Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

দুদক কী জজ মিয়া নাটক বানাচ্ছে

জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুলে ৩ বছর ধরে কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এই আদেশ দেয়। আদালত বলেছে, কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা নই। দুদকের ভুল তদন্তে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা, সিন্ডিকেট থাকলে কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করে আদালতকে জানাতে হবে। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।
দুদককে কাজকর্মে আরো স্বচ্ছ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেন, আমরা দেখতে চাই দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। দুদকের ফলস ইনভেস্টিগেশনের সুযোগ কোথায়? বিনা দোষে জাহালমকে কারাগারে রাখা আরেকটি জজ মিয়ার নাটকের মতো ঘটনা। আপনারা জজ মিয়া নাটক আরেকটি বানালেন নাকি?
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের জাহালমকে। গত ৩০ জানুয়ারি এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আসার পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে ভুল আসামির কারাগারে থাকার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে তলব করেন আদালত।
আদালতে দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। জাহালমের পক্ষে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান, মামলার বাদী আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং আইন সচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির ছিলেন। শুনানিতে দুদক আইনজীবী জাহালমের বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ভুল বলে জানান।
শুনানিতে যা হল: শুরুতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সোনালী ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়ার পর দুদক আবু সালেকের বিরুদ্ধে মামলা করে। দুদক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল জাহিদ মামলার অনুসন্ধান করেন। তার অভিযোগপত্রে জাহালমের নাম উঠে আসে। টাঙ্গাইলের স্থানীয় চেয়ারম্যানরা জাহালমকে সনাক্ত করেন। এ পর্যায়ে আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এ মামলায় যাকে আসামি করা উচিৎ ছিল, তাকে আসামি না করে সাক্ষী বানালেন। জজ মিয়া নাটক আরেকটি বানালেন নাকি? দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা। বাংলাদেশের জন্য দুদকের মত একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিআইবি কী রিপোর্ট দিল সেটা আমাদের কনসার্ন না। কারণ টিআইবিও ভুল করতে পারে। দুদক যদি প্রোপরলি কাজ না করে তাহলে আমাদের যে উন্নয়ন হচ্ছে তার স্থায়ীত্ব থাকবে না। দেশ পাকিস্তান হতে বেশি সময় লাগবে না, আমাদের ভিক্ষা করতে বসতে হবে।
আদালত বলেন, আমরা দুদকের কাজে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করুক এটা আমরাও চাই। আগেও আপনাদের (দুদক) ব্যাংকের দুর্নীতি মামলায় সাবধান করেছি। মনে রাখতে হবে এটি একটি স্বাধীন দেশ। অনেক মামলায় দেখেছি, আপনারা কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামার আগেই তাকে নোটিশ দিয়ে দেন। অথচ পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই নেই। তাহলে কেন নোটিশ দিচ্ছেন? একজন অপরাধী না হওয়ার পরও জেল খাটতে হল কেন? দুদককে স্বচ্ছ হতে হবে। এরপর আদালত জাহালমকে দুদকের ২৬ মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী তখন বলেন, জাহালমের বিষয়টি যখনই আমাদের নজরে এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়েছে।
তখন আদালত দুদকের আইনজীবীকে বলেন, আপনার যখন বুঝতে পারলেন যে লোকটা নির্দোষ, তখন আপনারা কী করেছেন? একদিনের জন্যও আপনারা তাকে রাখতে পারেন না। কেন আপনারা তার মুক্তির ব্যবস্থা করলেন না? এক দিনের জন্যও আপনারা তাঁকে রাখতে পারেন না।
জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, অধিকতর তদন্তে জাহালমের বিষয়টি জানার পর দুদকের পিপিরা জাহালমের জামিনে কোনো আপত্তি করেননি। ইতোমধ্যে ৪ মামলা থেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই মামলায় যে তদন্তকারীরা জাহালমের নামে ভুলভাবে অভিযোগপত্র দিয়েছে,তাদের বিরুদ্ধ দুদক কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চায় আদালত।
জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, জাহালমকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিলে দুদকের কোনো আপত্তি থাকবে না। আদালত তখন বলেন, জাহালমের কারাবাসের মেয়াদ একদিন বাড়বে, তো আপনার (দুদক) ওপর কমপেনসেশন বাড়বে। কমপেনসেট করতে হবে। দুদক করুক বা ব্যাংক করুক।
ভুয়া তদন্তের কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে আদালত বলেন,দুদককে অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের অভ্যন্তরীণভাবে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে আমাদের ইন্টারফেয়ার করার সুযোগ থাকবে না। যদি না হয় তাহলে কিন্তু আমরা করব। শুনানির শেষ পর্যায়ে আদালতে উপস্থিত এক উপ-কারামহাপরিদর্শকে আদালত বলেন, আপনারা আজই জাহালমকে রিলিজ করে দেবেন। দুদক এর খরচ দেবে। এরপর আদালত আগামী ৬ মার্চ বিষয়টি পরবর্তী শুনানির জন্য রাখে।
পরে অমিত দাস গুপ্ত বলেন, জাহালমকে ২৬ মামলায় অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরো সাত মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি। ফলে তাঁর মুক্তিতে আর বাধা থাকছে না। নিরীহ জাহালমকে গ্রেফতার ও কারাগারে রাখার ঘটনায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।



 

Show all comments
  • md.samshuddin ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    জড়িত দুদক কর্মকর্তার সম্পত্তি জব্দ করে জাহলামকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • msIqbal ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    '৩৩টি' মামলার মধ্যে '২৬টিতে' জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসিবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক! এটি কোনো ভাবেই ভুল নয়। ভুল একটা হতে পারে, সর্বোচ্চ দুইটা! এটি পরিকল্পিত! আদালত ঠিকই বলেছেন, এখানে একটি সিন্ডিকেট আছে! সুতরাং, একটা বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক!! দুদুকের উচিত আড়াল করার চেষ্টা না করে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের সম্মুখীন করে নিজের ইমেজ পুনরুদ্ধার করা! .... বিচারক আজকের শুনানিতে ২৬ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া কর্মকর্তাদের জাহালমকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিলে ভালো করতেন।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    প্রকৃত অপরাধীকে ধরতে না পেরে দুদক একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দিয়ে তাকে ৩ বছর জেল খাটিয়েছে। এটা একটা অপরাধ। শুধু দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করে এ ধরনের অপরাধ থেকে দুদক পার পেতে পারে না। এর জন্য দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবশ্যই শাস্তি দেয়া দরকার। মানুষের জীবন নিয়ে এই ছেলেখেলা ক্ষমার অযোগ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiul Alam Rasel ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    ক্ষতিপূরণ কে দেবে?!শুধু মুক্তিই কি যতেষ্ট ?
    Total Reply(0) Reply
  • Hussain Shazib ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    এই তিন বছর সে যে কষ্ট করেছে, তার জন্য তার পরিবার যে এতো কষ্ট ভোগ করেছে, তার জন্য কি পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করা যেতো না? আর, এক বছর আগেই যখন জানতে পারলেন ইনি অপরাধী না, তারপরও তাকে এতো দিন জেলে থাকতে হলো, তার কি হবে? গাফিলতির জন্য কি কোনো সাজা পাবে না কেউ?
    Total Reply(0) Reply
  • Zubayer Rahman ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    মাননীয় বিচারকের এই কঠোরতা প্রশংসার যোগ্য। মাননীয় আদলত দুদককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ধন্যবাদ মাননীয় আদালত কে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    ha ha ha. What a system. Jahalam should case against dudak and its officials.
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Md Mofazzal Hossain ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    বিনা আপরাধে ৩ বছর হাজতবাস, দায়ীদের শাস্তির দাবী করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Anjan Ghosh ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    Investigation officer must be kept in prison as long as jahalam was. Moreover jahalam should be compensated properly by the biased commission.
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    প্রায় এক বছর আগে জাহালমের বিষয়টি একটা বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে দেখেছিলাম। দুদক এতদিন কি করলো তাহলে? তার তো আরো আগে মুক্তি পাবার কথা!
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Abdul Khaleque ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    মাননীয় বিচারকের কঠোরতা প্রনিধানযোগ্য। সকল পক্ষকে যার যেমন প্রাপ্য পুরস্কার ও তিরস্কার তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে মাননীয় আদালতকে অনুরোধ করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shakib Khan ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    একই সঙ্গে আদালত এই ভুল তদন্তের সঙ্গে কারা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন বলে জানান।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahidul Islam ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    একবার বলছে “তবে গত বছর দুদকের নজরে আসে জাহালম প্রকৃত আসামি আবু সালেক নন” আরেকবার বলছে ”জাহালমের বিষয়টি যখনই আমাদের নজরে এসেছে, তখনই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে” এটা যদি গুরত্বের সাথে নেওয়া হয় তবে কম গুরুত্বের কি?
    Total Reply(0) Reply
  • Mithu ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির হোতাকে চিহ্নিত করা গেলো না তার বদলে একজন নিরোপরাধকে ফাঁসিয়ে দেয়া হলো , মনে হচ্ছে জজ মিয়া নাটকের সেকেন্ড এডিশন
    Total Reply(0) Reply
  • MD.ABDUR RAHMAN ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    আমাদের নিম্ন আদালতগুলোর আরো বেশি দায়িত্ব নিতে হবে, আরো বেশি সতর্ক হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • sats1971 ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৩৩ পিএম says : 0
    During Bangabandu starting mobile court any where in Bangladesh, any crime incident happened any place this court will start from the crime spot till clear concept of criminal activities, like a robbery happened in a village of Dhaka, quickly mobile court established this village and started their investigation and witness and suspected people activities Upto 90 days than fresh case list will put up to the district court for justice, after death of Sk Mujibur Rahman than it is vanished, So that if the mobile court established the village of Jahalam than it is cleared investigation withing 30 days same all accused villages also, now we think that was well example in the world.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ