Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আত্মহত্যা বাড়ছে কেন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সম্প্রতি দেশে আত্মহত্যার পরিমাণ বাড়ছে বলে মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে হাজারো কারণ থাকা সত্ত্বে ও আত্মহত্যার প্রবণতা বা হার কম থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে ইসলামী অনুশাসন। ১৪০০ বছর ধরে ধর্মীয় অনুশাসন এ দেশবাসীকে পরিশীলিত ও সংস্কৃত করেছে। শত দুঃখ-কষ্ট ও বঞ্চনা সত্ত্বে ও তারা আত্মহত্যা করে না। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মহাপাপ। এ কথাটি তাদের বোধ ও চেতনায় বিরাজিত হয়ে গেছে।
শরীয়ত বলেছে, আত্মহনন কাজটি অপর ব্যক্তিকে হত্যার সমান অপরাধ। কারণ, মানুষ নিজের মালিক নিজে নয়। ইচ্ছা করলেই সে নিজেকে হত্যা করতে পারে না। হাদিস শরীফে আছে, নবী করিম সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে হত্যা করবে (যাকে আত্মহত্যা বা আত্মহনন বলে) তার শাস্তি হচ্ছে, অনন্তকাল সে এভাবেই প্রতিনিয়ত বারবার হত্যা করতে থাকবে। জাহান্নামেও সে চিরদিন থাকবে।
যতদিন মানুষ ইসলামের অনুশাসন ও প্রেরণা অনুসরণ করবে ততদিন সে অমুসলিমদের মতো কথায় কথায় আত্মহত্যা করবে না। শত হতাশা ও দুঃখ সত্ত্বে ও আল্লাহর ওপর ঈমান-আস্থা-ভরসা তাকে রক্ষা করবে। পরকালের অনন্তকালীন শাস্তির ভয় তাকে আত্মঘাতী হওয়া থেকে ফেরাবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও নাজাতের আশা তাকে বাঁচার সাহস জোগাবে।
ধর্মহীনদের তুলনায় ঈমানদারদের আত্মহত্যার পরিমাণ কম থাকার এটাই কারণ। বাংলাদেশে ইদানীং ধর্মীয় শিক্ষা জনগণ পর্যায়ে অনেক কমে গেছে। সাধারণ শিক্ষার চাপে শিশুরা খুবই পর্যুদস্ত। সারা দুনিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত ও সহজ হতে থাকলেও বাংলাদেশের শিক্ষা দিনদিনই অবৈজ্ঞানিক ও কঠিন হচ্ছে। শিশুদের বইয়ের বোঝা ও পড়ার চাপ কেবলই বাড়ছে। স্কুলে পড়েও তাদের কোচিং করতে হয়। বাড়িতে হোমওয়ার্ক করতে হয়।
কিন্তু ধর্মীয় বিধান বা কোরআন শিক্ষার সময় তারা পায় না। তারা এখন মসজিদ বা মক্তবে যায় না। কোনো উস্তাদ, ইমাম, হুজুর, হাফেজ বা ক্বারী সাহেবের কাছে তারা কায়দা-সিপারা পড়ে না। অনেক শিশু বাবা-মা আলাদা থাকায় দাদী-নানী বা কোনো মুরব্বির সান্নিধ্য পায় না। পারিবারিক শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। শহুরে জীবনে বড়দের মতো শিশুরাও হয়ে ওঠে আত্মকেন্দ্রিক। নিজের ঘর, নিজের পড়ার টেবিল, নিজের টিভি, নিজের কম্পিউটার, নিজের প্রাইভেসি ইত্যাদি তারা শুরু থেকেই মেনটেইন করা শুরু করে। এতে তারা দাদা-দাদী, চাচা-ফুফু এমনকি বাবা-মায়ের সঙ্গ-সান্নিধ্য এড়িয়ে চলে। ভাই-বোনের আবেগ ও উপলব্ধিও সে বুঝতে চায় না।
এমন একটি সীমিত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে সে একটি অসম্পূর্ণ মানুষে পরিণত হয়। সে হয়ে ওঠে আবেগতাড়িত এক অসামাজিক মানুষ। কষ্ট ভাগ করার অভ্যাস তার থাকে না। ধর্মীয় ও পারিবারিক শিক্ষা তাকে সুরক্ষা দেয় না। অপরের কষ্ট সে উপলব্ধি করতে শেখেনি। সাধারণ কারণে বা ঠুনকো ঘটনায় সে কথিত বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। সাময়িক প্রয়োজনে সে মাদকের আশ্রয় নেয়। কারণে-অকারণে ঘুমের ওষুধ খায়। এমনকি আত্মহত্যা করে বসে।
এমন একটি প্রজন্ম বাংলাদেশে মোটামুটি তৈরি হয়ে গেছে, যারা চট্টগ্রামের ডাক্তার আকাশ আর ডাক্তার মিতুর মতো জীবনবোধ নিয়ে চলতে শুরু করেছে। সহনশীলতার অভাবে তারা আত্মহত্যা করে। নৈতিকতার অভাবে তারা অনিয়মের জীবন যাপন করে। অনেক অন্ধকার ও তিক্ততা নিয়ে তারা জীবন শুরু, জীবনযাপন এমনকি জীবন বিনাশ পর্যন্ত করে। তারা আত্মহত্যা করে। কেউ হয়তো অনৈতিক জীবন যাপন করে। এসবের পেছনে মূলত আল্লাহর বিধান না মানাই দায়ী।
যদি বিবাহপূর্ব সম্পর্ক তাদের না থাকত, বিয়ের পর তারা দু’জনেই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলত, ডাক্তার আকাশের মতো মিতুও বিয়ের পর সংযত হয়ে যেত, তাহলে এত অশান্তির জিন্দেগি হতো না। স্বামী আকাশকেও আত্মহত্যা করতে হতো না। স্ত্রী মিতুরও এমন মিডিয়া ট্রায়াল হতো না। তার অসংযত জীবন জনসমক্ষে আসত না।
আল্লাহর বিধানেই রয়েছে, শান্তি কিন্তু উপলব্ধি করার মতো মন সবার নেই। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, বিয়ের দেনমোহর বেশি ধরায় ডা. আকাশকে মরতে হয়েছে; তাদের কথা ঠিক নয়। দেনমোহর স্ট্যাটাস অনুযায়ী হয়। বিয়েও কুফু অনুযায়ী হয়। কুফু মানে সমকক্ষতা। দ্বীনদারি ও নৈতিক শিক্ষা না থাকলে অশান্তি হতে বাধ্য।
দেনমোহর কম-বেশি এখানে কোনো সমস্যা নয়। যারা পুরো ঘটনাটি বিশ্লেষণ না করে কেবল এক চোখ ব্যবহার করছেন, যারা এখানে আর কোনো সমস্যা খুঁজে না পেয়ে কেবল মোটা অংকের দেনমোহর দেখছেন, তাদের দেখার সমস্যা আছে। বিশ্লেষণ ক্ষমতার অভাব আছে। তারা একদেশদর্শী। তাদের চিন্তার ব্যাপ্তি প্রয়োজন। প্রয়োজন উভয়মুখী সুশিক্ষার। চোখের চিকিৎসাও প্রয়োজন।



 

Show all comments
  • Farhan Lannister ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
    সাধারণত খুব চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে বা আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠে। আবার কিছু জটিল মানসিক রোগের কারণেও একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। এ থেকে বাঁচার উপায় ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা।
    Total Reply(0) Reply
  • নুরুল আবছার ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
    আত্মহত্যা বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে, এটি ঠিক। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের মধ্যে মুসলিম দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে আত্মহত্যা কম হয়, যেহেতু ধর্মগত একটি বিষয় থাকে। এটি একটি ভালো দিক। কিন্তু ধর্ম থেকে দিন দিন দুরে সরে যাওয়ায় এটা বাড়ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাহেদ শফি ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    ইদানীং তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। কারণ, তারা ইদানীং ফেসবুক, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক খুবই বাড়ছে। হয়তো দুজন ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক হলো, আবার ভেঙে গেল। এই ক্ষেত্রে মেয়েটা কিন্তু আত্মহত্যা করে। ইদানীং এটি বেশি বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে কিন্তু ছেলে আত্মহত্যা করে না, মেয়েটা করে। সারা বিশ্বের পরিসংখ্যানে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা তিনগুণ বেশি আত্মহত্যা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • রিদওয়ান বিবেক ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৮ এএম says : 0
    আমি মনে করি মানুষ হতাশা থেকেই আত্মহত্যা করে। আর হতাশা তারাই হয় যারা ধর্ম থেকে দূরে সরে যায়। তাই সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি ছাড়া এটা কমবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • চিরুতা চিরতা ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:২৯ এএম says : 0
    শুকরিয়া জনাব। এক কথায় যদি বলি মানুষ ইসলামি অনুশাসন থেকে দূরে চলে গেছে তাই এত আত্মহত্যার ঘটনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Rahman ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৯:৩৮ এএম says : 0
    Islamic Sharia law is important to implement in the country to preventing all type of crimes and suicide. Islamic education are essential for all our Muslim brother and sister.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Haydar Ali ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৬ পিএম says : 0
    Yes, this is correct those who have enough trust on Allah and have Love for our Nabi Mohammad (PBH) in his heart, he could not makes suicide. Islamic teaching makes a person self-confident, responsible, honest and forgiver in society. He try to solve all his problem by peacefully, honestly and with patience. Patience is the greatest Arm in one life and Allah always with him those who have patience as per The Holy Quran. Honesty, Trust, Tolerance are the great value in Islam.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন