পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের ফারাক্কা ও তিস্তা ব্যারেজের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দেশের ৫৩টি নদ-নদীতে বিরূপ প্রভাব চলেছে। পানি শূন্যতার ফলে মানুষের আয়ের উৎস ও জীব-বৈচিত্র্যে আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এর কারণে দেশ বর্তমানে কার্যত তিন ঋতুর দেশে পরিণত হয়েছে। এই তিন ঋতুর মধ্যে পার্থক্য দেখা দিয়েছে, গরম ও বর্ষা দীর্ঘস্থায়ী এবং স্বল্পস্থায়ী হয়ে পড়েছে শীত। ‘মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে।’ এই প্রবাদ উল্টে গেছে। এখন মাঘের শীতে বাঘে হাসে বলা যায়।
ফারাক্কা ও তিস্তার গোজাল ডোবা ব্যারেজের কারণে দেশের নদ-নদী শুষ্ক মওসুম শুরু হওয়ার আগেই পানি শূন্য পড়ছে। এই পানি শূন্যতা এক দিনে হঠাৎ করে হয়নি। ফারাক্কা কারণে ৪৪ বছরের ধরে ধীরে ধীরে নদ-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে শুষ্ক মৌসুমে। ফারাক্কার কারণে শুকিয়ে গেছে গঙ্গার স্রোত ধারার পদ্মা, গড়াই, আত্রাই, বড়াল, চিকনাই, হুরাসাগরসহ এর শাখা ও প্রশাখা নদ-নদী সমূহ এবং তিস্তা ব্যারেজের কারণে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র যমুনা, করতোয়া, ফুলঝোরসহ এর শাখা প্রশাখা নদী।
মূল নদ-নদীর পানি প্রবাহ না থাকায় শাখা নদীতেও পানির টান পড়ে। উপ-নদী মূল এবং শাখা নদী থেকে পানি নিয়ে অপর নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে না। পানি শূন্যতার ফলে দেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এই মরুকরণ এখন স্থায়ীরূপ নেওয়ার উপক্রম হয়েছে। নদ-নদীর পানি স্বল্পতার কারণে বিল-জলাশয়ে পানি যাচ্ছে না। চলন বিলের বিস্তৃত অংশ পানি শূন্য হয়ে পড়ছে।
এক সূত্রে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে ভারত বাংলাদেশকে জানায় যে, ফারাক্কা বাঁধের ফিডার ক্যানাল পরীক্ষা করা তাদের প্রয়োজন। সে সময় ভারত ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ১০ দিন ফারাক্কা থেকে ৩১০-৪৫০ কিউবিক মিটার/সেকেন্ড গঙ্গার প্রবাহ প্রত্যাহার করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অনুমতি প্রার্থনা করে। বাংলাদেশ সরল বিশ্বাসে এতে সম্মতি জ্ঞাপন করে। ভারত বাঁধ চালু করে দেয় এবং নির্ধারিত সময়ের পরেও একতরফাভাবে গঙ্গার গতি পরিবর্তন করতে থাকে যা ১৯৭৬ সালের পুরো শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এর উদ্দেশ্য ছিল কলকাতা বন্দরের নাব্য উন্নয়নে পলি ধুয়ে নিতে শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা নদী থেকে পশ্চিমবঙ্গের ভাগিরথী-হুগলী নদীতে এক হাজার ১৩০ কিউবিক মিটারের বেশি পানি পৌঁছে দেওয়া।
এতে নি:শেষ হতে থাকে পদ্মা ও এর শাখা নদীসমূহ। ক্রমেই পরিস্থিতি ভয়াবহরূপ নিতে থাকে পদ্মা নদীর দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। দেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া স্থায়ীরূপ নিতে থাকে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশ ৩০ সাল মেয়াদী গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তি হয়। চুক্তির পরও শর্ত ভঙ্গ করে, যেমনটি তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে করেছিল। তার সরল বিশ্বাসের মর্যাদা না রেখে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রক্রিয়া আর বন্ধ করেনি।
ভারত আমাদের শুধু প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রই নয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে তারা সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশের জাতি সেটি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। কিন্তু পানি নিয়ে ‘কূটনৈতিক দাবা-খেলা’ বন্ধুর কাছ থেকে কাম্য হতে পারে না। ফারাক্কা ব্যারেজের অপপ্রভাব বিরাজমান থাকা অবস্থায় তিস্তা নদী উজানে গোজালডোবা বাঁধ নির্মাণ করে। তিস্তা নদী সিকিম হিমালয়ের ৭ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এই নদীটি সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা নদী ও পদ্মা নদীর মত আন্তর্জাতিক নদী।
তথ্যসূত্র মতে, নদীটি বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে এক হাজার ৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের অতিবৃষ্টি জনিত কারণে ব্যাপক বন্যা দেখা দিলে সেই সময় নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩০৯ কিমি। তার মধ্যে ১১৫ কিমি বাংলাদেশ ভূখন্ডে অবস্থিত। তিস্তা এক সময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নদী নামে পরিচিত।
গজলডোবা (তিস্তা) ব্যারেজ ২২১ দশমিক ৫৩ মিটার দীর্ঘ, ৪৪ গেট বিশিষ্ট গজলডোবা বাঁধের রয়েছে ৩টি পর্যায়। প্রথম পর্যায় সেচ প্রকল্প, দ্বিতীয় পর্যায় পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং তৃতীয় পর্যায় গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সংযোগ খাল খনন করে নৌ-পথ তৈরী। তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে লালমনিরহাট জেলার ডালিয়া পয়েন্টে। এই নদী বাংলাদেশের ১২টি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে এসে মিলেছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং এই ১২টি জেলার অর্থনীতি প্রত্যক্ষভাবে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল।
তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের মোট চাষযোগ্য জমির শতকরা ১৪ ভাগ তিস্তা নদীর সেচ প্রকল্পের ওপর নির্ভর করে। এক হিসেবে দেখা যায়, ১৯৮৫ সালে পশ্চিম বঙ্গের গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল প্রায় ৫০০০ কিউসেক। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, তিস্তার মূল প্রবাহ ভারত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তিস্তায় ডালিয়া ব্যারাজে উজান থেকে আসা পানি প্রবাহ প্রায় শূন্য। এখন যে ৬০০-৭০০ কিউসেক পানি যা আসছে তা ধারণা করা হয় ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ভাটির উপনদী থেকে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর গোজালডোবা ব্যারেজের কারণে তিস্তা নদীর করুণ দশা উপলব্ধি করেন। তিনি সচেষ্ট হন তিস্তা চুক্তি করার জন্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র এ ব্যাপারে কোন আপত্তি না থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বেঁকে বসায় এই চুক্তি করা যায়নি। বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ভূখন্ড এবং সেই ভূখন্ডের বাসিন্দারা প্রত্যক্ষভাবে তিস্তা নদীর ওপর নিভর্রশীল। ভারত বাংলাদেশকে তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না।
এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, কতদিন ভাটির দেশেকে পানি দেবে না। তার সাহসী বক্তব্য, বাংলাদেশের নদ-নদীর ড্রেজিং করা। প্রথম পর্যায়ে পদ্মা নদী ড্রেজিং। দেশের মানুষ মনে করেন এ কাজ তিনি অবশ্যই করবেন। গঙ্গা ও তিস্তার পানি অপসারণের কারণে শুষ্ক মওসুম শুরু হওয়ার প্রারম্ভেই বাংলাদেশের উত্তর- দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশকে মাশুল দিতে হচ্ছে কৃষি, মৎস্য, বনজ, পানি সব ক্ষেত্রে। জীব-বৈচিত্র্যে পড়ছে বিরূপ প্রভাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।