পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হালদা রক্ষায় চলছে সেই ‘কানামাছি’ খেলা। হালদা সুরক্ষায় দাবি-দাওয়া আছে। দাবির প্রতি জনসমর্থন স্বীকৃতিও আছে। অথচ বাস্তবায়ন নেই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন এ নদীটি সংরক্ষণে হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দেয়া ১১ দফা সুপারিশ উপেক্ষিত পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই এশিয়ায় মিঠাপানির বড় জাতের মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদার সমগ্র পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। শিল্পবর্জ্য নিঃসরণ, দূষণ ও ভরাটের কারণে নদীটি বিপন্ন হতে চলেছে। আর মাত্র দুই মাস পরই ভরা মৌসুমে ডিম ছাড়বে রুই, কাতলা মা-মাছেরা। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী মা-মাছেরা ডিম ছাড়বে কিনা অনেকেই সন্দিহান।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে নদ-নদী দখল ও উচ্ছেদ নিয়ে ‘কানামাছি খেলা’ হচ্ছে জানিয়ে এই খেলা বন্ধ হওয়া উচিৎ এমনটি নির্দেশনা দিয়েছেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ। তুরাগ নদীর অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করার নির্দেশনা চেয়ে করা একটি রিট মামলার রায় ঘোষণাকালে হাইকোর্ট বেঞ্চের এই পর্যবেক্ষণ আসে। উচ্চ আদালতের এ আদেশমূলে দেশের নদ-নদীমালার সুরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে নদ-নদীকে ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করা হয়। এরফলে জীবন্ত সত্তা হিসেবে মানুষ যেমন সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে, আদালতের এই আদেশের মধ্যদিয়ে নদ-নদীর ক্ষেত্রেও তেমন কিছু মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হবে।
হাইকোর্টের উক্ত আদেশ ও পর্যবেক্ষণকে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী হিসেবে স্বাগত জানিয়ে হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মনজুরুল কীবরিয়া গতকাল শুক্রবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, হালদা সত্যিই একটি জীব-সমৃদ্ধ জীবন্ত নদী। গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি কুয়াকাটায় ‘নদ-নদীসমূহ জীবন্ত সত্তা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে হালদার গুরুত্ব ও সংরক্ষণ বিষয়ে দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হালদা সুরক্ষায় নদীর উভয় পাড়ের অপরিকল্পিত শিল্প, কল-কারখানার বর্জ্য ও গৃহস্থালীসহ যাবতীয় বর্জ্য আবর্জনা নিঃসরণ, দূষণ, ভরাট, মা-মাছ নিধন ও উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। খন্দকিয়া খালের মাধ্যমে হালদার যে ভরাবহ মাত্রায় দূষণ ঘটছে তাতে নদীটিকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এটি অবিলম্বে রোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, হালদার ভাঙনরোধে বিভিন্ন স্থানে ইদানীং কংক্রিট ব্লক ও জিও-ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। যথেচ্ছ ও অপরিকল্পিতভাবে এ কাজ চলছে। রাবার ড্যাম বন্ধ হয়নি। এ কারণে হালদায় মাছের স্বাভাবিক প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। হালদা সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও ‘কানামাছি খেলা’ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখছি হালদা সুরক্ষার জোরালো দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো বিরোধিতাও নেই, আবার তা কার্যকর ও বাস্তবায়নের নমুনাও নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে হালদাকে পরিবেশ-প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া-ইসিএ) ও ‘জাতীয় নদী’ ঘোষণা এবং হালদা নদী ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের জন্য হালদা নদী কমিশন গঠন করার আহ্বান জানিয়ে আসছি। চট্টগ্রামবাসী হালদাকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবেও ঘোষণার দাবি করে আসছেন। অথচ তার কোনো বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। শুধুই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বলছে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আর পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন (ইসিএ) ঘোষণার সুপারিশ করেছি। এখানেই যেন দায়িত্ব শেষ!
এদিকে গত দশ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে গতবছর ১৯ ও ২০ এপ্রিল হালদা নদীর বুকে জেলেরা নৌকাযোগে দলে দলে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেন। সেই ডিম ফুটিয়ে রেণু-পোনা এবং এরপর বড়সড় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছে পরিণত হয়। যার প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক মূল্য হাজার কোটি টাকা। কর্মসংস্থান ও আমিশের খাদ্যমূল্য আরো কয়েক হাজার কোটি টাকার সমপরিমান। কিন্তু দেড়-দুই মাস না যেতেই গেল বছরের জুন মাসে অতিবৃষ্টি ও ঢলের সাথে খর স্রোতা হালদা নদী উপচে পড়ে। তখনই নদীর দুই পাড়ের অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শতাধিক শিল্প-কারখানা, পোল্ট্রি ফার্মসহ বিভিন্ন উৎসে দীর্ঘদিন যাবত মজুদ করে রাখা বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে নদীজুড়ে। এতে করে ব্যাপকহারে মারা যায় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ এ চারটি প্রধান জাতের মাছ ছাড়াও আইড়, বামোস, চিংড়ি, চেউয়া, কুচিয়া, বুরগুনিসহ হরেক প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে ওঠে। হালদা পাড়ের খাল-ছরাগুলোতেও ভেসে উঠে রাশি রাশি মরা অজস্র মাছ। অনেক মা-মাছও বেঘোরে মারা পড়ে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিন অনুসন্ধান ও গবেষণা চালিয়ে বিশেষজ্ঞগণ গত ২৯ জুন’১৮ইং ১১ দফা সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরেন। এতে হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ঢল ও বন্যায় রাশি রাশি বর্জ্য ও আবর্জনা নদী, এর সাথে সংযুক্ত খাল-ছরা, বিলে, আশপাশের বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে পুকুরের মাছ মরেছে। ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত ১৯ জুন এই দূষণ শুরু হলে পরবর্তী সময়ে হালদা ও যুক্ত খাল-ছরা-বিলে ব্যাপক হারে মাছ মরে ভেসে ওঠে। ১১ দফা সুপারিশে বলা হয়, হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টসহ অক্সিজেন থেকে কুলগাঁও পর্যন্ত শিল্প, কল-কারখানায় ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা, এশিয়ান পেপার মিলসহ অন্যান্য কারখানায় ইটিপি স্থাপন ও ব্যবহারে বাধ্য করা, হাটহাজারীর নন্দীর হাটের ‘মরা ছড়া’ খালের বর্জ্য ডাম্পিং স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা অবৈধ পোল্ট্রি খামারগুলোর উৎস থেকে দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনন্যা আবাসিক এলাকার ভরাট করে দেয়া বামনশাহী খাল পুনঃখনন করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা, অনন্যা আবাসিকের মাস্টার ড্রেনেজ সিস্টেমকে বামনশাহী খাল ও কুয়াইশ খাল থেকে বিচ্ছিন্ন করা, অনন্যা আবাসিক এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসটিবি স্থাপন, শিকারপুর ও মাদার্শা এলাকার ছোট খাল ও ছড়াগুলো খনন করে পানির প্রবাহকে বাধামুক্ত করা, হালদাকে পরিবেশগত বিপন্ন এলাকা (ইসিএ), হালদাকে ‘জাতীয় নদী’ ঘোষণা এবং হালদা নদী ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের জন্য হালদা নদী কমিশন গঠন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই।
গতকাল ড. কীবরিয়া জানান, হালদায় স্থানীয় হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রুই, কাতলা, মৃগেল মা-মাছ রক্ষার উদ্যোগ সুফল দিচ্ছে। তবে শিল্পবর্জ্যসহ বিভিন্নমুখী দূষণে হালদার সঙ্কট ঘোচেনি।
হালদা রক্ষায় আলোচনা সভা আজ
‘হালদা নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ এবং ‘হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা আজ (শনিবার) সন্ধ্যায় নগরীর লা-অ্যারিস্টোক্রেসি’ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে মুখ্য সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। মুখ্য আলোচক থাকবেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক মুখ্য সচিব ড. মোঃ আবদুল করিম। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী অন্যতম মুখ্য আলোচক থাকবেন। পিকেএসএফ এবং আইডিএফ-এর যৌথ উদ্যোগে এ আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ হালদা নদীর বর্তমান অবস্থা এবং সুরক্ষা ও উন্নয়ন সম্পর্কে গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।