বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দুই থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা পূর্বপরিকল্পিত ভাবে তিন যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকিও দেন দুই কর্মকর্তা। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায়।
উদ্ধারকৃত অপহৃতরা হলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ি এলাকার হান্নান সরকারের ছেলে রায়হান সরকার, একই এলাকার লতিফ সরকারের ছেলে লাবিব হোসেন ও একই জেলার শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে নওসাদ ইসলাম মাহফিন। এদের সকলের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর। অপহৃত ও তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে রায়হান সরকার, লাবিব উদ্দিন, নওশাদ ইসলাম, তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় ফিলিং ষ্টেশনে যান। এ সময় তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান গাড়ি থেকে নেমে পাশের দোকানে চা খেতে যান। গ্যাস নিয়ে তাদের গাড়িটি ফিলিং ষ্টেশন থেকে একটু এগিয়ে যাওয়ার সময় সাদা পোশাকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ব্যাক্তিগত গাড়ি নিয়ে ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমানসহ ৩-৪ জন ওই যুবকদের গাড়ি গতিরোধ করে। পরে গাড়ি থেকে রায়হান মিয়া, লাবিব উদ্দিন ও নওশাদ ইসলাম জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। এসময়ে চা খেতে যাওয়া বাকি দুই বন্ধু রক্ষা পায়। পরে ওই তিন বন্ধুকে নিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দেওড়া নির্মানাধীন ফ্লাইওভার ব্রিজের নীচে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিন বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে টাকা দাবি করেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে বেশ কিছু সময় তাদের সঙ্গে টাকা নিয়ে দেন-দরবার হয়। একপর্যায়ে ওই দুই এএসআই তাদেরকে জানায় টাকা দিলেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে।
এরই মধ্যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান মুঠোফোনে তাদের পরিবার ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশকে অবহিত করে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কালিয়াকৈর থানার ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার বিষয়টি মির্জাপুর থানা পুলিশকে অবহিত করে। পরে দুই থানার সহযোগিতায় তাদেরকে ওইদিন রাত ৮টার দিকে মির্জাপুর থানায় এবং পরে রাত ১২ টার দিকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনাটি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গাজীপুর পুলিশ লাইনে ও মির্জাপুর থানার মুসফিকুর রহমানকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নিজ নিজ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও একাধিক পুলিশ জানিয়েছেন, কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এএসআই) মুসফিকুর রহমান এক সময় গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশে এক সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় থেকে তাদের মধ্যে সক্ষতার সৃষ্টি হয়। ডিবিতে দায়িত্ব পালনের সময় তারা বহু নিরীহ মানুষদের ধরে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার অনেক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
উদ্ধার হওয়ায় রায়হান সরকার জানান, তারা পাঁচ বন্ধু বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার সময় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরো অজ্ঞাত কয়েকজন তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদেও কাছে মুক্তিপন চায়। না দিলে ক্রসফায়ার হত্যার হুমকিও দেয়া হয়।
অভিযুক্ত কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি মুক্তিপন চাইনি, মুক্তিপন চেয়েছে মির্জাপুর থানা পুলিশ। আমি তাদের সহযোগিতা করেছি। তাদের সহযোগিতা করাটাই আমার ভুল হয়েছে।’ অপর অভিযুক্ত মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘কালিয়াকৈর থানার এএসআই মামুনের পরামর্শেই তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, ঘটনাটি জানার পর কালিয়াকৈর থানার ওই এএসআইকে প্রত্যাহার করে গাজীপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জীত কুমার রায় বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। মির্জাপুর থানার ওই পুলিশ এএসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।