বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হাদিসে কত সুন্দর করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন, কিভাবে প্রতিবেশীর উপকার করা যায়। আহ! কতই না সরল ও দরদী শিক্ষক তিনি এই উম্মতের! গোটা মানবজাতির! সুবহানাল্লাহ।
আচ্ছা! প্রতিদিন তিন বেলা খাবার গ্রহণ করে থাকি আমরা। প্রতিদিনই নতুন নতুন পদের রান্নাও হয়, সেই রান্না থেকে একেক করে প্রতিবেশীদের জন্য যদি কিছু উপহার পাঠাই, খুব কি ক্ষতি হয়ে যাবে? এতটুকুতে কি আমরা গরিব হয়ে যাব?
অবশ্যই নয়। বরং এই সামান্য ও সাধারণ কাজের মাধ্যমে আমাদের চার পাশের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভীষণ আন্তরিকতা ও ভালোবাসাময় পরিবেশ পেতে পারি আমরা। আর আন্তরিক প্রতিবেশী পাওয়া নিজেদের শান্তি, আস্থা ও নিরাপত্তার জন্য কতই না দরকার। উম্মতের শান্তি ও নিরাপদ বসবাস কামনা করে পথ দেখান যে মহামানব, তিনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল।
আরেকটু অগ্রসর হই। আমাদের তো একাধিক বা অনেক প্রতিবেশী থাকেন, তা হলে আমরা কাকে আগে উপহার পৌঁছাব বা কার সঙ্গে আগে এবং অধিক সুসম্পর্ক বজায় রাখব? এরও নির্দেশনা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস থেকেই পেতে পারি।
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তো দু’জন প্রতিবেশী রয়েছে, আমি তাদের কোন জনকে হাদিয়া দেবো? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, যার ঘরের দরজা তুলনামূলক তোমার বেশি নিকটে, প্রথমে তাকে দেবে। -সহীহ বুখারী
এ হাদিসে নিকট প্রতিবেশীর অগ্রাধিকার সাব্যস্ত হয়েছে। যার সামর্থ্য কম, সে নিকটতম প্রতিবেশীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। যার সামর্থ্য বেশি, সে নিকট থেকে তুলনামূলক দূরবর্তী প্রতিবেশীরও উপকার করবে। এভাবেই প্রতিবেশীদের সীমা বা তালিকা নির্ণয় করে দেয়া যাবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সেই লোক, যে তার সঙ্গীর কাছেও ভালো এবং সর্বোত্তম প্রতিবেশী সেই লোক, যে তার প্রতিবেশীর কাছেও ভালো। -জামে তিরমিযী
এ হাদিসে বোঝা যায়, প্রতিবেশীর সেবা ও উপকারে শুধু প্রতিবেশীই খুশি হন না, আল্লাহও খুশি হন। আর প্রতিবেশী যাকে ভালো মানুষ হিসেবে পায় ও স্বীকার করে, তিনি আল্লাহর বিচারেও ভালো ও উত্তম মানুষ। কাজেই শুধু সামাজিক সৌজন্যতার খাতিরে নয়, আল্লাহতায়ালার রেজামন্দির উদ্দেশ্যেই প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে মুসলিম নারীরা! তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশীকে অধম বা তুচ্ছজ্ঞান না করে; যদিও সে ছাগলের একটি খুরই উপঢৌকন হিসেবে পাঠায়। -সহীহ বুখারী ও মুসলিম
এ হাদিসটিতে আমরা বিপরীত দিকের বা অবস্থানের নির্দেশনা পাই। অর্থাৎ প্রতিবেশী হিসেবে যখন অন্যরা আমাদের কিছু উপহার দেবে, সেটি যা-ই হোক, যেমনই হোক বা যতটুকুই হোক, সে উপহারকে খুশিমনে গ্রহণ করতে হবে এবং সে প্রতিবেশীকেও সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এ নিয়ে তাচ্ছিল্য বা বিমুখতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর মোটেও পছন্দ নয়। আর এতে প্রতিবেশীও যে কতটা কষ্ট পাবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।