Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ষড়যন্ত্রের জাল আবার বিস্তৃত হচ্ছে

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর’র পদত্যাগ

পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:৪২ পিএম

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। বুধবার বেলা ১২ টার দিকে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পদ ত্যাগপত্র দাখিল করেন। অতিসম্প্রতি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনা -সমালোচনা চলছে। তিনি এ ব্যাপারে পাবিপ্রবি’র ভিসি রুস্তম আলী ফারাজীকে মৃদু দোষারোপ করে 

পাবিপ্রবির প্রো-ভিসি ড. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ভাইস চ্যান্সেলর স্যার সকালে এক সিদ্ধান্ত নেন, বিকেলে তিনি আবার সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে দেন। বর্তমানে পাবিপ্রবিতে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এমতাবস্থায় তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলে তিনি পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, সম্প্রতি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এক যুবক শহরের রাধানগর মহল্লার একটি ছাত্রীনিবাসে ঢুকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হাত ধরে টানাটানিসহ শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এ সময় ওই যুবক ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা বিক্ষোভ করেন এবং সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দাবী জানান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়ক অবরোধ করেন এবং সুষ্ঠু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগও দাবী করেন।
প্রো-ভিসি ড. আনোয়ারুল ইসলাম আরো জানান, ভাইস চ্যান্সেলর স্যার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে গেল দশ মাসে সুষ্ঠু পরিবেশে একাধারে এক সপ্তাহ বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারেননি। তার ব্যার্থতার দায়ভার আমি নিব কেন? প্রতিনিয়ত একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ঝামেলা লেগেই থাকে। ইতোপূর্বে জরুরী রিজেন্ট বোর্ডের সভা করে ১০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের পর ২০ দিনের মাথায় আবারো বোর্ড সভা করে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চেইন অব কমান্ড বলে কিছু থাকে না। ডেপুটি রেজিষ্ট্রার প্রো-ভিসির আদেশ নির্দেশ অমান্য করে, তাই আমি মনে করি এখানে একদমই কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।
ডেপুটি রেজিষ্ট্রার ‘বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, আমার কোন ক্ষমতা নেই। এখানে ভাইস চ্যান্সেলর স্যার সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তার বাইরে আমি যেতে পারি না।’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয় বলেন, প্রো-ভিসি স্যারের যাওয়ার জায়গা আছে বলেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের অন্য কোথাও সুযোগ থাকলে আমি নিজেও এখানে থাকতাম না। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলর স্যার হস্তক্ষেপ করার কারণে নির্বাচন স্থগিত করে রেখেছেন নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই করুণ।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রোস্তম আলী ফরাজী বলেন, সম্প্রতি একটি বিষয় নিয়ে প্রো-ভিসি ড. আনোয়ারুল ইসলামের সাথে ডেপুটি রেজিষ্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম’র একটু ঝামেলা হয়েছে, এটি বসেই সমাধান করা সম্ভব। আমি তাকে পদত্যাগের এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্যে বলেছি। এটি পদত্যাগ করার মতো কিছু নয় বলেও দাবী করেন ভিসি।
প্রসঙ্গত, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর ৪ বছরের জন্যে পাবিপ্রবিতে প্রো-ভিসি হিসেবে যোগদান করেন।
প্রসঙ্গত : পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ষড়যন্ত্রজাল বিস্তারের ঘটনা নতুন নয়। পাবনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা নগরী করে ভুল করেছেন বলেও অনেকে মনে করেন। এখানে সৎ ভিসি’র পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। আগের ভিসি আল নকিব চৌধুরী পাবিপ্রবিকে দেশের অক্সফোর্ড করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরিবর্তে এটি দুর্নীতির দুর্গে পরিণত হয়। বর্তমান ভিসি রুস্তম আলী ফারাজী দুর্নীতির সাথে কোন আপোষ করছেন না। কতদিন টিকে থাকবেন বলা কঠিন। কারণ দুর্নীতিবাজরা ঐক্যবদ্ধ। ভাল মানুষের সাথে লোক থাকে কম এবং তাঁরা ঐক্যবদ্ধও নন। সাম্প্রতিক সময়ে নেশা আসক্ত যুবক কর্তৃক ক্যাম্পাসের বাইরে রাধানগরে একটি ছাত্রী নিবাসে শ্লীলতাহানি বিষয়ে যে ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে, এ ব্যাপারে পাবনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারী এবং আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল আহাদ বাবু ,জানান , ঐ যুবকের মায়ের বাড়িতে ছাত্রী নিবাসে কয়েকজন ছাত্রী থাকেন। একজন ছাত্রী রাত ৯ টার দিকে নিবাসে ফিরলে ঐ যুবক রাতে ফেরার কারণ জানতে চায়, এটাকেই নাকি শ্লীলতাহানির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে, পাবপ্রবি’র কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায় আগাগোড়া দুর্নীতিতে নিমজ্জিত পাবিপ্রবি’র এই জঞ্জাল পরিষ্কার করা ভিসি স্যারের একা পক্ষে সম্ভব নয়, তিনি এ কাজে অনেকের সহযোগিতাও পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত কার পেছনে দুই/একজন কর্মকর্তা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন, আর ভিসি স্যারের সামনে জ্বী স্যার ,জ্বী স্যার করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাবনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ