নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
৭ দলের রাউন্ড রবিল লিগ থেকে টিকল চার। সেখান থেকে এলিমিনেটর আর কোয়ালিফায়ার পেরিয়ে শিরোপার মঞ্চে দুই দল- ঢাকা ডায়নামাইটস আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আজ সন্ধ্যায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি বিপিএলের তারকা সমৃদ্ধ হেভিওয়েট দুই দল।
বিপিএলের সবচেয়ে হাই ভোল্টেজ ম্যাচকে ঘিরে জমে উঠেছে মিরপুর! ফাইনালে টস হেরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
তামিম ইকবালের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রান তুলেছে কুমিল্লা। ১৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন জাতীয় দলের এই ওপেনার।
ওপেনার তামিম শুরু করেছিলেন দেখে শুনে, সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে ব্যাটের ধার। তুলে নিয়েছেন ঝড়ো সেঞ্চুরি। ৫০ বলে তার শতকটি ৯টি চার ও ৭টি ছক্কায় সাজানো। এর পর আরো হাত খুলে মারছেন, অপরাজিত আছেন ৫৩ বলে ১১৫ রানে, চার ৯টি ছক্কা ৮টি!
৩১ বলে জাতীয় দলের এই ওপেনার ফিফটি তুলেছিলেন ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায়। তাকে সঙ্গ দেয়া অধিনায়ক ইমরুল কায়েস অপরাজিত আছেন ২১ বলে ১৭ রানে।
৪৫ বলে ১০০ রানের জুটিতে ইমরুলের অবদান মাত্র ১৭!
এনামুল হক বিজয়ও খেলছিলেন সন্তর্পণে। তবে সাকিবের বলে এলবিতে কাটা পড়ার আগে ৩০ বল খেলে করেছেন ২৪ রান।
পরের বলেই ক্রিজে আসা শামসুর রহমান শুভকে দারুণ ক্ষীপ্রতায় রান আউটের ফাঁদে ফেলেন সাকিব।
ফিফটির পথে দুইবার জীবন পেয়েছেন তামিম। একবার উইকেটের পেছনে। আরেকবার ফাইন লেগে দৌড়ে এসেও একটুর জন্য তালুবন্দী করতে পারেননি আন্দ্রে রাসেল।
এর আগে শুরুটা ভালো হয়নি ইমরুল কায়েসের দলের। দলীয় মাত্র ৯ রানেই বিদ্ধংসী ওপেনার এভিন লুইসকে হারায় কুমিল্লা। রুবেলের এলবির আবেদনে সাড়া দিয়ে কাতে আউট দেন আম্পায়ার। পরে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেন নি এই ক্যারিবিয়। ৭ বল খেলে একটি চারে করেছেন মাত্র ৬ রান।
ম্যাচ শুরু হতে তখনও বাকি দুই ঘন্টা। দুপুর গড়িয়ে মাত্র পশ্চিমে ঢলেছে সূর্য্য। এরই মধ্যে মিরপুর স্টেডিয়াম চত্ত্বর কানায় কানায় পূর্ণ! কেউ টিকিট নিয়েই এসেছেন, আবার কেউ স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন ‘যদি একটি টিকি পাই’! তবে সোনার হরিন বিপিএলের ফাইনালের টিকিট যে আগেই শেষ! খোঁজ নিয়ে যানা গেছে ৪০০ টাকার গ্যালারির টিকিট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকায়! তাতেও কাড়াকাড়ি!
স্টেডিয়ামে ঢুকে চোখ ছানাবড়া! গ্যালারিও প্রায় পূর্ণ। তবে যারা বাইরে অপেক্ষমাণ, তাদের কি হবে? শুরুতে যে বিপিএল দর্শকখরার লাঞ্চনায় জর্জর হতে হয়েছে সেই বিপিএলেই এখন ২৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই হোম অব ক্রিকেট ম্যাচের আগেই পূর্ণ!
স্কোয়াড
ঢাকা ডায়নামাইটস : উপুল থারাঙ্গা, সুনীল নারাইন, রনি তালুকদার, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), কায়রন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল, নুরুল হাসান সোহান, মাহমুদুল হাসান, শুভাগত হোম, রুবেল হোসেন, কাজী অনিক।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : তামিম ইকবাল, এভিন লুইস, ইমরুল কায়েস (অধিনায়ক), এনামুল হক বিজয়, শামসুর রহমান শুভ, শহীদ আফ্রিদী, থিসারা পেরেরা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, ওয়াহাব রিয়াজ, মেহেদী হাসান, সঞ্জিত সাহা।
বিপিএলের প্রথম দুই আসরে চ্যাম্পিয়ান ছিল ঢাকা গøাডিয়েটসর। এরপরই ফিক্সিংয়ের দায়ে দলটি ও তাদের ফ্র্যাঞ্চইজি নিষিদ্ধ হয়। তৃতীয় আসরে নয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা ডায়নামাইটস নামে বিপিএলে অংশ নেয়। তবে সেই আসরে চ্যাম্পিয়ান হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। পরের আসরেই আবারো চ্যাম্পিয়ান হয়ে তাদের শক্তির জানান দেয় ডায়নামাইটরা। ৫ম আসরে ফাইনালে গেলেও চ্যাম্পিয়ান হয় রংপুর। সেই চ্যাম্পিয়ানদের বিদায় করেই গত আসরের রানার্স আপ ঢাকা এবার তৃতীয় বারের মত ফাইনাল নিশ্চিত করে। আজ তাদের সামনে সুযোগ কুমিল্লাকে হারিয়ে চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলার। আর কুমিল্লার সুযোগ থাকছে দ্বিতীয়বারের মত বিপিএল সেরার খেতাব জয়ের।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হেরে বিপিএল থেকে বিদায় নেওয়ার পর রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তার একটি আক্ষেপের কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন, বিশ্বমানের একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার যদি দলে থাকত! মাশরাফির যে জায়গায় আক্ষেপ, ঢাকা অধিনায়ক সাকিবের সেখানে তৃপ্তিই পাওয়ার কথা। তার দলে পেস বোলিং অলরাউন্ডার যে দুইজন। স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসাব করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় চারজনে- আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ড, সুনীল নারিন ও সাকিব নিজে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই এ চার জনের কেউ না কেউ জ্বলে উঠছেন। জয়ের মূলনায়কও হচ্ছেন। ঠিক তেমনি ভিক্টোরিয়ান্সের ক্ষেত্রেও। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, থিসারা পেরেরা ও শহীদ আফ্রিদির মতো অলরাউন্ডাররা দলের জয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছেন। আজ সন্ধ্যায় ফাইনালের আগে মূল আলোচনার বিষয়ই দুই দলের অলরাউন্ডার।
ঢাকার জয়ে বড় অবদানও রাখছেন এই অলরাউন্ডাররাই। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুরের বিপক্ষে যেমন রাসেল আগে বল হাতে নিলেন ২ উইকেট। পরে ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেমে খেললেন ১৯ বলে অপরাজিত ৪০ রানের ঝোড়ো ইনিংস। তার টানা তিন ছক্কায় ১৪৩ রানের লক্ষ্যটা ৫ উইকেট ও ২০ বল হাতে রেখে পেরিয়ে যায় ঢাকা। ম্যাচে সাকিব একটি উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে খেলেন ২০ বলে ২৩ রানের ক্যামিও ইনিংস। দারুণ তিনটি ক্যাচ ও ৮ বলে ১৪ রান করে অবদান রাখেন পোলার্ডও। আগের ম্যাচে অর্থাৎ এলিমিনেটরে নারিন হাত ঘুরিয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে ৩১ রান করে হন ম্যাচসেরা। চারজনের নামের পাশেই আছে একাধিক টি-টোয়েন্টি ট্রফি। সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলার রেকর্ড পোলার্ডের। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনিই।
ঢাকার প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, যাদের দলেও অলরাউন্ডারের অভাব নেই। শহীদ আফ্রিদি, থিসারা পেরেরার মতো অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার আছে কুমিল্লা দলে। আছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনে মতো তরুণ অলরাউন্ডারও। আফ্রিদি টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করছেন। ১২ ম্যাচে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। শুধু উইকেটসংখ্যা দিয়ে তার বোলিং বোঝা যাবে না। কমপক্ষে ৩০ ওভার বোলিং করা কিংবা ১৫ উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে আফ্রিদির ইকোনমি রেটই কেবল ছয়-এর নিচে, ৫.৮৫। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক কখনো আবার ব্যাট হাতে ঝড় তুলে দলের জয়ে রাখছেন অবদান। থিসারাও ব্যাটে-বলে অবদান রাখছেন। সাইফউদ্দিন দারুণ বোলিং করছেন টুর্নামেন্টজুড়ে।
আজ শিরোপা নিষ্পত্তিতেও বড় ভুমিকা রাখতে পারে দুই দলের এই অলরাউন্ডাররাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।