পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনকে (বিআরটিসি) কেন্দ্র করে ঠিকাদার, চালক, ডিপো ম্যানেজার ও কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি অসাধু চক্র গড়ে উঠেছে। এসব চক্রের বিরুদ্ধে নষ্টগাড়ি মেরামত না করা, রক্ষণা-বেক্ষণে অবহেলা, অর্থ কেলেঙ্কারী, মবিল ও পার্টস চুরিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এদিকে গত ১০ বছরে সরকারের কিনে দেয়া গাড়িগুলো রক্ষণা-বেক্ষণ ও অযত্ম-অবহেলার কারণে অর্ধেকের বেশি নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে বাস সঙ্কটে গত কয়েক বছরে ২০টিরও বেশি রুটে যাত্রী সেবা বন্ধ রয়েছে। এ সঙ্কট কাটাতে এ বছর সংস্থাটির বহরে ১১শ’ নতুন গাড়ি যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে মোট গাড়ির সংখ্যা ২১শ’র মতো হবে। ইতোমধ্যে কিছু গাড়ি ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভারত থেকে আনা এসব নতুন গাড়ির মান অনেক নিম্নমানের। কয়েক বছররের মধ্যেই বেশিরভাগ গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে এসব গাড়ি আমদানি করছে। যদিও বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত কয়েকদিন মিরপুর, কমলাপুর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর ও গাবতলী ডিপো ঘুরে নানা অনিয়ম চোখে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে-ডিপোগুলোতে অনেক জরাজীর্ণ বাস পড়ে আছে। কিছু কিছু বাস মেরামত করা আবার রাস্তায় নামানো সম্ভব হলেও কিছু বাস পুরোপুরি মেরামতের অযোগ্য। ডিপো কয়েকজন কর্মচারী জানান, একটি চক্র এসব বাস মেরামতের নামে ভুয়া বিল করে টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এছাড়া চলাচলরত বাসের টাকা আত্মসাৎ, পুরনো মবিল দেখিয়ে নতুন মবিলের বিল, নিম্নমানের টায়ার-টিউব ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে অতিরিক্ত বিল আদায় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও এসব অনিয়মের বিষয়ে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
গত ২২ জানুয়ারি মতিঝিলে বিআরটিসি কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিআরটিসির মধ্যে খুব একটা সুনামের বিষয় নেই। এখানে অনিয়ম দুর্নীতির জঞ্জাল দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধে আছে। তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, এখানে কার কত ইনকাম আমি ভালো করে জানি। কীভাবে ইনকাম হয় তাও জানি। এ সময় মন্ত্রী হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, নতুন গাড়ি আসছে। আশা করছি মানুষ স্বস্তি পাবে। কিন্তু গাড়িগুলো কতদিন টিকবে সে বিষয়ে তিনি নিজেও সন্দেহ প্রকাশ করেন।
বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটি টানা কয়েক বছরের লোকসানের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২১টি ডিপোর ২০টিতেই চালক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কয়েক বছর যাবত বহরে নতুন গাড়ি যোগ হচ্ছে না। এর মধ্যে অনেক পুরনো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। যার কারণে স্টাফদের ব্যায় মেটানোর জন্য যে পরিমাণ আয় দরকার তা হচ্ছে না। প্রতি বছরই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এদিকে, গত বছর ডিসেম্বর সামে খিলক্ষেতের জোহার সাহারায় ডিপোসহ বেশ কয়েকটি ডিপোর শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে।
বিআরটিসির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির সচল বাসের সংখ্যা এখন ৯২০টি। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে ৪৫০টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আর বিভিন্ন সরকারি অফিসের স্টাফ পরিবহনে লিজ দেওয়া হয়েছে ২৭২টি বাস। অচল ৩০০ বাসের মধ্যে ৫০টির মতো বাস মেরামত করে রাস্তায় চালানো হচ্ছে। এছাড়া ট্রাক রয়েছে ৮৫টি। নতুন ১১শ’ বাস-ট্রাক আসলে বিআরটিসির বহর গাড়ির সংখ্যা ২১শ’ ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে, ২০০২ থেকে ২০১২ সালে ৫০৭টি চায়না, ডায়ো ও ভলবো বাস কেনার পরে চার বছরের মধ্যে সেগুলো বিকল হয়ে গেছে। বাসগুলো এখন বিআরটিসির ডিপোতে বাগাড়ের মত পড়ে আছে।
জানা গেছে, জানুয়ারিতে বিআরটিসির বহরে ১০০টি নতুন বাস যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। যার মধ্যে কিছু বাস এসেছে। বাসগুলো বর্তমানে গাজীপুরের বিআরটিসি বাস ডিপোতে রাখা হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে আরও ২০০টি এসি বাস ও ৫০০টি ট্রাক এই বহরে যোগ হওয়ার কথা। এপ্রিলের শেষ নাগাদ আসবে ৩০০ ডাবল ডেকার বাস।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, প্রথম লটে ৪২টি নন এসি বাস, ৫টি এসি, এবং ২৫টি ট্রাক বেনাপোল হয়ে ঢাকায় এসেছে। ৩০০ ডাবল ডেকার ছাড়া সব বাস-ট্রাক মার্চের মধ্যে চলে আসার কথা রয়েছে। বাসগুলোতে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় যাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে। জানা গেছে, ৩০০টি ডাবল ডেকার ঢাকা সিটির জন্য। আর ২০০টি নন এসি ও ১০০টি নন এসির কিছু বাস ঢাকা ও কিছু আন্তঃজেলা রুটে চলাচল করবে।
এদিকে, নতুন আনা বাসের মান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। বাসগুলো নিম্নমানের বলে অভিযোগ করেছে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যদিও বিআরটিসি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অভিযোগ উঠেছে- ভারত থেকে আনা নতুন বাসগুলো অনেক নিম্নমানের। এর স্থায়ীত্ব অনেক কম। এছাড়া বাসগুলোতে ল্যাগেজ ক্যারিয়ার নেই এবং স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মান ঠিক রাখা হয়নি।
কয়েকজন পরিবহন মালিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, জাপান, চীনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের গাড়ির মানের তুলনায় ভারত থেকে আনা গাড়ি নিম্ন মানের। এর আগেও ভারত থেকে আনা গাড়ি নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবহন মালিকদের ভাষ্য, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ভারত থেকে নিম্নমানের গাড়ি আনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূইয়া বলেন, ভারতের রুটে যেসব বাস চলে ওই রকম বাসের মধ্যে সর্বোচ্চ কোয়ালিটির বাস আনা হচ্ছে। একেকটি বাসের দাম ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা পড়েছে। তিনি আরও বলেন, স্পেসিফিকেশন যা চাওয়া হয়েছে সেভাবেই বাস আসছে। যার কারণে বাস আনতে তিন বছর সময় লেগে গেছে।
নতুন বাসগুলো আগের একতলা বিআরটিসি বাসের মতো অনেকটা দেখতে হবে বলে বিআরটিসি সূত্র জানিয়েছে। তবে বর্তমানে আনা বাসগুলো অনেক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন। নতুন বাসগুলোতে টেলিভিশন, সিসি ক্যামেরা, ওয়াফাই সুবিধাসহ আরামদায়ক আসন ও প্রশস্ত জানালা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি থাকবে ১০৫ কিলোমিটার। এছাড়া বড় করে লাল রঙ্গের ওপরে সাদা অক্ষরে ‘বিআরটিসি’ লেখা আর দরজার পাশে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ লেখা রয়েছে। বিআরটিসির চেয়ারম্যান বলেন, নতুন বাসগুলো দিয়ে উন্নতমানের যাত্রী সেবা দেয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ভারতের ২০০ কোটি ডলার ঋণের আওতায় দেশটি থেকে ৬০০ বাস ও ৫০০টি ট্রাক আমদানি করা হচ্ছে। এসব বাসের মধ্যে ৩০০টি দ্বিতল, ১০০টি একতলা সাধারণ বাস এবং ২০০টি এসি বাস আসার কথা রয়েছে। দ্বিতল ও একতলা এসি বাসগুলো তৈরি করছে ভারতের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অশোক লিল্যান্ড। গত ১৫ জানুয়ারি ডাবল ডেকার বাস তৈরির কারখানা পরিদর্শনে বিআরটিসির একটি টিম ভারতে গিয়েছে।
বর্তমানে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটে (এলওসি) আনা বাসগুলো একই রকম হতে পারে এমন অভিযোগের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, নতুন আনা বাসগুলো আগের বিআরটিসি বাসের মত হবে না। কারণ নতুন আনা বাসের সঙ্গে ১০ ভাগ স্পেয়ার যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। আর বাসের কলাকৌশল নিয়ে দেশীয় কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণও দেবে বাস কোম্পানি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিসির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিআরটিসিকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র আছে। বিভিন্ন পরিবহন মালিকদের চাপের মুখে হোক বা তাদের থেকে কোনো অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে বিআরটিসিকে সামনে এগুতে দিচ্ছে না। যার কারণে ধীরে ধীরে সংস্থাটি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।