই সন্তানের বাবা আসাদুল কুলির কাজ করতেন। তবে বাউরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ও বিজিবি দাবি করে- আসাদ দিনে কুলির কাজ করলেও রাতে সীমান্ত দিয়ে গরু পারাপারের কাজ করতেন।
এই হত্যার ঘটনায় রংপুর-৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসাদুলের নিহতের ঘটনায় বিএসএফকে কড়া প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে।
বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে সংঘটিত হত্যাকান্ডের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএসএফ সদস্যরা নীতিমালা না মেনে হত্যা, নির্যাতনসহ অমানবিক কর্মকান্ড চালায়। অভিযুক্ত সেনাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিএসএফ প্রধানের প্রতি বারবার আহবান জানানো হলেও কার্যত কোন সফলতা আসেনি। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও হত্যাকান্ড বন্ধ তো দূরে থাক কমিয়েও আনা যায়নি।
বিজিবির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে জরুরি চিকিৎসাসেবা, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া এবং কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কেনা। এছাড়া কখনো কখনো বিভিন্ন চোরাচালানি গোষ্ঠী ও মাদক কারবারীরা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যায়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শুধু সীমান্ত অতিক্রমের কারণে বাংলাদশিদের হত্যা করে না, অনেক জিরো লাইনের কাছে ভুলক্রমে চলে গেলেও বাংলাদেশিরা হত্যাকান্ডের শিকার হন। আবার কখনো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এদেশের নাগরিকরা হত্যা করার ঘটনা রয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অতীতে অনেক সময় বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গুলি করে হত্যা করেছে। আবার গ্রামবাসীর গরু, ছাগল ও ক্ষেতের কৃষিপণ্যও নিয়ে গেছে বিএসএফ সদস্যরা।
২০০৫ সাল থেকে এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৫ সালে সীমান্তে ১০৪ জনকে হত্যা করে বিএসএফ। যা ২০০৬ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ১৪৬ জনে। বিএসএফের হাতে ২০০৭ সালে ১২০ জন, ২০০৮ সালে ৬২ জন, ২০০৯ সালে ৯৬ জন, ২০১০ সালে ৭৪ জন, ২০১১ সালে ৩১ জন, ২০১২ সালে ৩৮ জন, ২০১৩ সালে ২৯ জন, ২০১৪ সালে ৩৩ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন, ২০১৬ সালে ৩০ জন এবং ২০১৭ সালে ২৫ জন হত্যাকান্ডের শিকার হয়।
এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলি ও নির্যাতনে ৮৫৩ জনে মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে ২০০৬ সালে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ। ওই বছর বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ১৪৬ বাংলাদেশি। তবে সবচেয়ে কম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালে। ওই বছর গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয় ১৪ জন। আর পৃথকভাবে গুলিতে ৮ ও নির্যাতনে ৬ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়।
বিজিবি সূত্র জানায়, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় ভারতীয়রা ধরা পড়লে বিজিবি (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও আইনি প্রক্রিয়ায় তাদেরকে হস্তান্তর করে। কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার বা শারীরিকভাবে আঘাত করে না। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুসরণ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে।
বিজিবির কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে হত্যা কিংবা শারীরিকভাবে আঘাত করা গুরুতর অন্যায়। যদিও বিএসএফ সে বিষয়টি সব সময় এড়িয়ে গেছে।
মানবাধিকার সংস্থা আসকের ২০১৮ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সীমান্তে বিএসএফের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে সংবেদনশীল ও সতর্ক হওয়া বা প্রয়োজনে শুধু রাবার বুলেট ব্যবহার করতে পারবে বলে সম্মত হলেও তাদের সেই আশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। বরং বিগত বছরগুলোর মতো প্রতিবছরই তারা আন্তর্জাতিক নীতিমালা ভঙ্গ করে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ, নির্যাতনসহ হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নানা ইতিবাচক দিক থাকলেও সীমান্তের ব্যাপারে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অতীতের চেয়ে গত বছর সীমান্তে হত্যার ঘটনা কম থাকলেও এ বছর আগের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।