Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পরামর্শ জাতিসংঘের

সহসাই ফিরছে না রোহিঙ্গা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংঘি লি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নেওয়ার বদলে পৃথিবীর সব থেকে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমার হয়রানি ও নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে, এমন বাস্তবতায় তাদেরকে সেখানে সহসাই ফেরত পাঠানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাদের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান মানতে স্থানীয়দের প্রস্তুত করার পরামর্শও দিয়েছেন লি। খবর আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো হয়। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। আর তার আগে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তিন লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। গত বছর জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাছাড়া, জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের একাংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করছে অ্যামনেস্টিসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
জাতিসংঘ দূত দ্বীপটিতে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও অন্যান্য ভবন পরীক্ষা করে দেখেন। চলতি সপ্তাহেই মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড সফর করার কথা রয়েছে তার। ভাসানচর থেকে ফেরার পর ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে মিয়ানমার এখনও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করেনি। তারা সেখানে হয়রানি ও নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। ফলে বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা নিশ্চিতভাবেই খুব শিগগিরই দেশে ফিরে যেতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারকে আহ্বান জানাবো তারা যেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এবং স্থানীয়দের এই বাস্তবতার জন্য প্রস্তুত করুন।’ ভাসানচর নিয়ে ইয়াংঘি লি বলেন, সরকার এই দ্বীপ তৈরিতে প্রচুর পরিশ্রম করেছে। তারপরও আমি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘জনমানবপূর্ণ এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে।’ কোনও রোহিঙ্গার সম্মতি ছাড়া এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে না বলেও সতর্ক করেন ইয়াংঘি লি।
মাত্র ২০ বছর আগেই সাগর থেকে ভাসানচর দ্বীপটির উৎপত্তি। নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে এক ঘণ্টার নৌপথ অতিক্রম করে যেতে হয় দ্বীপটিতে। সেখানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য ২৮ কোটি ডলার ব্যয় করছে বাংলাদেশ। সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করতে চায় সরকার। তবে দ্বীপটিতে বৈরী আবহাওয়ার শিকার হয়ে বিগত বছরগুলোতে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারাও দ্বীপটিতে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘও জানিয়েছে, স্থানান্তর অবশ্যই স্বেচ্ছামূলক হতে হবে।
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ২২৫১ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। মিয়ানমার টাইমস সে সময় দাবি করে, রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাখাইনে ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। লি’র সফরকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি মিয়ানমার ৬০০ জনকে প্রত্যর্পণের তাগিদ দিয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরিবারের সদস্য। ৮ জানুয়ারি মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মানজুরুল করিম খান চৌধুরীকে এই তালিকা দিয়ে দ্রুত প্রত্যর্পণের তাগিদ দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ