Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বয়ে যাবে কর্ণফুলী

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু আগামীকাল : ভূমিমন্ত্রীর অনড় অবস্থান

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

অবশেষে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ধারক ও প্রাণভোমরা কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ সব স্থাপনা আগামীকাল (সোমবার) থেকে উচ্ছেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরফলে খর স্রোতা কর্নফুলীর গলা টিপে ধরা দুই হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, দোকান-পাট, আড়তসহ অবৈধ স্থাপনার কব্জা থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে নদীটি। প্রকৃতির আপন নিয়মের ধারায় পাহাড় থেকে সমতল হয়ে কর্ণফুলীর বঙ্গোপসাগরে বয়ে যাবার সম্ভাবনা আবারো ফুটে উঠেছে। বন্দরের নাব্যতা অনেকাংশে ফিরে পেতে যাচ্ছে এ অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন নদী। অপরিণামদর্শী মনুষ্য আগ্রাসনে ‘আক্রান্ত’ দেশের সাড়ে ৪শ’ নদ-নদীর মতোই কর্ণফুলী সুরক্ষা নিয়ে ‘কানামাছি খেলা’ অবসানের পথ সুগম হয়েছে।
এদিকে গতকাল (শনিবার) বিকেলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। উচ্ছেদ অভিযান-পূর্ব পরিস্থিতি দেখতে এসে কর্ণফুলীর ঘাটে ভূমিমন্ত্রী আগের অনড় অবস্থানের কথা সাফ জানিয়ে দেন। কতিপয় প্রভাবশালীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের চেয়ে কেউ বড় ‘প্রভাবশালী’ নয়। আদালতের রায় আছে। সে অনুসারেই কর্ণফুলী নদীকে দখলমুক্ত করা হবে। এখানে প্রভাবশালী বলতে কিছু বুঝি না। মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে অনেকে ফোন করেছেন। অনেক অনুরোধ এসেছে। তবে এসব রাখার কোনো সুযোগ নেই। সোমবার থেকেই পূর্বঘোষিত উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। অভিযানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় আর্থিক বরাদ্দ দিয়েছে। কাজেই কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের কোনো সুযোগ নেই।
মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জানান, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আরএস খতিয়ান মূলে সব অবৈধ স্থাপনা সরানো হবে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য একাধিক জোন ভাগ করা হয়েছে। প্রথম জোনে অভিযান চালিয়ে ২শ’ স্থাপনা সরানো হবে। এতে ১০ একরের বেশি জায়গা দখলমুক্ত হবে। ধীরে ধীরে সব জোনে উচ্ছেদ অভিযান চলবে। সরকারি-বেসরকারি সব স্থাপনা সরানো হবে। কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রামের সম্পদ দেশের সম্পদ। এ নদী বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে। কর্ণফুলীকে বাঁচাতে দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
এদিকে ২০১৬ সালের আগস্টে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ কর্ণফুলীর উভয় তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণের আদেশ প্রদান করেন। উক্ত আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ২ হাজার ২০৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে। যা দীর্ঘদিন উচ্ছেদের তালিকায় থাকলেও প্রভাবশালী মহলের বাধা-বিপত্তি, তদবির এবং জেলা প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত অর্থাভাবে থমকে থাকে। তবে এরপরও আরও শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে উভয় তীরে। দিন দিন দখলবাজদের কব্জায় কর্ণফুলী নদীর এই মোহনা অংশে স্বাভাবিক নাব্যতা বিপন্ন এবং প্রবাহ বিঘিœত হয়। যা বন্দরের নাব্যতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অবশেষে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১২ জানুয়ারি সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদী সুরক্ষায় অবৈধ স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান সরাসরি পরিচালনা ও তদারক করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। তিনি জানান, যথাযথ প্রক্রিয়ায় কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনাসমূহ অপসারণ বা উচ্ছেদের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।



 

Show all comments
  • Mhammad Abu Sayed ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:৩২ এএম says : 0
    jug upajugi shiddanta.Thanks jabed shaheb k.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ