Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইট তৈরিতে আবাদি জমির করুণ দশা

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে মো. গোলাম ফারুক | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ভাটাগুলোতে ইট তৈরির জন্য ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেঁটে ভাটায় নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের মতো স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। ফলে ফসলি এই জমিগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। মাটি কেঁটে নেয়া এ জমিগুলোতে চলতি রবি মৌসুমে আলু সরিষার চাষ না করায় তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেই সাথে ভাটাগুলোতে গাছ ও কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করলেও অজ্ঞাত কারনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিরব রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরসহ বন্দর নগর তালোড়া ও চামরুল ইউনিয়ন বিভিন্ন স্থানে মাঠের মধ্যে কয়েক বিঘা জমি দখল করে গড়ে ওঠছে ইটভাটা। সরকারি নিয়মানুসারে আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়মও মানা হয়নি।
এ দিকে উপজেলার ভাটার মালিকরা ইট তৈরি করতে জমির মাটি ব্যাবহার করছে। বিভিন্ন গ্রামে মাঠের ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নেয়া হচ্ছে। গ্রামের সহজ সরল কৃষকদের অর্থের লোভে ফেলে ট্রাক প্রতি ৩শ টাকা থেকে সাড়ে ৩শ টাকা হারে এই সব মাটি ক্রয় করে জমির দেড় থেকে দু’ফুট গভীর করে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন ফসলি জমির মাটি কাটার এই প্রবনতা বেড়েই চলছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বর শক্তিও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

এ ছাড়াও ফসলি জমির উপরিস্তর কেটে নেয়ার ফলে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, পটাশ, জিংক, ফসফরাস, সালফার, ক্যালসিয়ামসহ অর্গানিক বা জৈব্য উৎপাদনের জন্য অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে। সদরের আলোহালী, পলিপাড়াসহ চামরুলের আটগ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জমির উপরিভাগ মাটি কেঁটে নেওয়ায় জমিগুলো চলতি রবি মৌসুমের আলু সরিষার চাষ করা হয় নাই। মাটি কাঁটা অবস্থায় জমিগুলো পড়ে আছে।

এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত এই উপজেলার ফসলি জমিগুলো ভবিষ্যতে বন্ধা জমিতে পরিনত হবে এবং কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত এই দুপচাঁচিয়া উপজেলায় অপরিকল্পিত ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরিসহ জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নেয়ায় ফসলি জমি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমিও ক্ষতির মুখে পড়ছে।

এ দিকে গড়ে ওঠা এই সব ইটভাটার মালিকরা সরকারের প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে কয়লার পরিবর্তে ভাটাই অবাধে গাছ ও কাঠ জালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ইটভাটা চত্ত¡রেই প্রকাশ্যে স্তূপ করে রাখা হয়েছে শত শত মন গাছসহ বিভিন্ন গাছের ডাল ও বড় বড় কাঠের গুল। ভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানোর ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনজ ও ফলজ গাছ। সরকারি বিধি-বিধান না মেনেই ফসলি জমির ওপরে ইট ভাটাগুলো গড়ে উঠেছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরসহ চামরুল ও তালোড়া ইউনিয়নে মোট ১০টি ভাটা রয়েছে।

এছাড়াও দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের সীমান্তবর্তী এলাকা নাগর নদীর কোল ঘেঁষে কাহালু উপজেলার কাশিমালা জোগাড়পাড়া, বীরকেদার, ঘোন কালাই এলাকায় আরও ৮টি ভাটা গড়ে ওঠেছে। চারিদিকে কৃষি জমি আর মাঝখানে ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমির ওপর এসব ইটভাটা।
প্রজাতন্ত্র আইন ১৯৫০-এর অধীনে জেলা প্রশাসক ১৯৯০ সালে একটি সার্কুলার ইস্যু করেন, যাতে বলা আছে, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। সেই সাথে জনবসতির ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন না করার সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু উপজেলার ইটভাটাগুলোর অধিকাংশই মালিক এই আইন অমান্য করে ভাটা স্থাপন করেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ইট ভাটাগুলোতে লাইসেন্স দেয়া তার কার্যালয়ের আওতাভুক্ত নয়। তবে ইটভাটায় লাইসেন্স দেয়ার আগে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। এলাকায় ইটভাটাগুলো তার সময়ে স্থাপন না হওয়ায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে কিনা না তা তার জানা নেই বলে জানান। তিনি আরো জানান এলাকার আবাদি জমির ওপর থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা হয়েছে। জমির মালিকরা স্বেচ্ছায় মাটি বিক্রয় করলে এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন কিছু করার থাকে না। তবে জমির উপরের উর্বরাস্তর মাটি কেটে নেওয়ার ক্ষতির বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন। একই সাথে তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ দিকে এলাকার পরিবেশ রক্ষাসহ ফসলি জমি রক্ষার্থে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইট তৈরিতে আবাদি জমি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ