Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদীখেকোদের দম্ভ ধূলিসাৎ

নিজেরাই সরাচ্ছে অবৈধ স্থাপনা  দুই দিনে উচ্ছেদ ১৫১ ভবন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের ধারক খরস্রোতা কর্ণফুলীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সাঁড়াশী অভিযান অব্যাহত আছে। গতকাল (মঙ্গলবার) দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযানে এস্কেভেটর-বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বহুতল ব্যবসায়িক ভবন, গুদাম, আড়ত, লবণের কারখানাসহ অবৈধ স্থাপনা। বুলডোজারের আঘাতে অবৈধ স্থাপনা ভূমিসাৎ হওয়ার সাথে সাথে ধুলিসাৎ হচ্ছে প্রভাবশালী নদীখেকোদের আস্ফালন, দম্ভ, হুমকি-ধমকি। এতদিন অবৈধ স্থাপনা রক্ষায় নানা হম্বি-তম্ভি করলেও অবস্থা বেগতিক দেখে তারা এখন মাথা নিচু করে নিজেদের উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। গত দুই দিনে যতটি স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে তার প্রায় সমান সংখ্যক স্থাপনা নিজেদের উদ্যোগে আংশিক অথবা পুরোটা উচ্ছেদ করে নিয়েছে দখলদাররা। এ অভিযানের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হলো দখলবাজদের মধ্য থেকে আপাতদৃষ্টিতে নেই কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। বরং চট্টগ্রামবাসী একে স্বাগত জানাচ্ছেন। গত দুই দিনে সবার মুখে মুখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল কর্ণফুলী নদীতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত অবৈধ শেষ স্থাপনাটি উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।
গতকালের অভিযানে একটি গুদাম ও ৩০টি লবণের কারখানাসহ ৩১টি বড় ভবন উচ্ছেদ করা হয়েছে। দখলবাজরা নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিয়েছেন দালান-কোঠাসহ ৪০টি স্থাপনা। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান জানান, দুই দিনের অভিযানে ছোট বড় দেড় শতাধিক ভবনসহ কয়েকশ স্থাপনা উচ্ছেদ করে চার একরের বেশি জায়গা উন্মুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, লবণ কারখানা বানাতে গিয়ে পুরো একটি খাল বেদখল হয়ে যায়। কারখানা উচ্ছেদের ফলে এখন খালটিও উন্মুক্ত হয়েছে। খালের মুখ বন্ধ করে লবণ কারখানা স্থাপন করায় খালটি প্রায় মরে গেছে। এ কারণে বর্ষায় নগরীর ওই এলাকার পানি খালে নামতে পারে না। তিনি বলেন, দুইদিনে জেলা প্রশাসন ৮১টি ভবন উচ্ছেদ করেছে। আর দখলবাজরা নিজ উদ্যোগে উচ্ছেদ করেছে ৭০টি ভবন। আজ (বুধবার)ও যথারীতি অভিযান চলবে।
উচ্ছেদের ফলে কয়েক দশকের বেশি সময় ধরে বেদখল হয়ে যাওয়া কর্ণফুলী মোহনায় উত্তর পাশের বিশাল এক এলাকা উন্মুক্ত হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সাথে সাথে লাল নোটিশ বোর্ড আর লাল পতাকা লাগিয়ে উন্মুক্ত জমি জেলা প্রশাসনের দখলে নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানান, উচ্ছেদের পর নদী পাড়ের বারিক বিল্ডিং থেকে শুরু করে কালুরঘাট রেলসেতু পর্যন্ত বিশাল এলাকায় আন্তর্জাতিকমানের পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এ স্বপ্নের পরিকল্পনার কথা সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
গতকাল সকালে জেলা প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শতাধিক শ্রমিক একযোগে উচ্ছেদ অভিযানে নামেন। কর্ণফুলী ডকইয়ার্ড থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের অভিযান। এ সময় আজমঘাটে বহুতল একটি গুদাম ভবনের একাংশ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর নদীর তীরঘেঁষে পাকিস্তান আমলে গড়েওঠা সারিবদ্ধ ৩০টি লবণের মিল গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এর আশপাশে থাকা আরও অনেক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দখলদারদের উদ্যোগে কয়েকটি লবণ কারখানা ও গুদাম থেকে শত শত শ্রমিককে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা যায়। আদালতের নির্দেশে শুরু হওয়া এ উচ্ছেদ অভিযান চলবে তিন ধাপে। কর্ণফুলীর মোহনা থেকে মোহরা পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকায় আড়াই হাজারের মতো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।

কর্ণফুলীর তীরে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হবে
কর্ণফুলীর দুইতীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর সেখানে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র করার পরিকল্পনার কথা জানালেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, নদীতীরে দৃষ্টিনন্দন একটি আন্তর্জাতিকমানের পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা আমার স্বপ্ন। আশাকরি এই স্বপ্ন পূরণ হবে। খুব শিগগির এই লক্ষ্যে একটি প্রকল্প তৈরী করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং পর্যটন, ভূমি ও নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করার কথা জানান তিনি। যেকোন মন্ত্রনালয় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারে। সিটি কর্পোরেশনও এটি করতে পারে। বিশ্বের উন্নত কয়েকটি দেশের উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের বড় বড় শহরকে ঘিরে নদীতীরে নান্দনিক পার্ক রয়েছে। এসব পার্কের কারণে নগরীর সৌন্দর্য বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম মহানগরী দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগর এবং এর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে উল্লেখ করে ডিসি বলেন, নগরবাসীর জন্য কোন বড় পার্ক নেই। উম্মুক্ত স্থানে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও নেই। শিশু-কিশোরদের সাইকেল চালানোর কোন ব্যবস্থা নেই। কর্ণফুলীর তীরে পার্ক গড়ে তোলা হলে সেখানে সাইকেলিংয়ের জন্য একটি বিশেষ লেইন রাখা যেতে পারে। দুই পাশে থাকবে ওয়াকওয়ে বা হাঁটার জায়গা। একদিকে শহর অন্যদিকে খরস্রোতা পাহাড়ি কন্যা কর্ণফুলী। নদীতে সারি সারি জাহাজ, নৌকা-সাম্পান। অন্যরকম এক আবহ তৈরী হবে।
প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকৃত জমিতে বন্দরের উদ্যোগে তারকাটা বেড়া এবং বনায়ন করার সুপারিশ করা হবে। হুমকি-ধমকি দিয়েও উদ্ধার অভিযান বন্ধ করা যাবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অভিযানে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের বিশ্রামের জন্য মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া হবে। উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনেক আগেই সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হলেও দখলদারদের কেউ কেউ এসব সীমানা পিলার তুলে ফেলে দিয়েছে। ফলে কিছু এলাকায় নতুন করে পিলার স্থাপন করতে হবে। এসব কারণে উচ্ছেদ অভিযানে কিছুটা সময় লাগতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ