পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে কাজ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত বাজার মনিটরিং সেল। তবে ক্রেতা ও ভোক্তাদের অভিযোগ, কেবলমাত্র রমজান মাসেই বাজার মনিটরিং সেলের কার্যক্রম চোখে পড়ে। বছরের বাকি সময় প্রায় অদৃশ্য থাকে এই সেলের কার্যক্রম। ফলে নিত্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এ সেলের কার্যক্রম কোনো কাজেই আসছে না। বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থায় দ্রব্যম‚ল্যের দাম কমাতে বাজার মনিটরিং সেল কোনো প্রভাবই ফেলতে পারছে না বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে, খোদ ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা এই সেলের কার্যক্রম নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। সেলের ত্রৈমাসিক বা অর্ধবার্ষিক কার্যক্রম জনসম্মুখে প্রকাশের দাবিও তাদের। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ মানতে নারাজ হলেও ‘ভবিষ্যতে’ মনিটরিং কার্যক্রম আরও বেশি জোরদারের কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, মনিটরিং সেলের ১৪টি টিম বাই রোটেশনে কাজ করে করছে। আমার জানামতে, বাই রোটেশনে সবাই কাজ করছে। আমরা প্রতিদিন রিপোর্ট পাচ্ছি, আপডেট পাচ্ছি। দ্রব্যমূল্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। বাণিজ্য সচিব বলেন, মনিটরিং সেলের রিপোর্ট পাওয়ার পর আমার তা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করি। আমরা টিসিবির মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করি। সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করি। মনিটরিং আমরা করছি। অবশ্যই করব। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অধীনে বাজার মনিটরিং সেল পরিচালিত হয়ে থাকে। বাজার মনিটরিং সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে অনুবিভাগটির পরিচিতিমূলক তথ্যে বলা হয়েছে, এ অনুবিভাগ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বা মূল্য পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ করা হয়। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও ম‚ল্য পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার উপক্রম হলে ট্রেডিং কপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে যৌক্তিক মূল্যে পণ্য সরবরাহ করে বাজার স্থিতিশীল রাখার কার্যক্রম গ্রহণ করা এ অনুবিভাগের অন্যতম প্রধান কাজ। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একাধিক সংস্থার মাধ্যমে মনিটরিং সেল পরিচালিত হয়ে থাকে। সেলে যুক্ত রয়েছে টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের প্রতনিধিরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সেলের অধীনে প্রতিদিন দু’টি টিম বাজার পরিদর্শন করে। টিমে ১১ জন করে সদস্য থাকেন। মনিটরিং টিম মূলত পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের পণ্য মূল্যের সমন্বয় আছে কি না ও বাজারে ম‚ল্য তালিকা টানাচ্ছে কি না, তা দেখে থাকে। এছাড়াও মনিটরিং সেলের অভিযানের সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের বক্তব্য শোনা হয়। সেখানে যেগুলোর সমাধান করা যায়, সেগুলোর সমাধানও দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নির্দেশনা ও পরামর্শও দেওয়া হয়। এছাড়াও ডিসি অফিসের প্রতিনিধি হিসেবে টিমের সঙ্গে থাকেন ম্যাজিস্ট্রেট। কখনও কখনও তিনি আলাদা করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। যদি কোনো অনিয়ম ম্যাজিস্ট্রেটের চোখে পড়ে, তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং সেলের জন্য আলাদা কোনো বিভাগ বা অনুবিভাগ নেই। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও সেল সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য নেই। ওয়েবসাইটির আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগে কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর উল্লেখ থাকলেও মনিটরিং সেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারা, সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে দ্রব্যদূল্য পর্যালোচনা ও পূর্ভাবাস কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের সব তথ্য উল্লেখ রয়েছে। আইআইটি অতিরিক্ত সচিব প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর বলেন, মনিটরিং টিম বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। পর্যবেক্ষণের সময় যদি কোনো অনিয়ম পায়, সেগুলো আামদেরকে অবহিত করে। পরবর্তী সময়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও অছেন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা আছেন, এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি আছেন, এখন তারাসহ যাওয়ার পর পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন অনিয়ম দূর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বাজার পরিস্থিতি বা দাম নিয়ন্ত্রণে অপারগতার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, তারা যদি বাজারের রিপোর্ট পেয়ে থাকেন, সেই রিপোর্ট দিয়ে কী করেন? দেখলাম, ভুলে গেলাম, এই রকম হলে তো হবে না। তিনি বলেন, তারা মনিটরিং করছেন, মনিটরিং করে কী অ্যাকশন নিচ্ছেন? গত ছয় মাসে বা তিন মাসে কী অ্যাকশন নিয়েছেন? এই যে বাজারের ওঠানামা, এই ওঠানামার উপর ভিত্তি করে তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? যদি ব্যবস্থা নেন, তাহলে অর্থবহ হবে এই মনিটরিং। মনিটরিং করলাম, এর ফলোআপ যদি না থাকে, তাহলে এটা করা আর না করা একই কথা।
ক্যাব সভাপতি আরও বলেন, আমার জানামতে তারা তথ্য সংগ্রহ করেন। তথ্য যাদের জন্য সংগ্রহ করা হয় তারা যদি ব্যবস্থা নেন, তাহলেই মনিটরিং অর্থবহ হবে। এই তথ্যটি তো মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ক্যাব বা গণমাধ্যমের কাছেও তারা মনিটরিং সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেন না। তারা কী করছেন, তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে মনিটরিং হবে অর্থবহ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত মনিটরিং টিমের কার্যক্রমকেই ভুল বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আসাদুজ্জামান। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার যাচাই করে দাম নিয়মন্ত্রণ করবে-এই ম্যান্ডেটের কোনো অর্থ আমি বুঝি না। এটা যদি কৃষি বিপণন সংস্থা বা অন্য কাউকে বলত, তাহলে একটা কথা ছিল। কৃষি বিপণন সংস্থা খারাপ হোক, ভালো হোক-তারা তথ্য সংগ্রহ করে ও রিপোর্ট করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।