Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সুইজারল্যান্ড থেকে আসা খোদেজাকে নিজের সন্তান বলে দাবি করলেন উলিপুরের রহিতন

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ৬:১৬ পিএম

মা-বাবার খোঁজে সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসা খোদেজা ওরফে রওফিকে নিজের সন্তান বলে দাবি করছেন উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের দড়ি কিশোরপুর শেখের খামার গ্রামের বৃদ্ধা রহিতন বেওয়া (৭৭)। এ সময় তিনি ফেসবুকে নিজের সন্তানের শিশু বয়সের ছবি দেখতে পেয়ে হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠেন। 

রহিতন বলেন, খোদেজার নাম ছিল শাহেরা খাতুন। সে ছিল তাদের বড় সন্তান। বড় মেয়ে শাহেরা ওরফে খোদেজা, ছোট মেয়ে সাইবেনি ও ছোট ছেলে রফিকুল ইসলাম। রহিতন বেওয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার যতটুকু মনে আছে, ৭৪ সালে দূর্ভিক্ষের সময় আমার বড় মেয়ে শাহেরা ওরফে খোদেজা হারিয়ে যায়। শাহেরার চোখের নিচে একটি তিলকের চিহ্ন রয়েছে বলে তিনি জানান।
সে সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে তিনি কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রহিতন বেওয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম জানান, আমার বড় বোনের জন্য মা এখনো প্রায় সময় চোখের পানি ফেলেন। সে সময় তিস্তা নদী ভাঙ্গনের পূর্বে তাদের বাড়ি ছিল দলদলিয়া ইউনিয়নের অজুর্ন গ্রামে। তার পিতা আঃ ছাত্তার প্রায় ২২ বছর পূর্বে মারা যান। তৎকালীন বসতভিটা তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে তারা থেতরাই ইউনিয়নের দড়ি কিশোরপুর শেখের খামার গ্রামে অন্যর জায়গায় বসবাস করে আসছেন।
তাদের সেই সময়ের প্রতিবেশি বিবিজান (৭০), জহুরা বেওয়া (৮০), শাহিদা বেগম (৬৫) ও লাইলী বেগম (৬৮), সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শাহেরা ওরফে খোদেজার শিশু বয়সের ছবি দেখে তাকে হারিয়ে যাওয়া খোদেজা বলে দাবি করেন।
গত শুক্রবার (২৫ জানুয়ারী) রহিতন বেওয়া ও তার পুত্র রফিকুল ইসলাম শাহেরার সাথে দেখা করার জন্য কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের বাসভবনে গিয়ে জানতে পারেন খোদেজা ও তার স্বামী ঢাকায় চলেন গেছেন। এ খবর শুনে রহিতন বাড়িতে ফিরে আসেন এবং মেয়ের জন্য আর্তনাদ করে কাঁদতে থাকেন। এলাকাবাসী অনেকে জানায়, গত ২২ জানুয়ারী খোদেজা তার নিজ গ্রামে এসে তার পিতা-মাতাকে খুঁজে না পেয়ে চলে যান। বর্তমানে খোদেজা ও তার স্বামী ঢাকায় রয়েছেন বলে একটি সূত্র জানা গেছে।
খোদেজার মায়ের দাবিদার রফিতন বেওয়া জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের অর্জুন গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তার স্বামীর নাম ছাত্তার আলী। ২২ বছর পূর্বে স্বামী মারা যান। স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন তিনি। তার সংসারে দুটি মেয়ে এবং একটি পূত্র সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান শাহেরা ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় হারিয়ে যায়। তিনি আবেগ আল্পুত কণ্ঠে বলেন, ঘরোত খাবার নাই। চারপাকোত মঙ্গা। খাবার দিবের পাং না। ছওয়াটা মোর হারি গেইল। সেসময় ৪/৫ বছরের বড় মেয়ে খাবাবের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যায়। এরপর অনেক খুঁজেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
সুজারল্যান্ডের অধিবাসী রওফি গত সপ্তাহে থেতরাইয়ে আসার সময় তিনি ছোট মেয়ের বাড়িতে অবস্থান করায় তার সাথে দেখা হয়নি। পরে ফেসবুকে ঘটনা জানাজানি হলে প্রতিবেশিরা তাকে খবর দেন। শুক্রবার (২৫ জানুয়ারী) সকালে অনেক আশা নিয়ে ছেলে রফিকুলসহ তিনি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসেন। সেখানে তখন শুনশান নীরবতা। বড়বড় তালা ঝুলছে অফিসগুলোতে। চারদিকে ফ্যালফ্যাল চোখে লোকজন খুঁজছিলেন তিনি। কাকে কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না। পরে বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে এলে তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, মোর বেটি কই? এক নজর তাক মুই দেখিম। তোমরা একনা ব্যবস্থা করি দেও।



 

Show all comments
  • মোঃ নুর হোসেন কবির ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:৩৮ পিএম says : 0
    আমি মোঃ নুর হোসেন কবির, আমি শাহেরা ওরফে খোদেজার আপন চাচাতো ভাই খোদেজার বাবা মৃত আব্দুস ছাত্তার আলীর ছোট ভাই আম্বার আলির ছেলে, খোদেজার সাক্ষাত পাওয়ার জন্য আমার পরিবার সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rashe Mia ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:৩২ এএম says : 0
    Ami khodeja orfe saherar apon vagna.tar boro bon shaher Banur coto cele! Nanir obostha bole bojhano jabena .amra khalar sathe dekha korte unmukh hoye aci.everybody help us plz!
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Shofiul Islam ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৮:৩৪ এএম says : 0
    Khodeja ebong tar ma dujonke mohan Allah taala milito koruk atai kamona kori.ar dujoner dekha hole obossoi amake phone diye janaben.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ