Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বন্ধের দেড় যুগেও চালু হয়নি নিউজপ্রিন্ট মিল

জমি বিক্রিতে ক্ষুব্ধ খুলনাবাসী

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:২৮ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

এশিয়ার বিখ্যাত কাগজকল খুলনার নিউজপ্রিন্ট মিল চালুর অনিশ্চিয়তায় ক্ষুব্ধ খুলনাবাসী। বন্ধের প্রায় দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি নিউজপ্রিন্ট মিল। অথচ বন্ধ থাকা খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের ৫০ একর জমি বিক্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়নি মিল চালু বা নতুন মিল প্রতিষ্ঠার।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জমি বিক্রির জন্য নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিসিএল) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বিসিআইসি। জমির জন্য ২০০ কোটি টাকা পরিশোধও করেছে এনডব্লিউপিসিএল। বাকি টাকা আসছে এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধের কথা রয়েছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের আন্দোলনের মুখেও খুলনা নিউজপ্রিন্ট জুট মিল চালুর বিষয়ে নতুন কোনো খবর নেই। ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলের সর্বশেষ সাইরেন বাজে। এসময় হাজার হাজার শ্রমিকের চোখের পানি ঝরিয়ে বন্ধ হয় মিলটি। এরপর আশা আর প্রতিশ্রুতির মধ্যদিয়ে কেটে গেছে আরও ১৬টি বছর। মিলটি চালুর প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মিল চালু হবে এমন প্রত্যাশা নিয়েই দিন কাটছে এখানকার শ্রমিক-কর্মচারীদের। আর অযত্ম ও অবহেলায় মিলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে জমি বিক্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও নিউজপ্রিন্ট মিলের বাকি ৩৭ একর জমিতে নতুন কাগজ কল স্থাপনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিসিআইসি থেকে কাগজ কল স্থাপনের বিষয়ে প্রকল্পই নেয়া হয়নি। অথচ মিলের জমি বিক্রি করার আগেই নতুন কাগজ কল স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ছিল। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ খুলনার মানুষ।
নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে জানা গেছে, মিল বন্ধ থাকার প্রায় এক যুগ পর ২০১৪ সালে ৮৭ একর জমিতে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও একটি কাগজ কল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় দুটি প্রস্তাব একসঙ্গে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
১৯৫৭ সালে ভৈরব নদের তীরে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের যাত্রা শুরু হয়। লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালে মিলটি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন জোট সরকার। এরপর মিল চালুর জন্য রাজপথে আন্দোলনে নামে খুলনা নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন, মিলের শ্রমিক-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ। কিন্তু আজও চালু হয়নি খুলনার বিখ্যাত কাগজকলটি।
সূত্র জানায়, নিউজপ্রিন্ট মিলের মোট জমির পরিমাণ ৮৭ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ৩৭ একর জমিতে মূল কারখানা অবস্থিত। বাকি ৫০ একর জায়গায় কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের কোয়ার্টার, হাসপাতাল, বিনোদন কেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে। মূল মিলের অংশ বাদে বাকি ৫০ একর জমি এনডব্লিউপিসিএলের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বিসিআইসি। গাছপালা ও স্থাপনাসহ এই জমির মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৫৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে সংস্থাটি।
বন্ধ থাকা এই কারখানা পাহারার দায়িত্বে আছেন ৪৫ জন নিরাপত্তারক্ষী। সকালের শিফটের ১৫ জনকে বিভিন্ন কোনায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেল। নিরাপত্তারক্ষীদের কয়েকজন ১৯৮০ সাল থেকে মিলে চাকরি করছেন। মিলের জমি বিক্রি হওয়ার সংবাদে সবারই মন খারাপ।
নিউজপ্রিন্ট মিল সিবিএর সাবেক সভাপতি নিজাম উর রহমান লালু বলেন, নতুন কাগজকল নির্মাণের কথা বলে জমি বিক্রি হলো। কিন্তু সেই কাগজকলেরই কোনো খবর নেই। বিসিআইসি খুলনার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নিউজপ্রিন্ট মিলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার মজুমদার বলেন, জমি বিক্রির বিষয়টি আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবকিছু হচ্ছে। তবে কাগজকল স্থাপনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিউজপ্রিন্ট মিল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ