Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

চিটাগংকে গুড়িয়ে শীর্ষে কুমিল্লা

সাইফউদ্দি-আফ্রিদীর পর তামিম দ্যুতি

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ৫:৪৯ পিএম

দুই পরস্থ হল বৃষ্টি, ম্যাচ নামিয়ে আনা হলো ১৯ ওভারে।  টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সেই ম্যাচেই শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা চট্টগ্রাম ভাইকিংস অবশেষে থেমেছে ১১৬ রানে। ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলটিকে শেষ দিকে টেনে তুলেছেন মোসাদ্দেক। তবে তাতে শেষ রক্ষা হয়নি স্বাগতিকদের। তামিম ইকবালের ফিফটি আর শামসুর রহমার শুভঝড়ে ‘চিটাগং ডার্বি’ অনায়েসে জিতে নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ১৪ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে তরী ভেড়ায় ইমরুলের দল।

আজ মঙ্গলবার বিপিএলের প্রথম মাচে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে চিটাগং ভাইকিংস মুখোমুখি হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। কিছুটা বিলম্বিত হলেও টস হয়েছে আধ ঘন্টা বাদে। ম্যাচ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর, ১টা ৪০ মিনিটে। ‘চিটাগং ডার্বি’র টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। দুই পরস্থ বৃষ্টির পর ব্যাটিং মোটেও স্বস্তিতে ছিল না স্বাগতিক শিবির।  

ম্যাচ শুরু হয়েছিল, এক ওভার খেলাও হলো। চিটাগংয়ের দলীয় ২ রানের মাথায় ফের হানা দিয়েছে বৃষ্টি। আবারো কালো কভারে ঢেকে যায় সাগরিকার সেন্টার উইকেট। এই ভর দুপুরেই জ্বলে উঠে ফ্লাড লােইট।

প্রায় ৪০ মিনিট বন্ধ থাকার পর ফের মাঠে গড়ায় খেলা। কার্টেল ওভারে খেলা কমিয়ে আনা হয়েছে ১৯ ওভারে। এবার চিটাগং শিবিরে তাণ্ডব চালায় মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

নিজের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলটি দিলেন ওয়াইড। পরের বলে কোনমতে ঠেকিয়ে দেন সাদমান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরের বলেই এলবির ফাঁদে পড়ে পথ ধরতে হয় প্যাভিলিয়নের। ওই ওভারেরই শেষ বলে ইয়াসির আলীকে এভিন লুইসের তালুবন্দী করান এই পেসার।  দুজনের কেউই দেখা পান নি রানের।

পরের আঘাতটা আরো বড়। দলের নির্ভরতার প্রতীক মুশফিককে ফিরিয়ে চিটাগংয়ের বিপদে বাড়ান আগের দিনের হাটট্রিকম্যান ওয়াহাব রিয়াজ। এই পাকিস্তানী পেসারের বলে মাত্র ৬ রান করে উইকেটের পিছনে এনামুল হক বিজয়ের হাতে ধরা পড়েন ভাইকিংস অধিনায়ক। 

মেহেদী হাসান নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই তুলে নেন নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। এবার লং লেগে দারুণ এক ক্যাচে এই আফগানকে তালুবন্দী করেন সাইফউদ্দিন। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান দুই ছক্কায় করেন ১৩ রান।

ক্যামেরন ডেলপোর্টও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি কুমিল্লা নিয়নন্ত্রিত বোলিংয়ে। এবার শিকারি শহীদ আফ্রিদী। ৬ রান করা এই প্রোটিয়াকে শামসুর রহমান শুভর কাচে পরিণত করেন পাকিস্তানী সাবেক অলরাউন্ডার।

নিজের পরের ওভারে এসে দারুণ এক গুগলিতে সিকান্দার রাজাকে (৫) বোল্ড করেন বুমবুম তারকা।

বাকিদের আসা যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রাখা মোহাম্মদ শাহজাদ ছিলেন অবিচল। নিজের স্বভাবসূলভ মারমুখী না হয়ে ধীর বাটিংই কাল হল শেষ পর্যন্ত। ছটফট করে রানআউটের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ৩৫ বলে ৩৩ রান করে। এই আফগান ব্যাটিং দানবের চার ছক্কাও অবাক করার মত, দুই চারের বীপরিতে ছক্কা হাঁকিয়েছেন মাত্র একটি!

এরপরই দলকে দিশা দেখাতে থাকেন মোসাদ্দেক হোসেন। সঙ্গী আর বলের ওভাবে ফিফটি না পেলেও ২৫ বলে তিনটি করে চার-ঝক্কায় খেলেছেন অপরাজিত ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংস। দলও পায় একশোর্ধ ইনিংস (১১৬)।

স্বাগতিক শিবিরে ধ্বস নামাতে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন, ওয়াহাব রিয়াজ ও শহীদ আফ্রিদী।

জবাবে বাট করতে নেমে ১৬.৪ ওভারেই জয়ের বন্দরে তরী ভেড়ায় কুমিল্লা। তবে সাবধানী শুরতেই হোঁচট খায় এনামুল হক বিজয়রে উইকেট পতনে। দীর্ঘকায় খালেদ আহমেদের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পিছনে শাহজাদের গ্লাভসবন্দী হবার আগে করতে পারেন মাত্র ৮ রান।

সেই দুশ্চিন্ত ব্যাট হাতে ঝেটিয়ে বিদায় করেন তামিম ইকবাল। অপরাজিত ঝলমলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন চট্টগ্রামের এই লোকাল বয়। জাতীয় দলের তারকা ওপেনারের ৫১ বলের ধৈর্য্যশীল ইনিংসটি ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় মোড়ানো। আবু জায়েদের বলে সিকান্দার রাজার হাতে তালুবন্দী হবার আগে ২২ বলে ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পথে শামসুর হাঁকিয়েছেন ৩টি চার ও দুটি ছক্কা।

ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেন নি ইমরুল কায়েস। জায়েদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেবার আগে ৮ রান করেন কুমিল্লা অধিনায়ক। বাকিটা পথ থিসারা পেরেরাকে নিয়ে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন তামিম। পেরেরার অপরাজিত ৭ বলে ১০ রানের ইনিংসেও আছে একটি ছক্কা।

এ সপ্তাহে ভারী একটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। দুই দিন ভালোই গিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা থেকে কিছুটা বৈরীতার পর আজ সকাল থেকেই ভার চট্টগ্রামের আকাশ। মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরি চললো দুপুর পর্যন্ত।

দুপুর ঠিক একটায় এক পষলা বৃষ্টি ছূঁয়ে গেল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সবুজ উইকেট! যেখানে একটু পরই নামার কথা এই চট্টগ্রাম বিভাগেরই দুই দল চিটাগং ভাইকিংস এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

মিনিট পনেরো হালকা ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে আউট ফিল্ড কিছুটা পিচ্ছিল হলেও উইকেটের খুব একটা ক্ষতি হতে দেননি গ্রাউন্ডসম্যানরা। সঙ্গে সঙ্গে কালো পিচ কাভার দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন, যাতে করে ‘চট্টগ্রাম ডার্বি’র রঙ ফিকে হতে না পারে!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ