বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে সমাজের অবকাঠামোর অংশ হয়ে সামাজিক নীতিনিয়ম রক্ষা করেই আমাদের জীবনযাপন করতে হয়। এর বাইরে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চললে অসামাজিক, এমনকি সমাজবিরোধী বলে চিহ্নিত হতে হয়। কিন্তু সমাজের এ নীতিনিয়ম ঠিক করে দেবে কে?
একজনের কাছে যা ভালো রীতি, অন্যের কাছে তা মন্দ বা অপ্রয়োজনীয় হতে পারে। তাই মানবজীবনের সব সমস্যার ও প্রয়োজনের শ্রেষ্ঠ সমাধান ইসলাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর তা আমরা পাই কোরআন ও প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ থেকে।
সমাজে বসবাসের অন্যতম অনিবার্য উপাদান হচ্ছে প্রতিবেশী। আমরা যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি, প্রতিবেশী বেষ্টিত হয়েই থাকি। এই প্রতিবেশীরা হয়তো আমাদের আত্মীয় বা নিকট আপনজন নন; কিন্তু সারা জীবনের নিকট প্রতিবেশীরা আত্মীয়ের চেয়েও বেশি নিকটে থাকেন।
তাদের সবাই হয়তো মানে, গুণে, রুচি, আচরণে, জ্ঞানে, বুঝে এক রকম নন অথবা শিক্ষা-সম্পদ ও সামাজিক মর্যাদায় আমাদের সমপর্যায়েরও নন; তবুও তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য কম নয়। প্রতিবেশীর হক বা অধিকার বিষয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. ও হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত জিবরাঈল আ. আমাকে এমনভাবে অনবরত প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে নির্দেশ দিচ্ছিলেন যে, আমি ভাবতে শুরু করলাম, মনে হয় প্রতিবেশীও সম্পদের মধ্যে শরীক হয়ে যাবে।-সহীহ বুখারী ও মুসলিম
হাদীসটির দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করাটা আল্লাহর নির্দেশ, যার ব্যাপারে জিবরাঈল আ. এর মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনবরত তাগাদা করা হয়েছে উম্মতকেও এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই। আর এ তাগাদা বা গুরুত্বারোপের কারণে স্বয়ং রাসূলের কাছেই প্রতিবেশীকে প্রায় উত্তরাধিকারীর মতোই মনে হয়েছে। এ থেকে অন্তত এটুকু আমাদের বুঝে নেয়া উচিত যে, উত্তরাধিকারীরা যেমন করে সব সময় আদর-যত্ম, সেবা, উপকার ও সম্মান পেয়ে থাকেন, প্রতিবেশীরাও তেমনই অধিকার রাখেন। যদিও আমাদের উত্তরাধিকার পাবেন না। সুতরাং যখন যেভাবে যতটা সম্ভব প্রতিবেশীর উপকার করাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই হাদীসের ইঙ্গিত।
বিষয়টি আরও খোলাসা হয় নবীজির নিম্নোক্ত হাদীসটিতে : হযরত আবু যর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আবু যর, যখন তরকারি রান্না করো, তখন তাতে একটু পানি বাড়িয়ে দাও এবং তোমার প্রতিবেশীদের বাসা-বাড়ির খোঁজ নাও অর্থাৎ প্রয়োজনে তাদের একটু পৌঁছিয়ে দাও।-সহীহ মুসলিম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।