Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানবী সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণী এবং কুসতুনতিনিয়া বিজয়

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

তুরস্কের প্রাচীন শহর কুসতুনতিনিয়া বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মহানবী সা:। তাই এটি বিজয়ের জন্য মুসলমানগণ অত্যন্ত আগ্রহী ও উৎসাহী ছিলেন।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু আইউব আনসারী রা: ছিলেন তাদেরই একজন। কুসতুনতিনিয়া আজো তার পবিত্র স্মৃতি বহন করে চলছে। হিজরী ৫১ সালে কুসতুনতিনিয়ায় প্রথম অভিযানকালে তিনি অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করলে সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। ঘটনার বিবরণ নিম্নরূপ : প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের সুপ্রসিদ্ধ শহর ইউরোপীয়দের কনস্টান্টিনোপল এবং মুসলমানদের কুসতুনতিনিয়া ইস্তাম্বুল নামে উসমানীয় তুর্কি খেলাফতের রাজধানী হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। রাসূলুল্লাহ সা: এই শহর সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের সামনে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন : “লাতাফতাহুন্নাল কুসতুনতিনিয়াতা, ফালা নে’মাল আমীরূ আমীরূহা ওয়ালানে’মা জাকাল জাইশু।” অর্থাৎ নিশ্চিতরূপে তোমরা কুসতুনতিনিয়া জয় করবে। সুতরাং তার শাসক কতই না উত্তম হবে এবং তার জয় লাভকারী সৈন্যরাও কতই না উত্তম হবে! (মুসনাদে আহমদ)।
কুসতুনতিনিয়া বিজয়ের সৌভাগ্য অর্জনের লক্ষ্যে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল থেকে অভিযান পরিচালনার স্বপ্ন দেখা হলেও হিজরী ৪৯/৬৬৯ সালে সর্বপ্রথম হযরত আমীর মোয়াবিয়া রা: কুসতুনতিনিয়ায় অভিযান পরিচালনা করেন। এই অভিযানে অন্যান্য প্রসিদ্ধ সেনাপতি ছাড়াও বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা: অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করেন। হযরত মোয়াবিয়া-তনয় ইয়াজিদও এই অভিযানে একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
শহর অবরোধকালে হযরত আনসারী রা: অসুস্থ হয়ে পড়লে ইয়াজিদ তার খেদমতে উপস্থিত হয়ে কোনো উপদেশ আছে কি না জিজ্ঞেস করেন। আনসারী রা: বলেন : ‘আমাকে দুশমনের ভূখন্ডের যতটুকু সম্ভব অগ্রভাগে নিয়ে যাবে এবং মৃত্যু হলে সেখানেই দাফন করবে।’ এই অছিয়ত (উপদেশ) বাস্তবায়ন করা হয়েছিল এবং ইন্তেকালের পর হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা:-কে কুসতুনতিনিয়ার প্রাচীরের নিকট দাফন করা হয়। অতঃপর রোমানদেরকে সাবধান করে দেয়া হয়, যদি তাঁর কবরের কোনো ক্ষতি সাধন করা হয়, তাহলে আরবের কোনো গির্জায় কখনও ঘণ্টা ধ্বনিত হবে না।
যা হোক, শহরটি অবরুদ্ধ হলেও কখনও তা জয় করা সম্ভব হয়নি। এই অভিযানের পর বিভিন্ন সময় এই শহর মুসলমানদের পক্ষ হতে অবরোধ করার কথা জানা যায়। কিন্তু তুর্কি খেলাফতের আগে তা কেউ জয় করতে পারেনি। উসমানীয় তুর্কি সুলতান ওরখান (১৩২৬-১৩৫৯)-এর আমলে পূর্ব ইউরোপে তুর্কি বিজয়ের ফলে তুর্কিদের ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়।
ওরখানের ৩৩ বছরব্যাপী শাসনামলে বাইজান্টাইনি এলাকা অধিকার ছাড়াও তুর্কি রাজ্যগুলো উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম বাইজিদ ইলদ্রিম (১৩৮৯-১৪০২)-এর আমলে প্রথমে কুসতুনতিনিয়া অবরোধ করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পর দশ বছরের সন্ধির মাধ্যমে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এই সময় কুসতুনতিনিয়ায় একটি ইসলামী আদালত কায়েম করা হয়, যাতে একজন তুর্কি কাজী (বিচারক) নিয়োগ করা হয় এবং সেখানে একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৩৯৭ সালে বাইজিদ কর্তৃক গ্রিক অধিকার করার পর পুনরায় কুসতুনতিনিয়া অবরোধ করেন ।
কিন্তু তৈমুরলঙ্গের সাথে সংঘর্ষের ফলে এই অবরোধও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যায় । অতঃপর ১৪২২ সালে দ্বিতীয় মুরাদ কুসতুনতিনিয়ায় ব্যর্থ অবরোধ করেন। এরপর মোহাম্মদ ফাতেহ (১৪৫১-১৪৮১) কুসতুনতিনিয়া বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং ১৪৫৩ সালের ৬ এপ্রিল অবরোধ করেন এবং মে মাসে শহরের পতন ঘটার পর শহরটি তুর্কিদের অধিকারে আসে ।
কুসতুনতিনিয়ায় অভিযান চালাতে গিয়ে মুসলমানগণ বারবার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং সফল হতে পারেননি। কিন্তু তুর্কি সুলতান মোহাম্মদ ফাতেহর সৌভাগ্য যে, তিনি সর্বপ্রথম এই শহর জয় করে মুসলিম গৌরবের এক নয়া অধ্যায় সূচনা করেন এবং মহানবী সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়ন করে বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হন।



 

Show all comments
  • মোঃ আজহার রুবেল ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
    সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র দ্বিতীয় মুহম্মদ ১৪৫১ খৃস্টাব্দে ২১ বছর বয়সে তুরস্কের সিংহাসনে আরোহণ করেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা ও রাজ্যবিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি তুরস্কের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। কনস্টান্টিনোপল [বর্তমান নাম ইস্তাম্বুল] বিজয় সুলতান দ্বিতীয় মুহম্মদের রাজত্বকালের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
    Total Reply(0) Reply
  • সরল পথ ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পশ্চাতে কতগুলো কারণ নিহিত ছিল। প্রথমতঃ কনস্টান্টিনোপল এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এর সামরিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে সামরিক ও বাণিজ্যিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম খলিফাগণ কনস্টান্টিনোপল জয়ের জন্য বার বার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হন। খিলাফতের পতনের পর কনস্টান্টিনোপলের বিজয়কার্য অটোমান [তুরস্ক] সুলতানদের ওপর ন্যস্ত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • সাহেদ শফি ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    অটোমন সুলতানগণ কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এ কারণে ওসমান, বায়োজীদ ও মুরাদ তা জয় করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তাই সুলতান দ্বিতীয় মুহম্মদ সিংহাসনে আরোহণ করার পর মুসলিম খলিফাদের ও তার পূর্বপুরুষদের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের জন্য মনস্থির করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ বিন জাফর ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
    ব্যর্থতার পরেও উসমানীয় (অটোমান) সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ (তুর্কী ভাষায় মেহমেদ) সিদ্ধান্ত নেন কনস্টান্টিনোপল দখলের। ১৪৫১ সালে মাত্র ১৯ বছরে সিংহাসনে বসা সুলতানকে শুরুতে তার দেশের লোকেরাই খুব একটা পাত্তা দেয়নি, সেখানে আশেপাশের অন্য সাম্রাজ্যরা তাকে কোনো হুমকি হিসেবেই গণ্য করেনি। এ অবহেলার সুযোগটাই নেন সুলতান মুহাম্মদ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সোহেল রাড়ি ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
    মুসলমানদের কনস্টান্টিনোপল বিজয় কেবল অটমান তুরস্কের ইতিহাসের নহে, বরং পৃথিবীর ইতিহাসের একটি যুগসন্ধিক্ষণকারী ঘটনা।
    Total Reply(0) Reply
  • রিদওয়ান বিবেক ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
    কনস্টান্টিনোপল অধিকারের পর সুলতান মুহম্মদ আদ্রিয়ানোপল থেকে রাজধানী কনস্টান্টিনোপল স্থানান্তর করলেন এবং পরবর্তীতে কনস্টান্টিনোপল মুসলিম তথা বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞানের উজ্জ্বল তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়। তাই কনস্টান্টিনোপল বিজয় ছিল সুলতান দ্বিতীয় মুহম্মদের শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahshin Mia ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
    এই যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হলেও ইউরোপের একটা বড় উপকার হয়ে গিয়েছিল আর সেটা হলো 'রেনেসাঁ'। fall of Constantinople এর পরে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের জীবিত মানুষ গুলো বসফরাস প্রণালী পেরিয়ে ইউরোপের ওপারে পাড়ি দেয়। ওদিকে 'Black death' (plague) এর কারনে ইউরোপের জনসংখ্যা অনেকাংশে কমে যাওয়ায় তারা ভাল ভাবে বেচে থাকার পথ খোজা শুরু করে।মানুষ গুলো গিয়ে জড়ো হয় ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে, যেখান থেকে শুরু হয় ইতালির তথা ইউরোপের রেনেসাঁ বা পুনঃজন্ম দ্য ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো, মেদিচী নামক রাজকীয় বংশের হাত ধরে। তারপর থেকে ইউরোপ উত্তরোত্তর উন্নতি করতে থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Enamul Hasan Shamim ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
    মোহাম্মদ আর ফাতেহ মুভিটা দেখতে পারেন অনেকেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Asif ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১১ এএম says : 0
    Latuf tahannal Qustantinia, fala niamal amir amiruha, wala niamal jaish , jalikal jaish......... Mashallah,, jotobar suni hadith ta,,,, mon ta juriye jay.....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন