Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ তবুও বিশৃঙ্খল সড়ক

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খল ফেরাতে নেওয়া ‘ট্রাফিক শৃঙ্খল পক্ষ’ কার্যক্রমের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এ মেয়াদ আরও দু’দিন বাড়ানো হয়েছে। যা আজ শনিবার শেষ হবে। এদিকে, টানা ১৮ দিন ধরে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করলেও কোন পরিবর্তন হয়নি সড়কের। আগের মতোই বেহাল রয়ে গেছে সড়কের অবস্থা। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া আগের মতোই যত্রতত্র গাড়ি থামছে। যাত্রীরাও ঝুঁকি নিয়ে দৌঁড়ে উঠছেন চলন্ত বাসে। পথচারীরা মানছেন না কোন নিয়ম-কানুন। সিগন্যাল ছাড়াই দ্রুতগামী গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পাড় হচ্ছেন। মানছেন না জেব্রা ক্রসিং। রাস্তার মাঝখানে থাকা তার কাঁটা তারের বেড়া বা ডিভাইডার দেওয়াল ভেঙে পার হচ্ছেন পথচারীরা। যার কারণে এত উদ্যোগের পরেও বরাবরের মতো পথচারী শূণ্য থেকে গেছে আন্ডার পাস ও ফুটওভারব্রিজগুলো। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে এ ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ কার্যক্রম শুরু হয়।
সড়ক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে শুধু মামলা ও জরিমানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এ সংখ্যা বৃদ্ধিতে সড়কের অবস্থা পরিবর্তন হয়নি মোটেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। নয়তো কয়েক বছরের মধ্যে রাজধানীর সড়ক পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহনে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহবান জানান তারা।
ঢাকা মহনগর ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ শুরুর পর গত ১৬ দিনে (৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত) ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৯৫ হাজার ৮৩৫টি মামলা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় ৪ কোটি ৯২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য মামলার মধ্যে বাস/মিনিবাসের বিরুদ্ধে ১৫ হাজার ৩টি, ট্রাকের বিরুদ্ধে ৫৩১টি, কাভার্ড ভ্যানের বিরুদ্ধে ২০ হাজার ৮২৬টি, সিএনজি অটোরিকসার বিরুদ্ধে ১২ হাজার ৪০৭টি, ট্যাক্সি ক্যাবের বিরুদ্ধে ২৪টি, কার/জিপের বিরুদ্ধে ৯ হাজার ৬৯৪টি, মাইক্রোবাসের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৪১৭টি, পিকআপের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ২০৫টি, হিউম্যান হলারের বিরুদ্ধে ২৭৯টি, মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে ৪০ হাজার ৭৫৩টি ও অন্যান্য গাড়ির বিরুদ্ধে ১ হাজার ৭৮১টি মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রাাফিক পক্ষের ১৬ দিনে ৪০৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১২ হাজার ৪২০টি গাড়ি রেকার করা হয়।
ট্রাফিকের তথ্যমতে, এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা করা হয়েছে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে। ১৬ দিনে ৪০ হাজার ৭৫৩টি মামলা করা হয় মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে।
গত কয়েকদিন রাজধানীর শাহবাগ, পান্থপথ, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, মগবাজার, ওয়্যারলেস গেট, মৌচাক, মালিবাগ, সাতরাস্তা, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পোস্তাগোলা, মিরপুর ঘুরে আগের মতোই বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের মতো লক্কর-ঝক্কার বাস চলছে, গণপরিবহন ও প্রাইভেট গাড়ির সবাই আইন ভাঙছে, পথচারীরাও চলছে আগের মতো বেপরোয়া। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছে। বেশিরভাগ পথচারী ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করছে না। ট্রাফিক সদস্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের বোঝালেও তারা শুনতে নারাজ। কালেভদ্রে দু’একজন পথচারীকে ফুটওভার ব্রিজে উঠতে দেখা গেলেও তাদের সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহন সাথে জড়িত মালিকপক্ষ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। যার কারণে ট্রাফিক আইন কার্যকর করা যাচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়ক থেকে অবৈধ যানবাহন উঠিয়ে দেওয়াসহ হাইকোর্টের বিভিন্ন রায় মানাতে মালিকপক্ষকে বাধ্য করা গেলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। তার মতে, আইনের কঠোর প্রয়োগ ও দায়িত্বশীলরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে কখনো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে না।
এদিকে, ট্রাফিক পক্ষের চলমান অভিযানের সাফল্য প্রসঙ্গে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এতকিছুর পরেও সড়কের নৈরাজ্য বন্ধে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চালকদের প্রশিক্ষণ, পরিবহন মালিকদের আন্তরিকতা এবং যাত্রী ও পথচারীরা উদ্যোগী না হলে কখনো শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী টেকসই ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। শুধু চালক-যাত্রী ও পথাচারীদের সচেতনতার মধ্য দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, রাজধানীর সড়কে শতভাগ শৃঙ্খলা ফিরেছে, এটি দাবি করব না। তবে আগের তুলনায় শৃঙ্খলা ফিরেছে। তার মতে, পুলিশের ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন চলমান প্রক্রিয়া। যা বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। সে সময় পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালালেও শেষ পর্যন্ত সরকার সাড়া দেয়। এর প্রেক্ষিতে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে বিশেষ অভিযানে নামে পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকায় ৫ আগস্ট শুরু হয় ট্রাফিক সপ্তাহ। চলে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। পরে ৫-৩০ সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচি পালন করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। তৃতীয়বারের মতো ২৪-৩১ অক্টোবর সাত দিনের বিশেষ ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালন করা হয়। এত শত উদ্যোগের পরেও আগের মতো বিশৃঙ্খল রয়ে গেছে সড়ক। তবে এই সময়ে মোটরসাইকেলের চালক-আরোহীদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ